যুদ্ধাহত বীরাঙ্গনা সরুফা বেগমের সুখ দুঃখ
নোয়াখালী সমাচার
প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২২
বৃহত্তর কুমিল্লার মধ্যে একমাত্র যুদ্ধাহত বীরাঙ্গনা হচ্ছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সরুফা বেগম। জেলার অপর ১৩ জন বীরাঙ্গনার মধ্যে একমাত্র তাকেই থানায় নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে থানা থেকে পালিয়ে আসার সময় পাক বাহিনীর গুলিতে তার বাম পা ক্ষত-বিক্ষত হয়। সেই ক্ষত নিয়ে বিশেষ এক ধরনের জুতা পরে গত ৫০ বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সরুফা বেগমের মানবেতর জীবন।
পঙ্গু পা নিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবন ধারণ করা এই বীর নারীর কষ্ট, বাবা, কুমিল্লার ডিসি স্যার অন্যদেরকে কুমিল্লা নিয়ে অনেক সম্মান করেছেন, জমি দিয়েছেন, স্বীকৃতি দিয়েছেন কিন্ত আমি কি অপরাধ করলাম? ভাইয়ের জায়গায় ছোট একটি ঘরে বসে এই বীরাঙ্গনার বেদনাবিদূর কথাগুলো শুনার আগে জেনে নেই তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
সরুফা বেগম। বাবা মো. ছফিউল্লাহ। মা মেহেরুন নেছা। বাবা-মায়ের ৪ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে তার অবস্থান ৪র্থ। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া গ্রামে তার জন্ম। দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই বাবা-মা চৌদ্দগ্রাম বাজার সংলগ্ন কিং শ্রীপুর গ্রামের ডা. নূর আহমেদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে পাঠিয়ে দেন। তিন বেলা খেয়ে, থেকে মাসিক সামান্য যা মজুরি পেতেন তা দিয়ে দরিদ্র পরিবারের সংসারে সহায়তা করতেন। তখন তার বয়স ১০-১১ বছর। বয়সে ছোট হলেও তার ব্যবহার ও কাজে পারদর্শিতা ছিল বলে অল্প সময়ের মধ্যেই গৃহকর্তাসহ সবার সুনজরে আসেন। পরিবারের সবাই তাকে অত্যন্ত আদর করতেন। সরুফা বেগমের এই বাড়িতে চাকরির বছর খানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম। কিং শ্রীপুর গ্রামটি চৌদ্দগ্রাম থানা সংলগ্ন। তাই এই গ্রামের মানুষ সর্বদাই ভীত সন্ত্রস্ত থাকত।
সরুফা বেগমের মতে, চৌদ্দগ্রাম থানায় যখনি চাল, ডাল, তরকারির প্রয়োজন হতো তখনি ৪-৫ জন পাঞ্জাবি অস্ত্রসহ বেরিয়ে পড়তো গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায়। মহড়া দেওয়ার নামে তারা দেখতো কোন বাড়িতে হাঁস, মুরগি আছে। সুন্দরী মেয়ে বা নারী আছে। এমনও দেখেছি এই কিং শ্রীপুর গ্রাম থেকে তারা ঘরে ঢুকে ড্রাম থেকে চাল নিয়েছে। যারা ক্ষেতে খামারে সবজি লাগিয়েছে তাদের বলত, সবজিগুলো থানায় নিয়ে এসো। কোন দিন কোন কারণে না দিতে পারলে বাড়ি এসে গৃহকর্তাকে মারধর করত কিংবা গালাগলি করে যেতো। এ কাজে রাজাকাররাও সহায়তা করতো।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া তার উপর নির্মম নির্যাতনের কাহিনি জানতে চাইলে কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছেন বৃহত্তর কুমিল্লার একমাত্র যোদ্ধাহত বীরাঙ্গনা সরুফা বেগম। কান্না জর্জরিত কণ্ঠে মাটির দিকে তাকিয়ে পাশবিক নির্যাতনের কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, মাসটির নাম খেয়াল নেই। আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাস হবে। আসর নামাজের আজান হয়েছে। এমন সময় গ্রামের মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই পাঞ্জাবিরা সারা গ্রামে আক্রমণ শুরু করে। গ্রামের মানুষরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। আমি সবেমাত্র ঘর ঝাড়ু দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়েছি, ঠিক তখনি দেখি ৩-৪ জন পাক আর্মি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মনে মনে ভাবলাম, আগের দিন ডাক্তার নূর আহাম্মেদ খালুকে মারধর করেছে এ জন্য হয়তো আবার কোন ঝামেলা হয়েছে তাই আবার আসছে। এতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গতে দেরি হলো না। তারা ঘরে উঠেই কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার চুলের মুঠি ধরে থানায় নিয়ে গেল। থানায় নিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত একটি কক্ষে আটকিয়ে নির্যাতন করল। কত যে বাবা ডেকে ডেকে কেঁদেছি তার কোনো হিসেব নেই। কিন্তু তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারিনি নিজেকে।
এ দিকে কিংশ্রীপুর গ্রামে আক্রমণ হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধারা রাতে থানায় পাল্টা আক্রমণ করে বসেন। পাঞ্জাবিরাও মুহূর্তেই থানার ভেতর থেকে গুলি চালাতে লাগল। আর এ সময় আমার রুমে মেজর আকবর নামে এক বড় অফিসার ছিলেন। তিনি অন্য সময়ের মতো দরজা বাইরে থেকে না লাগিয়েই রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে গেলেন। আমিও সুযোগ বুঝে দিলাম এক দৌঁড়। কিন্তু দৌঁড় দিয়ে বাইরে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বা পায়ের হাঁটুর নিচে একটি বন্দুকের বুলেট এসে বিদ্ধ হলো।
একে তো প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার পাক বাহিনীর শারীরিক নির্যাতন তার উপর গুলি। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখি আমি একটি হাসপাতালে শুয়ে আছি এবং সেখানে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনতে পাই। আমার বাম পা কাটা দেখতে পেয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলে বাইরে কথা বলা লোকগুলো ভেতরে এসে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, এখন আর তোমার কোনো ভয় নেই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা। তোমাকে আমরা আহত অবস্থায় চৌদ্দগ্রাম থেকে এখানে নিয়ে এসে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছি। এই জায়গার নাম বিলুনিয়া। তুমি কান্না করবে না। তোমাকে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলা পাঠবো। পরে মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে ভারতের ত্রিপুরায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেই থেকে বিজয়ের আগ পর্যন্ত আমি ভারতে ছিলাম। ডিসেম্বর মাসের ২২ বা ২৩ তারিখে পায়ে বেন্ডিজ নিয়ে দেশে আসি। এই বাঁ পায়ে গত ৪৪ বছর ধরে এই ফিতাওয়ালা বিশেষ ভাবে তৈরি বুট জুতা পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি।
সরুফা বেগম ৭১’র স্মৃতি বলতে গিয়ে আরো বলেন, একদিন আমার গৃহকর্তা ডা. নূর আহাম্মদসহ আরো ৭-৮ জনকে ঘর থেকে ধরে এনে তার উঠানো লাইনে দাঁড় করায় মারার জন্য। তখন আমাদের বাড়িসহ আশেপাশের কয়েক বাড়ির নারীরা উচ্চস্বরে যখন কান্নাকাটি শুরু করে, তখন তারা লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা না কি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করছে।
সরুফা বেগম আরো বলেন, আমার চোখের সামনে কিংশ্রীপুর গ্রাম থেকে ৭-৮ জন যুবতী মেয়েকে চৌদ্দগ্রাম থানায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। আমার জানা মতে এই গ্রামের মাত্র একজন বিবাহিত সুন্দরী নারীকে থানায় না নিয়ে জোড় করে ঘরেই নির্যাতন করে। সেদিন তাদের জন্য অনেক কান্না করেছি। কোন দিন কল্পনা করিনি আমার মতো কম বয়সের মেয়েকে তারা ধরে নিবে। আমার অভিশাপের কারণেই তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়েছে-এ কথা বলেই কেঁদে দেন।
সরুফা বেগম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন বাড়ি আসি তখন মা বলেছিল, আর মানুষের বাড়িতে কাজ করবি না। বিয়ে দিয়ে দিমু। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, একে তো ৭১’র নির্যাতনের ঘটনা তার উপর আমার এক পা প্রায় পঙ্গুর মতো। বিয়ের সম্বন্ধ আসলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেঙে যায়। কাজেই অশক্ত পা নিয়ে আবার শুরু করি মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝি এর কাজ। এমনি করে কেটে যায় ১৭ বছর। ১৯৮৮ সালে একই উপজেলার পাঁচোরা গ্রামের কবির আহাম্মেদের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। নানা কারণে ২ বছরের মধ্যেই ভেঙে যায় সেই বিয়ে। আমার ঘরে একটি মেয়ে হয়। জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায় সেই মেয়ে। বর্তমানে স্বামী সন্তান বিহীন একাকিত্ব জীবন যাপন করছি। অন্যের জায়গায় একটি ছোট্ট ঘর বানিয়ে থাকছি। তাও ভাঙা।
তিনি দুঃখ করে বলেন, শুনেছি, কুমিল্লার বর্তমান জেলা প্রশাসক নাকি এবার বীরাঙ্গনাদের কুমিল্লায় নিয়ে সম্মান জানিয়েছে এবং জমি দিয়েছে। কিন্তু আমি কি অপরাধ করলাম? আমি তো শুধু নির্যাতন সহ্য করেছি তা নয়, সারা জীবনের জন্য একটা পা হারালাম। বুলেট বিদ্ধ পা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে এক মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য কাজ করছি। আমার কপালে কি তাহলে কুমিল্লার ডিসি স্যারের সম্মানটাও জুটবে না?
- কেএনএফের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গহিন বনে
- প্রেমিকের হাত ধরেই কেএনএফে আকিম বম
- কেএনএফ’র নারী শাখার সমন্বয়কসহ দুজন কারাগারে
- বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
- ছেলের কবরের পাশে শায়িত হলেন হাতিয়ার সাবেক এমপি ওয়ালী উল্লাহ
- নোয়াখালীতে শতকোটি টাকার জমি উদ্ধারের পর প্রকৌশলী বদলি
- নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ প্রদান
- পানি সংকটে নাজেহাল নোবিপ্রবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা
- ফেনীতে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ!
- অর্থনৈতিক সংকট: তিন ইস্যুতে কঠোর হচ্ছে সরকার
- দুবাইতে বাংলাদেশের কারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন?
- রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ কর্মীসহ নিহত ২
- লোকসভা নির্বাচন: ভারতে ভ্রমণ ভিসায় তিন দিনের নিষেধাজ্ঞা
- সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
- যমজ বোনকে হাতুড়িপেটা করল চাটমোহর পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি
- লক্ষ্মীপুরে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ
- কাঁচা মরিচের কেজি ছাড়াল ২০০ টাকা
- বুলেট থাকতে ব্যালটে কেউ হাত দিতে পারবে না: ফরিদপুর জেলা প্রশাসক
- বিড়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ নোবিপ্রবির বঙ্গমাতা হলের ছাত্রীরা
- এক জালে মিলল ৫৫০০ পিস ইলিশ, ১৭ লাখে বিক্রি
- নোয়াখালীতে ১৩ পরীক্ষার্থীকে ফেল করালেন প্রধান শিক্ষক
- নোয়াখালীতে প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন, ওসির প্রত্যাহার দাবি
- স্ত্রীকে হত্যা করে ২২ বছর পালিয়ে ছিলেন স্বামী
- নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, সভাপতিসহ আহত ৬
- নোয়াখালীতে পাওয়ার টিলারের চাপায় শিশুর মৃত্যু
- লক্ষ্মীপুরে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ
- ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বেতন-ভাতা ফেরতের নির্দেশ
- ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মির্জা কাদের
- গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া দেশ এগোতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
- জিয়াউর রহমান যেভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে চেয়েছি
- দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না
- বাংলাদেশ-কুয়েত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন
- পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
- ফুলগাজীতে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ৬ বুথে একটিও ভোট পড়েনি
- একাই ৪০ ভোট দিয়েছেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, অতঃপর...
- আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মন্দিরে নির্বাচনী সভা চেয়ারম্যান প্রার্থীর
- প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস: শিক্ষামন্ত্রী
- তারেককে নিয়ে টালমাটাল বিএনপি
- ফেনীতে ২৪ ক্যান বিয়ারসহ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আটক
- বিলাসিতা কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে নজর দিন : শেখ হাসিনা
- উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপির ১০ স্বজনের জয়
- তেলের দাম বাড়াল সৌদি
- ফেনীতে কোটি টাকার রাস্তা নির্মাণ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ
- শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি জয়নুল আবদিন ফারুকের
- লক্ষ্মীপুরে আইডিয়াল মাদরাসায় শতভাগ পাস
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ফেনীতে ৭ প্রার্থী
- আকস্মিক বন্যা: আফগানিস্তানে একদিনে ২০০ জনের বেশি নিহত
- শেখ হাসিনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস, আ.লীগ নেতাকে অব্যহতি
- দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালে ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা
- ফেনীতে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ!