ব্রেকিং:
সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে রাইসির হেলিকপ্টার, কোনো আরোহী বেঁচে নেই রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের ছবি-ভিডিও প্রকাশ্যে আজ থেকে ৬৫ দিন সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ নোয়াখালীতে শতকোটি টাকার জমি উদ্ধারের পর প্রকৌশলী বদলি লক্ষ্মীপুরে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ কাঁচা মরিচের কেজি ছাড়াল ২০০ টাকা এক জালে মিলল ৫৫০০ পিস ইলিশ, ১৭ লাখে বিক্রি ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মির্জা কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ফেনীতে কিশোর গ্যাং পিএনএফের প্রধানসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সৌদি পৌঁছেছেন ১৭ হাজার ১৪১ হজযাত্রী সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক আজ বিশ্ব মা দিবস জলদস্যুর কবলে পড়া সেই জাহাজ এখন বাংলাদেশের জলসীমায় কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার
  • সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রহস্যময়ী পেঁয়াজের সাতকাহন

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০১৯  

মার্কিন মুল্লুকের স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মশালে সবসময় আগুন জ্বলে।আগুন জ্বলে আমাদের শিখা অনির্বাণে।তবে পেঁয়াজের আগুন দাউদাউ করে না জ্বললেও কখনো নেভে না।মাঝে মাঝে কিছুদিন "ছাইচাপা আগুন" হয়ে থাকে।বিশেষ সময়ে জ্বলে ওঠে পেঁয়াজ,হয়তো মানুষের ইশারায়।পেঁয়াজ মানুষকে না হাসলেও কাঁদায়।নাটক আর সিনেমার লোকজন কান্নার দৃশ্যে গ্লিসারিন ব্যবহার করে।পেঁয়াজ কাটতে গেলেও চোখে জল আসে।পেঁয়াজ কাঁদে এবং কাঁদায় একারণে যে,পেঁয়াজের ভেতর জলের পরিমাণই বেশি।পেঁয়াজ সবজি নয়,মসলাজাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Allium capa অ্যালিয়াম কেপা।পেঁয়াজ ও রসুন লিলি গোত্রের উদ্ভিদ।পেঁয়াজে জল ছাড়াও আছে শর্করা,প্রোটিন,ফসফরাস ও লৌহ।পেঁয়াজ বৃষ্টিকে সামান্য ভালোবাসে।তবে বেশি ভালোবাসে শীতকে।বাংলাদেশে শীতকালেই পেঁয়াজের চাষ বেশি হয়,ঝাঁজও বেশি থাকে।বাঙালির একদিনও পেঁয়াজ না কিনলে চলে না।কারণ ভাত,পান্তা,সবজি,আচার ভর্তা,মাংস,কাবাব,চানাচুর ভাজা এমনকি শুধু পেঁয়াজের ভর্তাও খিচুড়ির সাথে বাঙালির খুবই উপাদেয় খাদ্য।দাম বাড়লে পেঁয়াজ-আপেল কমলার মতো হয়ে যায়।আপেল-কমলার মতো "একটা দামি দামি তৃপ্তি বা ভাব" নিয়ে তখন পেঁয়াজও খাওয়া যেতে পারে।হুটহাট দাম বাড়ার কারণে ফুলের গাছের মতো টবেও পেঁয়াজের চাষ করা যেতে পারে।পেঁয়াজের সাদা ফুল ও কলি হয়ে উঠতে পারে রজনীগন্ধার চেয়েও জনপ্রিয়।পেঁয়াজের ভালোবাসাটাও কিন্তু অনেকক্ষণ থাকে এবং অসাধারণ।চিবিয়ে খেয়ে দেখুন,সহসা গন্ধ যাবে না।সুগন্ধি আর পেঁয়াজ দুটোর ঝাঁজই কিন্তু অনেকক্ষণ থাকে।ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধের পেঁয়াজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পেঁয়াজ মানব শরীরে রক্তের সঠিক সঞ্চালনে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।পেঁয়াজ নাকি আবার "বিশেষ শক্তি" বাড়ায়।দেশ-বিদেশের খবর অনুযায়ী পেঁয়াজ খেলে নাকি যৌবন সতেজ থাকে,যৌন ক্ষমতা বাড়ে।সেক্ষেত্রে প্রতিদিন এক গ্লাস পেঁয়াজের জুস খাওয়া লজ্জার নয়,বরং নিশি লজ্জাই.....।আশা করছি,এই লেখার শেষে পেঁয়াজের "বিশেষ শক্তি"র কারিশমা নিয়ে একটি গল্প থাকবে।

          পেঁয়াজই একমাত্র মসলা জাতীয় উদ্ভিদ যা বহুদিন ধরে তার স্ট্যাটাস জমা রেখেছে মানুষের কাছে।প্রাচীন গ্রিক,হিন্দু ও চাইনিজ মিথে পেঁয়াজের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।সারা পৃথিবীতে যত রকম মসলাই ব্যবহৃত হোক না কেন পেঁয়াজের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।ভারতীয় মসলার পৃথিবী জয় করার গল্পে পেঁয়াজের স্থান সবার উপরে।পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে মজাদার কিছু অফার দরকার হয়ে পড়ে।অনেকে সেটা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে,অনেকে করেন বাস্তবে।যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো কারো অফার--টব সমেত ফুল গাছ দেওয়ার পরিবর্তে টবসহ পেঁয়াজ গাছ উপহার দিন।কারো কারো অফার--বাসায় আসার সময় বিস্কিট বা মিষ্টি না এনে পেঁয়াজ নিয়ে আসুন।হয়তো শীঘ্রই দেখা যাবে গাড়ি ও ফ্রিজ কোম্পানিগুলো অফার দিবে--যেকোনো গাড়ি কিনলে বস্তাভর্তি পেঁয়াজ মুফত্ (ফ্রী)।ফ্রিজ কিনলে ফ্রিজভর্তি পেঁয়াজ একদম ফ্রী।পেঁয়াজের দাম বাড়লে নাকি স্বামীরা পেঁয়াজ কিনতে চান না।বউরা স্বামীকে পেঁয়াজ কেনার কথা বললেই স্বামীরা বলেন--ডার্লিং পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে তুমি কাঁদো সেটা আমি চাই না।পেঁয়াজ নিয়ে এত হাস্যরসের গল্প প্রচলিত থাকলেও এই পেঁয়াজ নিয়ে চাষীদের ভাগ্য মোটেও ভালো নয়।যখন পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে ওঠে তখন চাষাবাদে লগ্নিকৃত টাকাই ওঠে না।আড়তে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমে না।পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলেও যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পেঁয়াজ ফলায়,তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।পেঁয়াজের দাম দুষ্প্রাপ্য হলে কিংবা বাড়লে বেশিরভাগ সময় আমদানি করা হয় ভারত থেকে।২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে সাময়িক সময়ের জন্য ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ নিয়ে "সিন্ডিকেট বাজি"র মহড়া চোখে পড়ে।রাজা আসে রাজা যায় সিন্ডিকেটের তাতে কিছুই আসে যায় না।পেঁয়াজ নিজে জ্বলে এবং অন্যকে তুমুল জ্বালায়।যাই হোক,পেঁয়াজের সেই ক্যারিশমেটিক গল্পে চলে যাই।গল্পটি পুরাতন হলেও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি।গল্পটি এ রকম--

        
             এক রাজা,তার চার স্ত্রী।রানীদের মনে সুখ নেই।রাজাকে নিয়ে তারা সুখী নন।রাজা রাজ্যশাসনে এবং যুদ্ধ-বিগ্রহে যতটা সাহসী ও শক্তিশালী বউদের কাছে তিনি ততটাই দুর্বল।একদিন চার বউকে ডাকলেন রাজা।জানতে চাইলেন কে তাকে কতটা ভালোবাসে?প্রথম বউ বললো,রাজাকে সে আকাশ ও সমুদ্রের মতো ভালবাসে।দ্বিতীয় বউ বললো,সে রাজাকে নদী ও বনের মত ভালবাসে।তৃতীয় বউ বললো,রাজাকে সে হিরা ও সোনার মতো ভালবাসে।ছোট বউ শুধু বললো,সে রাজাকে রাজ্য ও পেঁয়াজের মতো ভালবাসে।রাজা ক্ষেপে গিয়ে ছোট বউকে বনবাসে পাঠালেন।গল্পটা এখানেই শেষ করা যেত কিন্তু শেষ করা যাচ্ছে না।পাঁচ বছর পর যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজ্য নিয়ে রাজা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।তার মনে সুখ নেই।তিনি কোনো স্ত্রীর গর্ভেই তার কোনো উত্তরাধিকারের জন্ম দিতে পারেননি।তাঁর পরে কে হবে রাজা?এটা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।এরপরে এক যুদ্ধে শত্রুকে তাড়া করতে গিয়ে তিনি এক গহীন বনে পথ হারিয়ে ফেললেন।খাবার নেই,পানি নেই।সাথে বাঘ,সিংহ ও সাপের ভয়।তিনি রাতে এক পোড়োবাড়িতে আশ্রয় নিলেন।তাকে যিনি আশ্রয় দিলেন তিনি রুপবানের মতো রাজাকে গান শোনালেন।রাজার মনে হলো,এই কন্ঠ তার অনেক দিনের চেনা।এরপর আশ্রয়দাত্রী রাজাকে পেঁয়াজের শরবত খাওয়াতে লাগলেন।গান শুনে আর পেঁয়াজের শরবত খেয়ে রাজার ক্লান্তি দূর হলো।যিনি আশ্রয় দিয়েছেন,গান শুনিয়েছেন,পেঁয়াজের শরবত খাইয়েছেন রাজা তাকেই রাতে কামনা করে বসলেন।রাজার আদেশ শিরোধার্য।আধো আলো-অন্ধকারে রাজার কাছে যিনি এলেন তাকে দেখে রাজা চমকে গেলেন।কারণ,তিনি রাজার ছোট বউ।সেই রাতে রাজার মনে হলো তিনি বাসর রাতের আনন্দ পাচ্ছেন।দুইদিন পর রাজা ছোট বউকে নিয়ে রাজ্যে ফিরলেন।কয়েকদিন পর সারা রাজ্যের প্রজারা আনন্দে মেতে উঠলো।জানা গেল,ছোট রাণীমা সন্তান-সম্ভবা!দাম যতই বাড়ুক কিংবা কমুক,আসুন আমরা পেঁয়াজের মতো ভালোবাসা কী সেটা বুঝতে শিখি।

       Footnote--আজকের লেখাটি শুধু ফরমালিন মুক্তই নয়,একবারেই রাজনীতি মুক্ত।তবে লেখাটি যদি কারো ভালো না লাগে,তাহলে তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করে বুঝে নিন পাঁচ কেজি পেঁয়াজ একদম ফ্রী।আর ভালো লাগলে দশ কেজি পেঁয়াজ সাথে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে ভুলবেন না কিন্তু।