ব্রেকিং:
নোয়াখালীতে শতকোটি টাকার জমি উদ্ধারের পর প্রকৌশলী বদলি লক্ষ্মীপুরে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ কাঁচা মরিচের কেজি ছাড়াল ২০০ টাকা এক জালে মিলল ৫৫০০ পিস ইলিশ, ১৭ লাখে বিক্রি ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মির্জা কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ফেনীতে কিশোর গ্যাং পিএনএফের প্রধানসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সৌদি পৌঁছেছেন ১৭ হাজার ১৪১ হজযাত্রী সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক আজ বিশ্ব মা দিবস জলদস্যুর কবলে পড়া সেই জাহাজ এখন বাংলাদেশের জলসীমায় কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন ওবায়দুল কাদের দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঢাকায় মনোনীত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে এই ডেভিড মিল
  • রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

উপহারের ঘরে বদলে গেলো ৫ হাজার মানুষের জীবন

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২২  

বাসাবাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন জামিলা বেগম। দীর্ঘদিন আগে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে থাকতেন অন্যের বাড়িতে। আশ্রিত জীবন কেটেছে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে। জীবনের দীর্ঘ পথচলায় তার দুর্দশার দিকে তাকায়নি কেউ। কখনও ‘নিজের একটি ঘরের’ স্বপ্ন দেখেননি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের নতুন ঘর পেয়েছেন। সেই সঙ্গে দুই শতক জমির মালিকও হয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে জামিলার মুখে হাসি ফুটেছে।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন জামিলা। পাশাপাশি ঘরের সামনে পিঠার দোকান দিয়েছেন। প্রতিদিন যা রোজগার হয় তা দিয়ে ভালোভাবেই চলছে সংসার। বদলে গেছে জীবনধারা।

শুধু জামিলা বেগম নন, ছবিরন নেছা, সাথী সরকার ও জরিনা বেগমসহ জেলার প্রায় পাঁচ হাজার ভূমিহীনের মুখে হাসি ফুটেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে সংসারে সচ্ছলতা আনতে কেউ পিঠা বিক্রি করছেন, কেউ দর্জির কাজ করছেন, মুদি দোকান দিয়েছেন, আবার কেউ শাক-শবজি চাষ করছেন, কেউবা আবার হাস-মুরগি পালন করছেন। 

 

faridpur1                                                                                                         ৩০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে

একই প্রকল্পের বাসিন্দা জামিলা বেগম বলেন, খুব কষ্টে দিনপাত করেছিলাম। উপহারের ঘর পেয়েছি, ঘরের সামনে পিঠার দোকান দিয়েছি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়, তা দিয়ে ভালোভাবেই চলছে আমার সংসার।

জরিনা বেগম বলেন, ঘর পেয়ে অনেক খুশি। ঘরে সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জির কাজ করি। প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় হয়। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই জনের রোজগারে খুব ভালো আছি।

আসমা বেগম বলেন, উপহারের ঘরে শান্তিতে বসবাস করছি। এবার ঘরের চালের ওপর লাউ গাছ লাগিয়ে ১৫০০ টাকা রোজগার হয়েছে। এছাড়া সিম, বেগুনসহ নানা সবজির চাষ করেছি। পাশাপাশি হাস-মুরগি পালন করছি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফরিদপুরের নয় উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার অসহায় পরিবার পেয়েছেন উপহারের ঘর। যারা বসবাস করতেন অন্যের জায়গায় কিংবা ভাসমান অবস্থায়। ঘর পেয়ে বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা।

আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৫৩ একর জমির ওপর নগরের সব সুবিধা নিয়ে ‘স্বপ্ননগর’ নামে আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়েছে। যাদের জমি নেই, ঘর নেই; এমন ৩০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাট, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন। এছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

faridpur2                                                                                                             হাস-মুরগি পালন করছেন এখানের বাসিন্দারা

সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ লাল রঙের টিনের সেমিপাকা ঘরগুলো এলাকাকে সুন্দর করে তুলেছে। দৃষ্টি এড়ায়না পথচারীদের। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর, সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম। ঘরগুলোর চালের ওপর ও পাশ দিয়ে শাক-সবজি চাষের পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আঙিনায় লাগানো হয়েছে ফুল ও ফলের গাছ। পাশাপাশি শিশুদের পড়ালেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্কুল, বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক। স্কুল থাকায় নিয়মিত পড়ালেখা করতে পারছে কোমলমতি শিশুরা।

আলফাডাঙ্গার স্বপ্ননগর, নগরকান্দা ও সদরপুরের শত স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘরে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে এখানের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। তারা এখন বসবাস করছেন আধাপাকা বাড়িতে। সেই বাড়ির পাশে করেছেন শাক-সবজি চাষ। কেউবা করছেন হাঁস-মুরগি, ছাগল-গরু পালন। দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্তে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। সরকারের এই সুবিধা পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো।

স্বপ্ননীড় প্রকল্পের বাসিন্দা সবেদা বেগম বলেন, নদীতে আমার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। স্বামী-সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। উপহারের ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি। এখনে শান্তিতে আছি। ঘরের পাশেই শাক-সবজি চাষ এবং হাস-মুরগি পালন করছি।

faridpur4                                                                                                      সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে এখানের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা

আশরাফ হোসেন বলেন, আমি প্রতিবন্ধী। অন্যের বাড়িতে স্ত্রী-ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতাম। এখনে ঘর পেয়েছি, ওই ঘরেই একটি মুদি দোকান দিয়েছি। খুব ভালো আছি।

ছবিরন নেছা বলেন, স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। সরকার আমাকে একটি ঘর দিয়েছে, সেখানে বসবাস করছি। ওই ঘরেই দর্জির কাজ করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে ভালোই চলছে সংসার। এখন আর মানুষের কথা শুনতে হয় না।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল হক বলেন, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৫৩ একর জমির ওপর ‘স্বপ্ননগর’ নামে বিশেষ একটি আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়েছে। যাদের জমি নেই, ঘর নেই; এমন ৩০০ পরিবারের ঠাঁই মিলেছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাট, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন। এছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

faridpur5                                                                                                             সরকারের এই সুবিধা পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো

তিনি বলেন, দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর, সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম। ঘরগুলোর চালের ওপর ও পাশ দিয়ে শাক-সবজি চাষাবাদ করে বাসিন্দারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি শিশুদের পড়ালেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্কুল, বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক। 

সদরপুরে গড়ে তোলা হয়েছে শত স্বপ্ননীড় নামে আরও একটি আবাসন এলাকা। এখানে দেড় শতাধিক পরিবারের ঠাঁই মিলেছে। এছাড়া ফরিদপুর সদর, মধুখালী, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা ও চরভদ্রাসনেও ঠাঁই পেয়েছে হাজারো অসহায় পরিবার।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা গঠন করেছেন সমবায় সমিতি। নিয়মিত নিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও নানা প্রশিক্ষণে তারা হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকিতে সময়ের সঙ্গে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

faridpur6                                                                                                             ঘরে সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জির কাজ করে সচ্ছল জরিনা বেগম

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেতী প্রু বলেন, অসহায় মানুষগুলোকে ঘর দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে অনেকে দর্জির কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে, চিকিৎসা, শিক্ষার বিষয়ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শান্তিতেই বসবাস করছেন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হতদরিদ্রদের বসবাসের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করেছেন। এটি সত্যিই বিস্ময়কর। ওই মানুষগুলো ভাগ্যের চাকা নতুনভাবে ঘোরাতে শুরু করেছেন। আমার ইউনিয়নে বিশেষ প্রকল্প করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

চেয়ারম্যান বলেন, ঘর পাওয়া অধিকাংশ মানুষ ফুটপাত কিংবা অন্যের বাড়িতে বসবাস করতেন। আশ্রয়হীন মানুষগুলো এখন উপহারের ঘরে বসবাস করছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে খুশি তারা। বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা।

faridpur7                                                                                                            ঘরের চালে লাউ গাছ লাগিয়ে রোজগার করছেন আসমা বেগম

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জীবনমান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। এই প্রকল্প একটি রোল মডেল। কারণ এভাবে কোনও দেশে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ঘর তৈরির ব্যবস্থা করা হয়নি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছি। ফরিদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন বেশ কয়েকটি স্থানে শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির তৈরি করেছি। বাসিন্দাদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সবমিলে জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার ভূমিহীনকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। কিছু ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ওসব ঘরও ভূমিহীনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।