সুন্দরবনের কাঠ পাচার পুরোপুরি বন্ধ

১০ বছর আগেও সুন্দরবন থেকে অবৈধ কাঠ পাচার হতো। সেটা সুন্দরী, পশুরসহ বিভিন্ন গাছের কাঠ ছিলো। কিন্তু এখন অবৈধ কাঠ পাচার পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়েছে। টাকা দিয়েও সুন্দরী গাছের কাঠ পাওয়া যাবে না। কেউ বলতে পারবেন না খুলনা, মোংলা বা সাতক্ষীরায় কিংবা সারা দেশের কোথাও সুন্দরী বা পশুর কাঠ কিনতে পাওয়া যায়।

সোমবার দুপুরে খুলনায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এমন দাবি করেন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবনের জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) প্রতিবেদন এবং কৌশলগত পরিবেশ ব্যবস্থাপনা (এসইএমপি)  বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় প্রধান অতিথি আরো বলেন, সুন্দরবন সম্পর্কে সব সময় নেগেটিভ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। কিন্তু সুন্দরবনের অনেক পজিটিভ বিষয় রয়েছে যা আমাদের অগোচরে থেকে যাচ্ছে। বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবন টিকিয়ে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সুন্দরবনের উপর বন সংলগ্ন উপকূলীয় ৩০ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে। ২০১৪ সালে একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়েছিল সুন্দরবনের নদীতে। যা জীব বৈচিত্র্যের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছিল। এ বিষয়টি ইউনেস্কোর নজরে আসে। সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য ভবিষ্যতে যাতে টিকে থাকে সে লক্ষে ইউনেস্কো একটি দিকনির্দেশনা দেয়। যার আলোকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবনের জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং কৌশলগত পরিবেশ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হচ্ছে।  

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসইএ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জহির ইকবাল। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাবেক উপ-প্রধান বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করলে শুধু মাছ মরে না এতে জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে আমি একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি পশ্চিম বন বিভাগে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের সম্পৃক্ত করে এক মাস আগে এ প্রকল্প শুরু করেছি। এছাড়া সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বন বিভাগ।

অলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সুন্দরবন শুধু আমাদের সম্পদ নয়, এটি বিশ্বের সম্পদও বটে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রচুর উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হবার পর এ অঞ্চলে উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আরও তরান্বিত হবে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত নীতি, পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে যাতে সুন্দরবনের ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখাতে হবে।  প্রস্তুতাধীন কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং কৌশলগত পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সুন্দরবন সংরক্ষণে সুস্পষ্ট গাইডলাইন দেবে। সে অনুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আমরা সুন্দরবন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারবো।