ব্রেকিং:
এক জালে মিলল ৫৫০০ পিস ইলিশ, ১৭ লাখে বিক্রি ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মির্জা কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ফেনীতে কিশোর গ্যাং পিএনএফের প্রধানসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সৌদি পৌঁছেছেন ১৭ হাজার ১৪১ হজযাত্রী সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক আজ বিশ্ব মা দিবস জলদস্যুর কবলে পড়া সেই জাহাজ এখন বাংলাদেশের জলসীমায় কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন ওবায়দুল কাদের দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঢাকায় মনোনীত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে এই ডেভিড মিল ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নোয়াখালীতে হেরে গেলেন ওবায়দুল কাদের পতেঙ্গায় আগুন ধরে প্রশিক্ষণ বিমান কর্ণফুলীতে, ২ পাইলট আহত
  • শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

যুবলীগ নেতার অবৈধ বালুমহাল, মাসে আয় কোটি টাকা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

প্রশাসনের নিরবতার সুযোগে ফেনীর সোনাগাজীতে ইজারা বর্হিভূত অবৈধ বালুমহাল গড়ে তুলেছে সরকার দলের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী একটি চক্র। এই অবৈধ চক্রটি বালুমহাল থেকে আয় করছে মাসে কোটি টাকার উপরে। 

গত ৩ মাস ধরে উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের সাহেবেরঘাট ব্রিজের দক্ষিণ পাশের ছোট ফেনী নদী থেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করলেও নির্বিকার প্রশাসন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পাড় রক্ষার ব্লকগুলো নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। একইসঙ্গে গরু-মহিষের চারণভূমি ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার অবহিত করলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাহেবেরঘাট ব্রিজের এক কিলোমিটার উত্তরে ছোট ফেনী নদীর চরদরবেশ মৌজায় বিএস খতিয়ানের ২০০২ দাগে সাড়ে নয় একর জায়গা জুড়ে জেলা প্রশাসনের অনুমোদনে বালুমহাল রয়েছে। বালুমহালের ইজারাদার নদীর অনুমোদিত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে ব্রিজ সংলগ্ন আধা কিলোমিটারের জায়গা থেকে গত চার বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে। এতে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পিলারের নিচে মাটি সরে গিয়ে ব্রিজ হুমকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও উত্তোলনকৃত বালু খালে স্তুপ করায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে চরছান্দিয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের বিশাল এলাকা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে।  

এলাকাবাসী এ নিয়ে বার বার অভিযোগ দিলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মাস আগে প্রভাবশালী চক্রটি ব্রিজের দক্ষিণে ছোট ফেনী নদীর পশ্চিম চরদরবেশ মৌজার বিএস খতিয়ানের ৯২১ দাগের কয়েক একর জায়গা জুড়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। চক্রটি বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে নদীর পাড়ের সরকারি খাস ভূমি ও কয়েকটি পুকুরে জমা করে অবৈধ বালু মহাল গড়ে তুলে বিক্রি শুরু করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু ভর্তি ট্রাক বিভিন্ন গন্তব্যে আসা যাওয়া করছে। অবৈধ বালুমহালে অবস্থান করা একটি এস্কেভেটর ট্রাকে বালু তুলে দিচ্ছে। এস্কেভেটর চালক আব্দুল হালিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক সেন্টু দৈনিক মজুরিতে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। বালু বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার কামাল উদ্দিন বলেন, সরকারি পাকা সড়কের ঠিকাদার জামাল উদ্দিনের ক্রয় করা বালু আমি ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি। 

এ সময় তিনি একটি মেমো দেখান যেখানে লেখা রয়েছে, প্রত্যয় এন্টারপ্রাইজ, প্রোপাইটার মজিবুল হক, রেফারেন্স সেন্টু মিয়া। তিনি সহ আরো একাধিক ট্রাকচালক জানান, প্রতিদিন আমরা অন্তত ৬০/৭০ ট্রাক বালু ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, প্রতি ট্রাক বালুর দাম ১৯শ টাকা। 

অবৈধ বালুমহালের পাহারাদার আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাকে নিয়োগ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের স্যার, বেতন দেয় সেন্টু মিয়া, ঈদের আগে স্যার বদলি হয়ে গেছে।’ 

স্থানীয় আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন অন্তত ২০০ ট্রাক বালু বহন করে করে বিভিন্ন স্থানে  পৌঁছে দিচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন বালু বিক্রি হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় কোটি টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে। নদী থেকে বালু তুলে পুকুর ও জমিতে জমা করার পর বালু উত্তোলন সাময়িক বন্ধ রাখে। বালু বিক্রি শেষ হওয়ার আগেই আবার নতুন করে বালু উত্তোলন শুরু করে। এভাবে গত চার মাস প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের পর বিক্রি করলেও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

চরছান্দিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন আকুল বলেন, চারণভূমির অভাবে চরছান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নে পশুপালন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে দুই ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক খামারি গরু-মহিষ লালন পালন করতেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা অন্তত ৩০ পরিবার এখনো পশু পালন করছি। আমরা ভয়ে প্রভাবশালীদের মুখোমুখি হতে পারিনি তবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে অবহিত করার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক সেন্টু সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের ৭১ নম্বর সদস্য। ছাত্রলীগ যুবলীগ রাজনীতিতে অতিতে অংশগ্রহণ না থাকলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য  সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রহিম উল্যার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে ঠিকাদারীতে যুক্ত হয়। পরে উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতার আস্থাভাজন হয়ে বালুমহাল, ব্রিজের টোল ও ঠিাকাদারীতে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সেন্টুর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বিষেদগার করে বলেন, বালু তুললে আপনারা (সাংবাদিকরা) কিছুই করতে পারবেন না। এই বলে ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান জানান, ছোট ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তার জানা নেই। উপজেলা প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলনকারীদের সহায়তা কার অভিযোগ সত্য না। তিনি বলেন, আমরা অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেলে অভিযান পরিচালনার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে জানতে পেরেছি তাই দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ফেনীর  জেলা প্রশাসক মোছাম্মদ শাহিনা আক্তারকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এবং বিস্তারিত তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠোনোর অনুরোধ করেন। প্রতিবেদক বিস্তারিত পাঠানোর তিন দিন পরও সরেজমিনে প্রশাসনের কাউকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।