স্বল্প খরচেই অধিক মুনাফা, আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে

স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা অর্জনে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে ফেনীর কৃষকদের। লাভজনক এই ভুট্টা চাষে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অধিদফতর সার, বীজ ও কৃষি পুনর্বাসনসহ পরামর্শ সহায়তা দিয়ে কৃষকদের উৎসাহী করছে। ফলে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক বেশি। ভুট্টা গাছের পাতা সুষম গো-খাদ্য এবং কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষক তার গবাদি পশু পালন ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারে অপরদিকে বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক এ ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর তাই উপজেলার অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলোতে ব্যাপক ভুট্টার চাষাবাদ করা হয়েছে।

উপজেলার ফাজিলপুর, কাজিরবাগ, পাঁচগাছিয়া, শর্শদি ও ধলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল এনকে (৪০), পালওয়ান, টাইটান, ৯৮১ সহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ভুট্টা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এবার জেলার ছয় উপজেলায় এক হাজার ২২০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে সরকারি প্রণোদনা। এরমধ্যে উন্নত জাতের বীজ, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার পৌঁছানোসহ পরিচর্যার জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা করে কৃষকদের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পতিত ও অনাবাদি জমিতে কম খরচে ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছে জেলার কৃষকরা। জেলার চরাঞ্চল সোনাগাজী উপজেলায় অন্য জেলার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ভুট্টা মাছ, মুরগি ও গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে ও লাভজনক চাষ হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাপক আশা জাগিয়েছে।

আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে

এদিকে ৩ জুন (বৃহস্পতিবার) ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আরো উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুল হক রিপনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মেম্বার মো. আবু ইউছুফসহ সাংবাদিক ও শতাধিক কৃষক।

ফাজিলপুর ইউপির কৃষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভুট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম লাগে এবং ফলনও অন্য ফসলের তুলনায় বেশি হয়, ফলে তিনি ধান আবাদের চেয়ে ভুট্টার আবাদে অধিক আগ্রহী। ভুট্টা মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া ভুট্টা বাজারে বিক্রি করার পরও এর শুকনো গাছ ও মোচা বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

তিনি জানান, এবার ভুট্টা চাষে খরচ মিটিয়ে তিনি বিঘা প্রতি পঁচিশ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন। প্রতি একরে ভুট্টার ফলন হয় ১২৫ মণ, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি।

উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ফেনীতে চলতি বছরে দুইশত ১৭ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়। এরই মধ্যে মাঠ থেকে ফসল ঘরে তোলা হয়েছে। ব্যয় মিটিয়ে এক কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকা মুনাফা পাবেন স্থানীয় কৃষকরা।