ব্রেকিং:
এক জালে মিলল ৫৫০০ পিস ইলিশ, ১৭ লাখে বিক্রি ছোট ভাইকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মির্জা কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ফেনীতে কিশোর গ্যাং পিএনএফের প্রধানসহ গ্রেফতার ৫ সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাপ্রধান সৌদি পৌঁছেছেন ১৭ হাজার ১৪১ হজযাত্রী সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সাবেক মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নিজ্জর হত্যাকাণ্ড: কানাডায় আরো একজন ভারতীয় গ্রেফতার ‘দেশে তেলের সঙ্গে কমবে-বাড়বে বিদ্যুতের দামও’ হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক আজ বিশ্ব মা দিবস জলদস্যুর কবলে পড়া সেই জাহাজ এখন বাংলাদেশের জলসীমায় কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন ওবায়দুল কাদের দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঢাকায় মনোনীত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে এই ডেভিড মিল ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নোয়াখালীতে হেরে গেলেন ওবায়দুল কাদের পতেঙ্গায় আগুন ধরে প্রশিক্ষণ বিমান কর্ণফুলীতে, ২ পাইলট আহত
  • রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের তিন প্রকল্প

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১  

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ১০৭ জন। সাধারণ হিসাবে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। এক দশকের পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সরকারকে।

বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। এগুলোর মধ্যে আছে বজ্রপাত শোষণে অ্যারেস্টার স্থাপন; বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পেতে বিশেষ প্রযুক্তি স্থাপন এবং কৃষকের জন্য আশ্রয় ছাউনি নির্মাণ।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত একনেকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন।

একই সঙ্গে অব্যাহত থাকবে তালগাছ রোপণের কাজ।

সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে দুই শতাশিক লোক মারা যায়। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব বলেন, ‘বজ্রপাত আবহমান কাল ধরে হচ্ছে, এখনও হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। এটা বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীতে বেশির ভাগ দেশেই আমাদের চেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়।’

গত এক দশকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল ছিল আমাদের জন্য ওয়েকআপ কল। সে বছর সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ৮০ জনের প্রাণহানি ঘটে। মারা গেছে শতাধিক পশুসম্পদও ।’

ওই ঘটনার পর বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের তিন প্রকল্প

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন।

 

কিন্তু প্রকল্পটির সুফল পেতে অপেক্ষায় থাকতে হবে দীর্ঘ সময়। গত চার বছরে থামেনি মৃত্যুর মিছিল। এ বছরও বেড়েই চলেছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা।

মৃত্যুর ঝুঁকি এখনও কাটেনি বলেও মনে করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব। তিনি বলেন, ‘সাধারণত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাত হয়। একেকটা স্ট্রাইককে বলি বজ্রপাত। পুরো ঘটনাকে বলি আমরা বজ্রঝড়। বজ্রঝড় হলে একটার পর একটা ব্রজপাত হতেই থাকে। সাধারণত এটি ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।’

সরকার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানিয়ে মো. মোহসীন বলেন, ‘সুনামগঞ্জের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রথমে আমরা চিন্তা করলাম হাওর-বাঁওড়ে যখন কৃষকরা কাজ করেন, তখন বজ্রপাত শুরু হলেও নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে ৩০-৪০ মিনিট সময় চলে যায়।’

আর তাই সেখানে আশ্রয় ছাউনি স্থাপনের কথা ভাবছে সরকার। সচিব বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের জন্য একটি প্রকল্প করেছি। দুটো জেলায়, কয়েকটা উপজেলায় আমরা প্রথমে পাইলট প্রজেক্ট করে দেখব কী হয়। তারপর আমরা আগাব। এর সঙ্গে অর্থেরও সম্পর্ক আছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে চান বজ্রপাতে আমাদের দেশে মৃত্যুর কম হোক, ক্ষয়ক্ষতি কমে আসুক।’

বজ্রঝড়ের স্থায়িত্ব যেহেতু ৩০ মিনিটের বেশি নয়, তাই ছাউনি নির্মাণ করে মানুষের প্রাণহানি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সচিব। তিনি বলেন, ‘কংক্রিটের ছাউনি যদি করা যায়, লোকজন তাদের পশু নিয়ে আসল। নিরাপদে অবস্থান করল। ২০/২৫ মিনিট পর তারা আবার কাজে ফিরে গেল।’

মেহেরপুরের গাংনীতে ছোট ছোট কয়েকটি ছাউনি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা হাওরে শুরু করতে চাই। এটা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থেকে আমরা আশা করছি, ছাউনি যদি করতে পারি তাহলে অনেক কাজ আসবে।’

শুধু ছাউনি নির্মাণে আটকে থাকতে চায় না সরকার। খোঁজা হচ্ছে আরও আধুনিক প্রযুক্তি। সচিব মো. মোহসীন জানালেন, অ্যারেস্টার নামের একটি যন্ত্রের কথা, যা স্থাপন করা হলে বজ্রপাত শোষণ করে নেবে ওই যন্ত্র। ঠেকানো যাবে মানুষের প্রাণহানি। বেঁচে যাবে ফসল ও প্রাণিসম্পদ।

মো. মোহসীন বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কথা বললাম। প্রতিটি অ্যারেস্টার স্থাপনে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগবে। তার মানে, এটা দিয়ে কভার করতে অনেক টাকা লেগে যাবে।’

অ্যারেস্টার নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করার ফাঁকে পাওয়া গেল আরেকটি প্রযুক্তির সন্ধান। বলা হচ্ছে, স্পেনের এই প্রযুক্তি দিয়ে কোনো স্থানে বজ্রপাতের অন্তত ৩৫ মিনিট আগে পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। দেয়া যাবে সতর্কতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় এমন একটি যন্ত্রের ব্যবহার নিজেই দেখেছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। সেই অভিজ্ঞতা বিনিময় করে তিনি বলেন, ‘এই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ হলো, মানুষকে আবার সেই তথ্য জানিয়ে দিতে হবে।’

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের তিন প্রকল্প

 

কীভাবে মানুষের কাছে এই সতর্কবার্তা পৌঁছানো যাবে, সেটাও ভেবে রাখা হয়েছে। সচিব বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মোবাইল অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। মাইকিং করা যেতে পারে। সেখানে যদি একটা স্টেশন বসানো হয়, তা হলে তারা বলতে পারবে এখানে বজ্রপাত এই সময়ের মধ্যে হতে পারে।’

গোটা বাংলাদেশকে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে ‘তিন শতাধিক স্টেশন স্থাপন করতে হয়’ বলে জানালেন সচিব।

আর তালগাছ রোপণ কাজকে চলমান রাখতে চায় সরকার। তারা বলছে, এটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ফলপ্রসূ।

কারণটাও ব্যাখ্যা করলেন সচিব। বলেন, ‘যেকোনো ধরনের উঁচু গাছ বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করে। যখন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে, তখন উঁচু গাছ সেটা নিউট্রালাইজ করতে পারে। সেজন্য আমরা তালগাছ রোপণের একটি প্রকল্প নিয়েছি। তাই যেকোনো টিআর আর কাবিখা প্রকল্পে বলি, তালগাছ রোপণের ব্যবস্থা করতে। ৫০ লাখ বলি, ৫৫ লাখ বলি-এটা শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবছর রোপণ করা হচ্ছে। কিন্তু এটির সুফল পেতে অনেক দিন সময় লাগবে।’

সরকারের এই ভাবনাগুলো কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাওয়া হলে সচিব বলেন, ‘প্রকল্পগুলো এখনও প্রণয়ন পর্যায়ে আছে। একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, শুধু হাওর অঞ্চলের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘আলাদা করে অ্যারেস্টার বসানোর জন্য একটি প্রকল্প নিতে চাই। আধা ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস জানতে আমরা একটি প্রকল্প নিতে চাই। তালগাছের কাজ তো চলছে। ছাউনির জন্য আমরা আলাদা প্রকল্পের কথাও চিন্তা করছি, আবার প্রতিবছর কাবিখার ক্ষেত্রে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করি, সেখানেও ওই প্রকল্পে নেয়া যায় কি না… এটার সুবিধা হলো এর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে যেতে হবে না। আমাদের এখান থেকে আমরা করতে পারব।’

বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে সরকারের তিন প্রকল্প

মেহেরপুরের মুজিবনগরে বজ্রপাতে মৃত কৃষকের পরিবারের আহাজারি

 

প্রস্তুতি নিতেই বছর দেড়েক সময় চলে গেল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে আমরা আশা করি এগুলোর বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে পারব।’

কোন প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘প্রকল্পগুলোকে আমরা পাশাপাশি নিতে চাই। তাহলে বুঝতে পারব, কোনটাতে সুফল আমরা বেশি পাচ্ছি। আমরা অ্যারেস্টারে বেশি পাচ্ছি, নাকি আগাম সতর্কবার্তায় বেশি পাচ্ছি, নাকি ছাউনিতে বেশি পাচ্ছি।’

তবে বিল্ডিং কোড চূড়ান্ত হওয়ায় বজ্রপাতে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন সরকারের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিল্ডিং কোডে বলা আছে, একটা ঘর করতে গেলে তার ওপরে বজ্রপাত নিরোধক মানসম্মত দণ্ড দিতে হবে। অনেকে বলেন দণ্ড আছে। কিন্তু সেটা মানসম্মত হয় না।’

প্রতিটি ভবনে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হচ্ছে কি না সেটা তদারকি করার ওপর জোর দেন মো. মোহসীন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এর ফলে বজ্রপাতের ৭০ শতাংশ সংকট কেটে যাবে।’