ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মোদির সফরে বেশি লাভ বাংলাদেশের: ইকোনমিক টাইমস

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২১  

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর করছেন ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী।

এই সফরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দুই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবকাঠামো এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ আরও জোরদার হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সংযোগ এবং এ সংশ্লিষ্ট খাতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রত্যাশাও করা হচ্ছে; দুই দেশের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসব পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ভৌগোলিক গুরুত্ব

ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান একটি প্রজাপতির মতো। এই প্রজাপতির মূল দেহ বাংলাদেশ; যার পাখা ছড়িয়ে আছে একপাশের রাশিয়া এবং মরিশাসের বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলজুড়ে এবং অন্য পাশে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে বাংলাদেশ মুক্ত, উন্মুক্ত, সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনীতির প্রতিবেশী দেশ (ভারত) থেকেও সুবিধা পেতে পারে।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। যে কারণে ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকে উদীয়মান ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে দেশটি।

বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক (কানেক্টিং টু থ্রাইভ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টেগরেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া শীর্ষক) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অবাধ পরিবহন সংযোগ স্থাপিত হলে তা বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের পরিমাণ ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাই লাভবান হবে। এমনকি দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে।

গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের সরকার এসব লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে; যা বেশ কয়েকটি অবকাঠামো সংযোগ প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে গতি পেয়েছে। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হলো সম্প্রতি ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতু; যা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার সাবরুম জেলার মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— এই উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র সড়কপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির মধ্যেই সীমিত নয়। এসব উদ্যোগ রেলপথ, বিমান, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং উপকূলীয় পণ্য-পরিবহনের সব ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করছে। ছয়টি অচল রেলপথের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচটি সচল করা হয়েছে এবং নতুন দু’টিসহ ষষ্ঠ রেলসংযোগ পথটিও চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আসামের গুয়াহাটি এবং ঢাকার বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলীয় অনেক ছোট শহর ও নগরীর সঙ্গে আকাশপথে চট্টগ্রাম এবং সিলেটসহ বাংলাদেশের অনেক জেলা সংযুক্ত হবে। পণ্য পরিবহনের নতুন এবং সম্প্রসারিত বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

একই সঙ্গে এসব উদ্যোগ বাংলাদেশকে শুধুমাত্র রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস অনুসন্ধানে সহায়তা করবে না, বরং প্রতিকূল অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতেও সহায়তা করবে।

দুই দেশের মাঝে উপকূলীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পরিবহন করা যায়।

বাণিজ্য ছাড়িয়ে

বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে যখন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দৃঢ়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সেখানে বিনিয়োগ এবং জ্ঞানের আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ভারতের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগে নরেন্দ্র মোদির সরকারের উৎসাহ দেওয়া উচিত।

দ্বিপাক্ষিক মান উন্নয়ন জোরদার করা ব্যতীত এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ অ-কৃষি অর্থনীতি, বিশেষ করে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়াজাত পণ্যের মতো খাতগুলোতে আরও বেশি অর্ধ-দক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এই সঙ্কটের সমাধানে পারস্পরিক জ্ঞানের আদানপ্রদান গুরুত্বপূর্ণ এক স্তম্ভ; যেখানে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। 

সময়ের সাথে সাথে ভারত জলবায়ুনির্ভর আধুনিক কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতগুলোতে সঙ্কট এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা অর্জন করেছে। 

ভারত যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে এবং সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে; উন্নয়নশীল সহযোগীদের একই সঙ্কটের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে দেশটি।

মোদির পরীক্ষা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‌‘আত্মনির্ভর ভারত’ চিন্তাভাবনার অন্যতম এক পরীক্ষা বাংলাদেশ। যদিও ভারত আত্মনির্ভরশীলতার পথে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারপরও ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো ইফেক্ট’ নীতি নিয়ে বিশ্বের কাছে সেবা এবং পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে ভারত। ভারতের এই উদ্যোগ থেকে ক্রমবর্ধমান ক্রয় সক্ষমতাসহ অতিরিক্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে পেতে পারে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ এমন এক প্রতিবেশি; যাকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হলো ‘সবার সাথে, সবার বিকাশ, সবার বিশ্বাস।’ নরেন্দ্র মোদির এই দর্শনের পরীক্ষাক্ষেত্র বাংলাদেশ। তার এই চিন্তা একটি কারণে বিশেষ; সেটি হলো— এর উদ্ভব হয়েছে ভারতের বহু প্রাচীন দর্শন থেকে; যা বর্তমানে মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের অন্যতম একটি ধাপ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে সোনার বাংলা গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও গতিশীল হোক। যদিও আমরা রাজনৈতিক সীমানায় পৃথক পৃথক প্রজাতন্ত্র থাকব; তারপরও আসুন আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জ্ঞানের সহযোগিতায় সংযুক্ত নতুন ধরনের কনফেডারেশন সন্ধান করি।

○ ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসে বৈশ্বিক থিঙ্ক ও অ্যাকশন-ট্যাঙ্ক কাটস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক বিপুল চ্যাটার্জির লেখা নিবন্ধ।