দুই আঙুলে নাক টিপে পথ চলতে হয় এখানে

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউপির রাজাপুর বাজারে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গরু জবাইয়ের নেই কোনো কসাইখানা।

গরু জবাইয়ের পর গরুর বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় রাজাপুর বাজারের উত্তর পাশে খেলার মাঠ ও রাজাপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার সম্মুখ অংশে খালের পাড়ে ফেলা হচ্ছে গরু জবাইয়ের বর্জ্য ও মুরগি বাজারের সব বর্জ্য। খোলা জায়গায় গরু ও মুরগির বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নানাবিধ সংক্রমক রোগব্যাধির জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।

বাজারের গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩০ বছর যাবত দেখছি এ বাজারে গরু জবাইয়ের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। তবে বাজারের উত্তর পাশে যেখানে গরুর মাংস বিক্রির দোকান ঠিক তার পেছনে খেলার মাঠে ও দোকানের সামনে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টা ও বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ৭ থেকে ৮ টা গরু জবাই করা হয়। এসব গরুর বর্জ্য ও আবর্জনা পাশে খালের পাড়ে ফেলা হয়। নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই এখানে গরুর বর্জ্য ফেলছি। এতে নিজের স্বাস্থ্য ও হুমকির মুখে। মাঝে মাঝে দুগন্ধ চরম আকার ধারণ করে, নাকে হাত দিয়ে কতক্ষণ থাকা যায়।

পশুর বর্জ্যের দুর্গন্ধে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

এর প্রতিকার চেয়ে প্রতিবছরই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বাজার পরিচালনা কমিটিকে জানানো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা জনস্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে গরু ও মুরগি বাজারের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ও গরু জবাইয়ের কসাইখানা স্থাপনের দাবি জানান।

বাজারের সচেতন মহলের অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগ তুলে প্রতিবেদককে জানান, বাজার কমিটির গাফিলতির দরুন অপরিষ্কার প্রচুর ময়লা জমে থাকা সত্ত্বেও, কোনো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়না বাজার কমিটিরকে। এসব দেখার দায়িত্ব স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বাজার পরিচালনায় কমিটির থাকলেও দায়িত্ব পালনে অবহেলায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় ব্যবসায়ীরা জোর দাবী জানান।

গোস্ত ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ভূঞা জানান, এ বাজারের ৩০ বছর ধরে গোস্ত ব্যবসা করি, এর আগে আমার বড় ভাই নুর ইসলামও গোস্ত ব্যবসা করতেন। এটি একটি পুরনো সমস্যা এ সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

পশুর বর্জ্যের দুর্গন্ধে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

রাজাপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন রিপন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাজার পরিচালনায় দায়িত্বে আছি। এ সমস্যাটি দীর্ঘদিনের, প্রতিবছরই অভিযোগ আসে অভিযোগ শুধু ব্যবসায়ীদের না, এ অভিযোগ বাজারে আসা সাধারণ মানুষেরও। এখন করোনার কারণে মাদরাসা বন্ধ, যার কারণে এ বছর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসছে না। কিন্তু এ সমস্যার ভুক্তভোগী মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও বিগত সময়ে ছাত্রছাত্রীরা মাদরাসা আসা বন্ধ করে দিতো। 

তিনি বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে আছি। বাজারে রাজাপুর ইউপি কার্যালয়, তাদের নাকের ডগায় এ সমস্যা, চেয়ারম্যান ও এ বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি উদ্যোগ নিলে সহযোগিতা করা হবে। এ সমস্যা সমাধানে ময়লা ফেলার জায়গা নির্ধারনের ব্যাপার আছে, কসাইখানা করা দরকার এর জন্য বাজেট দরকার। বাজারের সার্বিক উন্নয়ন তো আমার একার পক্ষে সম্ভব না।

দাগনভূঞা উপজেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গাজালা পারভিন রুহি রাজাপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন রিপনকে বলেন সরকারি বাজেটে কবে হবে সেটার দিকে না তাকিয়ে থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।