ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী আঘাত আসবে এমন আশঙ্কা ছিল: প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন ফেনীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেন আরেক নেতা, লিখলেন ‘আর পারলাম না নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেফতার তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতরে হামলা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদারের অঙ্গিকার দেশে নেই ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীর, পালিয়েছেন যে রাষ্ট্রে
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

লক্ষ্মীপুর টেকসই বেড়ী বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২৪  

ঘূর্ণিঝড় রিমাল চলে গেলেও উপকূল জুড়ে রেখে গেছে ক্ষত-বিক্ষতের হাজারো চিহ্ন। এর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ন জনপদ। অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিবন্ধী হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। কাঁচাঘরের ভিটির মাটি সরে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসংখ্য পরিবার। ঘরের ছাল উড়িয়ে নিয়ে বহু পরিবারকে রেখেছে খোলা আকাশের নিচে। বাতাসের তোড়ে ভেংগে যাওয়া ঘরকে সামনে রেখে অনেক পরিবার কাঁদছেন বেঁচে থাকার চিন্তায়।
২০১৫ সালে দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ ধসে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আলেকজান্ডার সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের তিনটি পয়েন্টে, রামগতিবাজার সংলগ্ন এক কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের তিনটি পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাৎক্ষনিক বাঁধের সংষ্কার করা হলেও এর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা এলাকাবাসীর। ঝড়ের তাণ্ডবলীলা যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ।
গতকাল শুক্রবার সকালে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা উপকূলীয় এ অঞ্চলটি ক্ষতবিক্ষত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের হাহুতাশ লক্ষ্য করা গেছে। মেঘনার তীরবর্তী লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, চরআবদুল্লাহ, বয়ারচর, তেলিরচর, চরগজারিয়া, বড়খেরী, চরগাজী ও কমলনগর উপজেলার লুধুয়া, মাতাব্বরহাট, নাছিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ,মতিরহাট, পাটারীরহাট, চরফলকন, চরকালকিনি, সাহেবেরহাট ও চরমার্টিন ইউনিয়নের প্রায় ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত জোয়ারের আঘাতে দুইশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা।
রামগতি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রায়হান। ধার-দেনা করে গড়ে তুলেছেন একটি মুরগীর খামার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসে সেটি একমাস বয়সী ২ হাজার মুরগী নিয়ে ধসে পড়েছে পুকুরের পানিতে। পুঁজিসহ সব হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।
আলেকজান্ডার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট থেকে জনতা বাজার সড়কে দুটি কালভার্ট ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলার চরগোসাই গ্রামে একাধিক সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তীব্র জোয়ারে রামদয়াল বাজার থেকে বিবিরহাট ও রামগতি বাজার পর্যন্ত একাধিক স্থানে ধসে গেছে রাস্তা। খসে গেছে সড়কের পিচ ও ইটের সুরকি। বিবিরহাট-রামগতি সড়কের কোরের বাড়ি মোড় সংলগ্ন বেড়ীবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বেইলি সেতুর দুপাশের মাটি সরে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এ দুটি এলাকার।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নে দুই শতাধিক, চররমিজ ইউনিয়নে শতাধিক, বড়খেরীতে প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ।
রামগতি পৌরসভার ৬ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড সবুজগ্রাম ও আলেকজান্ডার এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারের বসতঘরের ভিটির মাটি সরে গেছে জোয়ারের পানিতে। ভিটির মাটি চলে যাওয়ায় অন্যত্র থাকতে হচ্ছে তাদের।
পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে তাৎক্ষনিক কিছু সহায়তা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অত্যাধিক ক্ষতিগ্রস্ত চরআবদুল্যাহ, আলেকজান্ডার, চররমিজ ও বড়খেরীর বিভিন্ন এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে উপজেলায় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ৩১ টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আশ্রিত লোকজন বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। রামগতি সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের শাহাব উদ্দিন জানান, জোয়ার ও বাতাসের তীব্রতা দেখে এখানে আসছি। খাবার-দাবারে কোন সমস্যা হয়নি। বাড়ি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় এখান বাড়ি ফিরেছি।
ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে বেশ কয়েকটি স্থানে ধসে গেছে ৩ হাজার একশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৩১কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। বন্ধ রয়েছে ব্লক তৈরি ও জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। তীব্র জোয়ারে বড়খেরী, চরগোসাই, চররমিজ, চরআলেকজান্ডারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন এলাকাবাসী চলমান বেড়ীবাঁধের কাজ যথাসময়ে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ করার জোর দাবি জানান। না হয় জোয়ার জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার এ দুর্ভোগ কখনোই পিছু ছাড়বে না। পূর্বে নির্মিত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের যথাযথ সংষ্কার এবং দেখভাল জোরদার করার দাবিও জানান তারা।
কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ বলেন, তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।
রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন ও বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকছুদ মিজান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে তাদের ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে তারা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ ইতিমধ্যে পরিবদর্শন করা হয়েছে। বেড়ীবাঁধের ধসে পড়া অংশ সমূহতে জরুরী ভিত্তিতে সংষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে।
কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, তিনি উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। অবশ্যই তাদের সহায়তা করা হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের রাতে তিনি নিজেই সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।