ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী আঘাত আসবে এমন আশঙ্কা ছিল: প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন ফেনীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেন আরেক নেতা, লিখলেন ‘আর পারলাম না নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেফতার তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতরে হামলা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদারের অঙ্গিকার দেশে নেই ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীর, পালিয়েছেন যে রাষ্ট্রে
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ফেনীর একরাম হত্যাকাণ্ড ১ দশক পরও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামী পলাতক

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৪  

ফেনীর বহুল আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের আজ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামী এখনো অধরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে জেলা শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে তাকে পুড়িয়ে ও গুলী করে হত্যা করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত।

পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলেও তার শুনানি কার্যতালিকায় আসেনি এখনও। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় বছরের পর বছর আটকে রয়েছে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও। ফলে বিশ্বজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১০ বছরেও রায় কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে নিহতের স্বজন, সহকর্মী ও দলীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের মাঝে। জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের অ্যাকাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে গাড়ির গতিরোধ করে কুপিয়ে, গুলী করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয় একরামকে। এরপর ঘটনার রাতেই তার বড় ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ এ মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরমধ্যে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ১৬ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে নিজেদের জবানবন্দী প্রদান করেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামীর মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামী রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামীর মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকী ১৭ জনের মধ্যে ৮ জন আসামী জামিনে গিয়ে পলাতক ও ৯ জন আসামী ঘটনার শুরু থেকেই অধরা। যাদের হদিস পাচ্ছে না বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে এদের মাঝে কয়েকজন এরই মধ্যে দেশত্যাগ করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে।

এদিকে বর্তমানে এ মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২২ আসামী। তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজীব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক ৮ জনের মধ্যে রয়েছে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।

অন্যদিকে এ মামলার শুরু থেকেই অধরা রয়েছেন ৯ জন হত্যাকারী। শুরু থেকেই পুলিশী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তারা। এরা হলেন, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।

অপরদিকে মামলাটির রায় প্রদানকালে খালাস পাওয়া ১৬ জন হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার বর্তমান ওসি মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ৩-৪ জন আসামীর সাজা পরোয়ানা ফেনী মডেল থানায় রয়েছে। বাকী পলাতক আসামীদের পরোয়ানাগুলো তাদের স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট থানায় রয়েছে। এসব আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশ সব সময় সোচ্চার ও সচেষ্ট রয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য তারা এখনও অধরা।

এদিকে ফেনী জেলা জজ আদালতে মামলাটির রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা। রায়ের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের সেই আপিলের শুনানি হয়নি।

এ মামলায় ফেনী আদালতে নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, ‘মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দী, জেরা ও নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে পেপারবুকে সাজানো থাকতে হয়। সেই পেপারবুক প্রস্তুত না হওয়ায় আসামীদের আপিলের শুনানি শুরু হয়নি।

এদিকে নিহত একরামের স্বজন ও দলীয় সহকর্মীরা জানান, দেশের আলোচিত প্রায় সব হত্যাকা-ের বিচার বর্তমান সরকারের সময়ে গুরুত্বসহ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এ মামলার রায় কার্যকরে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।

নিহতএকরামের ভাই মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা নিম্ন আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। সরকার দ্রুত এ রায় কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং উচ্চ আদালতেও নিম্ন আদালতের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

নিহত একরামের স্ত্রী তাসমিম আক্তার বলেন, রায় কার্যকর ও পলাতক আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমি ও আমার সন্তানরা নিরাপদ নই।’তার দাবি এ রায় কার্যকরে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।