ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী আঘাত আসবে এমন আশঙ্কা ছিল: প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন ফেনীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেন আরেক নেতা, লিখলেন ‘আর পারলাম না নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেফতার তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতরে হামলা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদারের অঙ্গিকার দেশে নেই ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীর, পালিয়েছেন যে রাষ্ট্রে
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ভরা মৌসুমেও মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, পেশা ছাড়ছেন জেলেরা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

ঘাটে নেই সেই হাঁকডাক। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা। গভীর সমুদ্রে সামান্য ইলিশ মিললেও ট্রলারের খরচই উঠছে না। অধিকাংশ ট্রলারের জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে ফিরে আসছেন ঘাটে। ঋণের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন তারা, কেউ কেউ জেলে পেশা ছাড়ছেন। 

সরেজমিনে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে সারি করে মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে বসে আছেন জেলেরা। আড়তে অলস সময় পার করছেন শ্রমিক, বেপারী ও আড়তদাররা। দুই-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। বছরের এ সময় জেলেরা আনন্দ নিয়ে ইলিশ আহরণ করেন, ট্রলারভর্তি মাছ আসে চেয়ারম্যান ঘাটে। মাছ রাখতেই শুরু হয় হাঁকডাক। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। এই সময়ে শত শত মণ ইলিশ চেয়ারম্যান ঘাটে আসার কথা থাকলেও মিলছে না ইলিশ। 

হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের এমভি আলমগীর ট্রলারের মালিক মো. আলমগীর মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার মাছের সংখ্যা অনেক কম। মাছ নেই বললেই চলে। লসের কারণে অনেকে এই জেলে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরাও আগামীতে ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় যাব। আমি এখন ৭-৮ লাখ টাকা সুদের ওপর, ধানের ওপর ঋণ আছি। এবারও ঋণ হবে কারণ বেতন দিতে হবে জেলেদের। ব্যবসা ছাড়তে হবে, অন্য কোনো উপায় নেই।

ঘাটের শ্রমিক কবির সর্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভরা মৌসুমেও ঘাটে মাছ নেই তাই আমরা বসে আছি। মাছ থাকলে আমরা বসে থাকতাম না। যদি মাছ হয় তাহলে জেলেরা দুই পয়সা পাইতো, আমরা শ্রমিকরা দুই পয়সা পাইতাম এবং আড়তদাররাও দুই পয়সা পাইতো। সবাই ঋণে জর্জরিত হয়ে খুব বিপদে আছি।

মোহাম্মদ রায়হান মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার এত দিনেও মাছ পাচ্ছি না, আবার কিছুদিন পরেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসছে। আমরা আসলে যাব কোথায়? যদি অক্টোবর মাসের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে দেওয়া যেত তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো।

মো. মিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমুদ্র থেকে অল্প কিছু মাছ পাওয়া যায়। ঘাটের ব্যবসায়ীদের চড়া দামে সেই মাছগুলো কিনতে হয়। এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাছ  যায়। কিন্তু সেখানে দাম পাওয়া যায় না। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্যে আছে।

আল্লাহর দান মৎস্য আড়তের মালিক মো. আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন বলেন, গত বছরের তিন ভাগের এক ভাগ মাছ এবার পাওয়া গেছে। আমরা সবাই ঋণের মধ্যে আছি। এভাবে ঋণ টানতে টানতে আগামীতে যে কি হবে বলা যায় না। মেঘনা নদীতে বিভিন্ন স্থানে চর জমে গেছে। ফলে মাছ নদীতে আসছে না। গভীর সমুদ্রে যাওয়ার মতো ট্রলার সবার নেই। অনেক জেলে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। 

মেঘনা ফিশিং এজেন্সির ম্যানেজার মো. হাবিব ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষের দুই মাসেও কোনো ইলিশ মিলছে না। আবার কিছুদিন পর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসছে। মেঘনায় মাছ না পাওয়ায় জেলেরা খুব কষ্টে আছে। ৩ লাখ টাকা খরচ করে গভীর সমুদ্রে গিয়ে কেউ ৫০ হাজার টাকার আবার কেউ এক লাখ টাকার মাছ পাচ্ছেন। তাদের খরচের টাকাও উঠছে না। ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবীসহ সবাই লসের মধ্যে আছে।

হাতিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মানস মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশ গভীর সমুদ্রের মাছ, কেবল প্রজননের সময় নদীর দিকে আসে। প্রজনন শেষে ইলিশ আবার সমুদ্রে ফিরে যায়। সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ আছে। মেঘনার ডুবচরের বাধার কারণে ইলিশ সমুদ্রে চলে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ চলাচলেও প্রভাব পড়ে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কারণেও মাছ নদীতে কম আসছে। যেমন অবৈধ জালের ব্যবহার। সামনে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান রয়েছে। এর আগে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে বলে আমরা মনে করছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেঘনায় ইলিশ না পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আমাদের ঋতুগুলোও এলোমেলো হয়ে গেছে, বৃষ্টির সময়ে বৃষ্টি হয় না। আবার মেঘনা মোহনায় পলি জমে অনেক ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীর নাব্যতা কমে গেছে। নদীর পানিতে দূষণও বাড়ছে। এসব কারণে এবার মেঘনায় ইলিশ কম পাচ্ছেন জেলেরা। ইলিশ পাওয়ার এখনো সময় আছে। সামনে ইলিশপ্রাপ্তির পরিমাণ বাড়লে আশা করি জেলেরাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই লাভবান হবেন।