ব্রেকিং:
১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করবে সরকার সংকট উত্তরণের বাজেট বিমানে মন্ত্রী-সচিবদের প্রথম শ্রেণিতে বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত পিপিপি’র পাইপলাইনে নতুন ১৩ মেগা প্রকল্প সরকারের পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ হয়েছে প্যানেল স্পিকার হলেন কুমিল্লার প্রাণ গোপাল দত্ত ও আঞ্জুম সুলতানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আরও বিনিয়োগ করুন সরকারের ঋণ কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার, ৩০ জেলে আটক চাটখিলে সরকারি সহায়তা পেল ৭১ পরিবার সুবর্ণচরে বিস্ফোরক মামলায় যুবদল নেতা কারাগারে হাতিয়ায় ৯ মণ সামুদ্রিক মাছসহ ৩০ জেলে আটক রান্না করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো গৃহবধূর ফেনসিডিল মামলায় যুবকের ৮ বছরের কারাদণ্ড ল্যাব ফাউন্ডেশন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা শাখার কমিটি নাঙ্গলকোটে সুইপারের লাশ উদ্ধার কুবিতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিমানে জঙ্গলে ১৭ বছর মুক্তিযুদ্ধে ভিপি শাহআলমের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে
  • শুক্রবার ০২ জুন ২০২৩ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৮ ১৪৩০

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৪

৭ মাস ধরে বিকল দ্বীপবাসীর একমাত্র ভরসা নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৩  

নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এই দ্বীপে প্রায় সাড়ে সাত লাখ লোকের বসবাস। সারাদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য নৌপথই একমাত্র ভরসা এই দ্বীপবাসীর। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নিয়ে লড়াই করা দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ওছখালিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সেও নেই তেমন অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এখানে সেবা নিতে আসা অনেক রোগীকেই জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এখনো বিকল হয়ে মেঘনার পাড়ে নলচিরা ঘাটের কাছে পড়ে আছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের।

জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিমাসে উন্নত চিকিৎসার জন্য গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি এই হিসাবের বাইরে প্রায় সময় নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে আসেন আরও শতাধিক রোগী। নলচিরা ঘাট হয়ে চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে দ্বীপ থেকে জেলা শহরে যেতে হয়। প্রায় ২১ কিলোমিটারের এই নৌপথ পাড়ি দিতে হয় স্পিডবোট অথবা ট্রলারে। স্পিডবোটে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০০ টাকা এবং ট্রলারে ২০০ টাকা। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তার মধ্যে স্পিডবোট০-ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সাথে গাদাগাদি করে নদীপথ পাড়ি দিতে হয় রোগীদের।

এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় নলচিরা-চেয়ারম্যান ঘাট রুটে থাকা ট্রলার, স্পিডবোটে সাধারণ যাত্রীদের সাথে মেঘনা পার হতে হচ্ছে রোগীদের। এতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রী হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় ঘাটে অপেক্ষা করে জেলা সদরে যেতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে ছিল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বিকেলে দ্বীপে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এসময় মেঘনা নদীর তীরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটিকে ঝড়ের আঘাতে ঘাটের পাশের গাছের সাথে লেগে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের তদারকির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় লোকজন। যার ফলে বর্তমানে পুরোটাই বিকল অ্যাম্বুলেন্সটি। দ্বীপের রোগীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনরায় চালুর দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সিত্রাংয়ের সিগনাল পড়ার পরপর প্রতিটি নৌযানকে তাদের মালিকরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নলচিরা ঘাটের পাশে পড়ে ছিল। জোয়ার ও প্রচণ্ড বাতাসের আঘাতে অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর তীরে থাকা নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়। তারপর থেকে ওই গাছের সাথে এখনও পর্যন্ত পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তখনই এটি সচল করা সম্ভব হতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করে মানুষের সেবা ব্যবহার হবে এমন প্রত্যাশা দ্বীপের সাড়ে সাত লাখ মানুষের।

 

নোয়াখালী জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন মুহিন ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে একটি মেঘনা। জোয়ার ও জোয়ারের পরবর্তী সময়ে প্রায় উত্তাল থাকে নদীটি। এই নদী পার হয়েই আমাদের জেলা শহরে যেতে হয়। এখানে রোগীদের পরিবহনের জন্য যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি রয়েছে তা সাত মাসের মতো বিকল। ফলে এখান থেকে রোগীদের জেলা শহর কিংবা অন্যত্র যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার পাশাপাশি এই নদীর জন্য একটি সি-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি সেবাপ্রত্যাশীদের।

নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক আশ্রাফ আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি কমিউনিটি বেস্ট হেলথ কেয়ার থেকে বুঝে নেয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখন অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার একটি অংশ দিয়ে আমাকে চালক হিসেবে রাখা হয়। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আউটসোসিং থেকে আমাকে নিয়োগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। এদিকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকা বেকার সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে রোগীদের ব্যবহারের উপযোগী করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বরাদ্দ মন্ত্রণালয় থেকে পাস হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।