ব্রেকিং:
দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা ২১ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে সেতু, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ শিক্ষামন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমপি বাহারের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দেখছেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ
  • বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

‘আম-ছালা’ দুটোই গেছে ইউনাইটেড এয়ারের বিনিয়োগকারীদের

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২২  

লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থই হাওয়া। এখন নতুন করে ঋণ ও বকেয়ার টাকা দিতে হবে বিনিয়োগকারীদের। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ‘আম-ছালা’ দুটোই গেছে তাদের।

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে আবারও ডানা মেলবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টাও করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)!

বেবিচকের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রস্তাব ছিল সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফ করার। সেই আবেদনও নাকচ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এখন নিয়মানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া ও দায়-দেনা পরিশোধ করতে হবে বিনিয়োগকারীদের।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) আমাদের কাছে সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের আবেদন করেছিল। আমরা তা নাকচ করেছি।’

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে আবারও ডানা মেলবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টাও করে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ

‘আমরা সারচার্জ মওকুফ করব না, মওকুফ করতে পারি না। কারণ, এটা নিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো বিমান প্রতিষ্ঠানকে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হবেও না।’

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানে আট বছর ধরে বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ডানা কখনও মেলবে না। অথচ বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নতুন করে পর্ষদ ঘোষণা করা হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন দেখানো হয় যে ব্যবসা পুনরায় চালু হবে। এ খবরে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ ওই গোষ্ঠী পরে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে বাজার ছাড়ে। আবারও ধোঁকায় পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

dhakapost

ইউনাইটেড এয়ারের মোট ঋণ রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। তাও কাগজে-কলমে, বাস্তবে আরও কম / ছবি- সংগৃহীত

নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত প্রতিষ্ঠানটির (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) পেছনে আর সময় না দিয়ে বাজারটা বাঁচানো। ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা— বলছেন তারা।

আমরা সারচার্জ মওকুফ করব না, মওকুফ করতে পারি না। কারণ, এটা নিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এখন পর্যন্ত কোনো বিমান প্রতিষ্ঠানকে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হবেও নাএয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, চেয়ারম্যান, বেবিচক

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ একটি মৃত প্রতিষ্ঠান। ছয় থেকে আট বছর ধরে পড়ে আছে উড়োজাহাজগুলো। এগুলোর উড্ডয়নের সক্ষমতা নেই। এসব উড়োজাহাজ নিয়ে আর স্বপ্ন না দেখিয়ে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনা জরুরি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিমান ব্যবসা অন্য সব ব্যবসার মতো নয়। এটা পুনরায় চালু করা অত্যন্ত কঠিন। ফলে যারাই এখানে বিনিয়োগ করবেন, তাদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে।’

‘প্রতিষ্ঠানটিতে (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে তারা বের হতে না পারলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে এর লাভ-লোকসান গ্রহণ করতে হবে তাদের।’

ইউনাইটেড এয়ারের সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও বিএসইসি চেয়ারম্যান আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমি বকেয়া রেখেই ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দিতে সুপারিশ করেছি।’ 

dhakapost

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান / ফাইল ছবি

‘ঋণ মওকুফ বা অর্থনৈতিক বিষয়টি বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটি বাতিল করেছে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানে আট বছর ধরে বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ডানা কখনও মেলবে না। অথচ বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নতুন করে পর্ষদ ঘোষণা করা হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন দেখানো হয় যে ব্যবসা পুনরায় চালু হবে। এ খবরে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বিশেষ ওই গোষ্ঠী পরে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে বাজার ছাড়ে। আবারও ধোঁকায় পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা 

এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ-উল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ৯৭ শতাংশের মালিক জনগণ। সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরায় চালুর লক্ষ্যে বিএসইসিতে একটি পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। এছাড়া বেবিচকের কাছে সারচার্জ (সম্পদ কর) মওকুফের আবেদন করেছি। বেবিচক সারচার্জ মওকুফ করলেই ব্যবসা শুরু করতে পারব। কারণ, ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সারচার্জ মওকুফ করলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যাবে।’

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারচার্জ মওকুফ না হলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি চালানো সম্ভব নয়। কারণ, ৫৮ কোটি টাকার সুদ ৩৫০ কোটি টাকা হয়েছে। এ কথা শুনে কোনো প্রতিষ্ঠানই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে না।’

‘আমরা শুনেছি আবেদন নাকচ হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুই জানানো হয়নি আমাদের। জানালে কী করণীয় চিন্তা করব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি বিমান সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন করে একটি প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানো যত সহজ, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কঠিন পুরাতন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করা। এটা কখনও সম্ভব হবে না।

ইউনাইটেড এয়ারের বর্তমান অবস্থা

২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস নেই। এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। তার উত্তরার বাসার অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অনেকটা রাস্তায় রাস্তায় অফিস করছে।

dhakapost

ইউনাইটেড এয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে এর লাভ-লোকসান এখন গ্রহণ করতে হবে তাদের—এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, পুনরায় চালুর জন্য তারা বিএসইসিতে একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে গত ছয় বছরের জমে থাকা অডিট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার জন্য উচ্চ আদালত অনুমোদনও দিয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ একটি মৃত প্রতিষ্ঠান। ছয় থেকে আট বছর ধরে পড়ে আছে উড়োজাহাজগুলো। এগুলোর উড্ডয়নের সক্ষমতা নেই। এসব উড়োজাহাজ নিয়ে আর স্বপ্ন না দেখিয়ে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আনা জরুরিমিনহাজ মান্নান ইমন, সাবেক পরিচালক, ডিএসই

এছাড়া গত ছয় বছরের আর্থিক হিসাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। নিরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। তাও কাগজে-কলমে, বাস্তবে আরও কম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিকে যদি স্বেচ্ছায় অবলুপ্তি করা হয় তাহলে বেবিচকের ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণের ২০০ কোটি টাকা, কর্মকর্তাদের বেতন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনাসহ সব দেনা পরিশোধ করতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা দিতে হবে।

সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ ১০ গুণ

২০১৬ সালে বন্ধ হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। বর্তমান পর্ষদ ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে জন্য বিশেষ অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। সেখানে দেখা যায়, বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারের বকেয়া, দেনা ও ঋণের পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। অথচ ২০১৫ সালে ছিল ৫৯১ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার ৬৭২ টাকা। অর্থাৎ ছয় বছরে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

দায়-দেনা বাড়লেও উল্টো কমেছে প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮৬৭ কোটি ২১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৭ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা কমিয়ে বিশেষ নিরীক্ষায় সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। মূলত প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজগুলোর মূল্য এখানে ধরা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, এগুলো যদি নিলামে বিক্রি করা হয় তবে কেজি দরে বিক্রি হবে। এতে মূল্য আরও কমে যাবে।

dhakapost

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ-উল আলম / ছবি- সংগৃহীত

ওটিসি থেকে যাচ্ছে এটিবিতে

লভ্যাংশ না দেওয়া এবং এজিএম করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে (ইউনাইটেড এয়ার) পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) পাঠানো হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি শেয়ার রয়েছে। যার প্রতিটির বাজার দর এক টাকা ৯০ পয়সা, মালিক দেড় লাখের বেশি বিনিয়োগকারী। নিয়ম অনুযায়ী এখন বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটিতে (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে তারা বের হতে না পারলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসেবে এর লাভ-লোকসান গ্রহণ করতে হবে তাদেরড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যন, বিএসইসি

ইউনাইটেড এয়ারের ইতিহাস

২০০৭ সালে ব্যবসা শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ব্যবসা শুরুর তিন বছর পর ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। তালিকাভুক্ত হয়েই এর উদ্যোক্তা-পরিচালকরা বিমান ব্যবসা বাদ দিয়ে শেয়ার ব্যবসা শুরু করেন। উড়োজাহাজ সার্ভিসে শুরু হয় অবহেলা। পুরাতন বিমানগুলোর সি-চেক না হওয়ায় ফ্লাইটগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলম্ব হতে থাকে। শুরু হয় পাইলটদের অসন্তোষ। জমতে শুরু করে বেবিচকের বকেয়া। এসব অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ফ্লাইট।

এরপর থেকে শেয়ারের দামে কমতে থাকে। একসময় ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ার গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় এক টাকা ৯০ পয়সায়। গত ছয় বছর ধরে ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে শেয়ারটির দাম। ফলে এখানে বিনিয়োগ করে ফতুর হয়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।

কারসাজিতে ৮০০ কোটি টাকা হাওয়া

সিলেটের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী ২০০৭ সালে ৫০ জন উদ্যোক্তাকে নিয়ে চালু করেন প্রতিষ্ঠানটি। যার বেশিরভাগই ছিলেন প্রবাসী। জানা যায়, তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছের লোক। এ কারণে ব্যবসা চালুর মাত্র তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনাইটেড এয়ার।

dhakapost

শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজগুলো / ছবি- সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন ৩২ জন। তাদের পরিকল্পনাই ছিল শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা ৫০ শতাংশ শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ বিক্রি করে দেন।

ঋণ মওকুফ বা অর্থনৈতিক বিষয়টি বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটি বাতিল করেছেমাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়

ওই বছর শেয়ারের গড় মূল্য ছিল ৪৬ দশমিক ৪০ পয়সা। সেই হিসাবে পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ৭৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তুলে নেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার গড় ২৩ দশমিক ৭০ টাকা দরে বিক্রি করে প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা তুলে নেন তারা। ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার ২০ দশমিক ৩১ টাকা গড় দামে বিক্রি করে ৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার ৯ দশমিক ৯২ টাকা গড় দরে বিক্রি করে প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০টি শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৮২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা তুলে নেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালকরা হলেন- মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাবু নেওয়াজ, সৈয়দ শাহেদ আহমেদ, মাজহারুল হক, জাকির হোসেন চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সিদ্দিকা আহমেদ, সোহুল চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, আহফাজ মিয়া, হাজি সানোয়ার মিয়া, আমিরুল ইসলাম, বদরুল হক চৌধুরী, রাজা মিয়া, খন্দকার মামুন আলী, মোহাম্মদ আশিক মিয়া, খন্দকার তাসলিমা চৌধুরী, মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, মদরিস আলী, তুরান মিয়া, খন্দকার ফেরদৌসি বেগম আলী, নিজাম উদ্দিন খান, ড. বিজয় কুমার সাহা, আব্দুল কুদ্দুস কাজল, শাহজাহান এস হাসিব, সৈয়দ চৌধুরী, আজিজুর রহমান, মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান ও খসরুজ্জামান।

dhakapost

ইউনাইটেড এয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী / ছবি- সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। তাও কাগজে-কলমে, বাস্তবে আরও কম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিকে যদি স্বেচ্ছায় অবলুপ্তি করা হয় তাহলে বেবিচকের ৪০০ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণের ২০০ কোটি টাকা, কর্মকর্তাদের বেতন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনাসহ সব দেনা পরিশোধ করতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা দিতে হবে

ঋণগ্রস্ত ইউনাইটেড এয়ার

বেবিচক বলছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ দীর্ঘদিন ধরে তাদের উড়োজাহাজের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এছাড়া এখন পর্যন্ত অ্যারোনেটিক্যাল ও নন-অ্যারোনেটিক্যাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা পাওনা বেবিচকের।

অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদের ঋণ রয়েছে ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ আট হাজার টাকা। স্বল্পমেয়াদের ঋণ রয়েছে ১১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

সারচার্জ মওকুফ না হলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি চালানো সম্ভব নয়। কারণ, ৫৮ কোটি টাকার সুদ ৩৫০ কোটি টাকা হয়েছে। এ কথা শুনে কোনো প্রতিষ্ঠানই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে নানজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ইউনাইটেড এয়ার

ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানান, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলন করে।

dhakapost

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে আবারও ডানা মেলবে ইউনাইটেড এয়ার। কিন্তু সম্ভব হয়নি / ছবি- সংগৃহীত

একাধিক মামলা

উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় ২০১৬ সাল থেকে সবধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। এরপর বেবিচক ও ইউনাইটেড এয়ার পাল্টাপাল্টি মামলা করে। এছাড়া উড়োজাহাজগুলো কেনায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।

এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিএসইসি।