ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী আঘাত আসবে এমন আশঙ্কা ছিল: প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন ফেনীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেন আরেক নেতা, লিখলেন ‘আর পারলাম না নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেফতার তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতরে হামলা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদারের অঙ্গিকার দেশে নেই ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীর, পালিয়েছেন যে রাষ্ট্রে
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ফেনীতে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে বজ্রপাত, সাথে বাড়ছে প্রাণহানি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪  

ফেনীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বজ্রপাত, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানি। চলতি বছরের ১৯ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বজ্রপাতে জেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বয়স ২০ এর নিচে। এছাড়া বজ্রপাতে গবাদিপশুর মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

রোববার (৯ জুন) বাবার সাথে মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর কাশিমপুরে আনোয়ার হোসেন (১৪) নামে উত্তর কাশিমপুর মডেল দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। একই দিন বজ্রপাতে সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়নের লন্ডনী পাড়া হাফেজ আবদুর রশিদ বাড়ি জামে মসজিদে আযান দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মোহাম্মদ ছায়েদ উল্যাহ (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান।স্থানীয়দের মতে বজ্রপাতের সময় তিনি মারা গেছেন। এছাড়া একই ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বজ্রপাতে ১২টি গবাদিপশু মারা গেছে।

এর আগে গত ১৯ মে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায় বজ্রপাতে একই দিন দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন হচ্ছেন রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর কুহুমা গ্রামের প্রবাসী আতিকুর রহমান মজুমদারের ছেলে মাহাদি হাসান। তিনি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অপরজন ঘোপাল ইউনিয়নের দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকার ফজলুল করিমের ছেলে শাহীন মাহমুদ অভি। তিনি নিজকুঞ্জরা মাদ্রাসায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

এছাড়াও ২০২৩ সালের ৮ জুন সকাল সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চর খোয়াজ গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান মো. নয়ন ইসলাম (২০) নামে এক যুবক। তিনি স্থানীয় একটি মৎস্য খামারে কাজ করতেন। একই বছরের ১৫ জুন সকালে সোনাগাজীর মতিগঞ্জে বজ্রপাতে আবদুল করিম (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি ওই ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের ওসমান আলী ক্বারি সাহেবের বাড়ির মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সারা দেশের মত বজ্রপাতে ফেনীতে প্রাণহানির সংখ্যা প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপর্যাপ্ত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বড় বৃক্ষের অনুপস্থিতিকে বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

তারা বলছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং  উঁচু গাছ কেটে ফেলা। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যেসব মানুষ থাকে,পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদিপশু। ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদিপশুও মারা যায়।

ফেনী শহরের নূরুল আমিন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধে কাজ করে জানি। কিন্তু বর্তমান সময়ে শহরে তালগাছ নেই বললেই চলে। ফেনী শহরে আগে থেকে তেমন তালগাছ ছিলো না যেগুলো ছিলো সেগুলো নানা প্রয়োজনে কেটে ফেলা হয়েছে।

রেদওয়ান শান্ত নামে আরেকজন বলেন, বজ্রপাতে ফেনীতে পরপর কয়েকজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি। এটি যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সতর্ক থাকতে হবে পাশাপাশি এটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় গাছপালা লাগানোসহ অগ্রিম সতর্কবার্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান তিনি।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের পরিবেশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সমন্বয়কারী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাত বলেন, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে প্রাকৃতিকভাবে লম্বা গাছ যেমন তালগাছ, সুপারি গাছ, নারকেল গাছ, বটগাছ লাগাতে হবে। এস গাছ কমে যাওয়ার কারণে বজ্রপাত এখন যেখানে সেখানে আঘাত হানছে। আগে বড় বড় বটগাছ, তালগাছ ও সুপারিগাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকায় বজ্রপাত হতো এসব গাছের ওপর। বড় বড় গাছ কেটে ফেলায় বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়ার সময় এসেছে। গাছ যত কমছে আমাদের ঝুঁকি তত বাড়ছে।

ফেনীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক জানান, বজ্রপাতকে সরকারিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করার পর থেকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ রোপণ করা হয়। এছাড়াও বন বিভাগের নিজস্ব উদ্যোগে রাস্তার পাশে তালগাছের চারা রোপণ করা হয় এবং তালগাছ রোপণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাত থেকে মানুষ বাঁচানোর একটি উপায় হতে পারে তালগাছ লাগানো। এটি হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সেই সাথে মধ্যবর্তী, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেটি হতে পারে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, পূর্বাভাস দেয়ার প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং মাঠেঘাটে কাজ করা সব মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া।

বজ্রপাত প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ নাঈম ওয়ারা এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, প্রতিবছর যে হারে গাছ কাটা হয় সে অনুপাতে গাছ রোপণ করা হয় না। আগে গ্রামের মাঠঘাটে তালগাছ দেখা যেত। তালগাছ বজ্রপাত ঠেকানোর অন্যতম উপায়। এখন তালগাছের সংখ্যা কমে এসেছে। বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে মাঠেঘাটে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।

বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পর্শের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বজ্রপাতের সময় পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে এবং উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় জানালা থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলা, টিভি-ফ্রিজ না ধরা, গাড়ির ভেতর অবস্থান না করা এবং খালি পায়ে না থাকারও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।