ব্রেকিং:
পূর্বাঞ্চলে রেলের ক্ষতি প্রায় ২২ কোটি টাকা ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই: প্রধানমন্ত্রী আঘাত আসবে এমন আশঙ্কা ছিল: প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে: সেনাপ্রধান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিক সমর্থন কমপ্লিট শাটডাউনেও চলবে মেট্রোরেল বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেআইনি শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আজ বাংলা ব্লকেড বা শাটডাউন ফেনীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২০ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করলেন আরেক নেতা, লিখলেন ‘আর পারলাম না নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেফতার তিস্তায় ভেসে আসা সেই মরদেহ ভারতের সাবেক মন্ত্রীর সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশনা বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশনের ভেতরে হামলা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরো জোরদারের অঙ্গিকার দেশে নেই ৪০০ কোটির পিয়ন জাহাঙ্গীর, পালিয়েছেন যে রাষ্ট্রে
  • শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

সিন্ডিকেটের থাবা প্রাণিখাদ্যের বাজারেও

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৪  

দফায় দফায় প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়ায় তল্পিতল্পা গুটিয়েছেন দেশের কয়েকশ খামারি। এতে ডেইরি কিংবা পোলট্রি খাতের বিনিয়োগ থেকে পিছু হটছেন অনেক উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র খামারি। ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) বলছে, এক বছরেই প্রাণীর খাবারের দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, যেখানে বিশ্ববাজারে বাড়ে ২০.৬ শতাংশ। 

শুধু কি দাম, নিম্নমানের প্রাণিখাদ্যেও ভরে গেছে বাজার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটবাজারে অবাধে বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে এসব ভেজাল প্রাণিখাদ্য। এতে নীরবে ক্ষয়ে যাচ্ছে ডেইরি ও পোলট্রি খাত। ভেজাল-নিম্নমানের খাবারের কারণে অপুষ্টিতে ভোগাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রাণী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়ার এ কারসাজিতে তাল দিচ্ছে শক্তিশালী চক্র (সিন্ডিকেট)। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আরো জেগে উঠেছে চক্রটি। বাজার খেয়ালখুশিমতো চালাতে গোখাদ্য মজুত রেখে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। মানব খাদ্যের দাম নির্ধারণ, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রাণিখাদ্যের দামের সিন্ডিকেট দমাতে নেই কেউ।

দেশে প্রচলিত প্রাণিখাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে- গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, সয়ামিল, ডি অয়েল রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, ছোলার ভুসি, মুগ ভুসি, খড় ও চালের খুদ। 

দাম

২০১৯ সালে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা সয়ামিলের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা; ২০২৪ সালে এসে তা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে ২০১৯ সালে প্রতি বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ৭৮০ টাকা; এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। ৫০ কেজি ওজনের ডি অয়েল রাইস পলিশের দাম ছিল প্রতি বস্তা ৭০০ টাকা; এখন ১ হাজার ৯০০ টাকা। মসুর ভুসির ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ছিল ৫৩৮ টাকা; এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকায়। ভুট্টার ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ছিল ৮৫৪ টাকা; এখন কিনতে লাগছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ধানের কুঁড়া ও ছোলার ভুসির দাম নামমাত্র থাকলেও এখন ধানের কুঁড়া ৫০ কেজির বস্তা কিনতে লাগে ৮৫০ টাকা আর ছোলার ভুসির বস্তা তিন হাজার টাকা।

বগুড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চার মাস আগে গমের মোটা ভুসি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা ও চিকন ভুসি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন মোটা ভুসি ২ হাজার ২০ টাকা ও চিকন ভুসি ২ হাজার ৮০০ টাকায় কেনা লাগছে। এ ছাড়া ৩০ টাকা দামের চালের খুদ এখন ৩৫-৪০ টাকা কেজি। ধানের কুঁড়া ছিল ১৫ টাকা কেজি, যা এখন বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। ৮১০ টাকার ভুট্টা পাউডার এখন ৯০০ টাকা। ৫ টাকা কেজি খড় এখন কিনতে লাগে ১০ টাকা।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) জানিয়েছে, ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে প্রাণিখাদ্যের প্রধান ছয়টি পণ্যের গড় দাম বেড়েছে ১৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। 

এদিকে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, ২০২০ সালে ৫০ কেজির এক বস্তা ফিডের দাম ছিল ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে একই খাদ্য বস্তাপ্রতি দেড় হাজার টাকা বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। 

যেভাবে সিন্ডিকেট

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার প্রাণিজ খাবারের খুচরা দোকান আছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে পাইকার দোকানির যোগাযোগ। পাইকারের সঙ্গে আবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত। তিন চক্রের যোগসাজশে মূলত গোখাদ্যের দাম বাড়ে। চাহিদা বাড়লে মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কমে না।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক চাষিরা এখন আর নিজেরা উৎপাদন না করে কোম্পানির সঙ্গে ‘কন্ট্রাক্ট ব্রয়লার ফার্মিং’ চুক্তি করছেন। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য এক বস্তা ফিডের দাম পড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা। সেই একই ফিড প্রান্তিক খামারি কিনতে চাইলে পড়ে ৩ হাজার ৭৪০ টাকা। এ জন্য প্রান্তিক খামারিদের চেয়ে কোম্পানির উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। আবার প্রান্তিক খামারিদের চাপে রাখতে কোম্পানিগুলো ক্ষণে ক্ষণে দাম বাড়িয়ে লোকসানে ফেলে দেয়। কাজী ফার্মস লিমিটেডসহ ১২টি বৃহৎ কোম্পানি পোলট্রি ফিডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

বড় দুটি কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। তবে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ খামারির সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ফার্মিং আছে। তারা কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? দেশে ২০০টি নিবন্ধিত ফিড মিল আছে, এখন কয়টা ফিড মিল চালু? ব্যবসায় লাভ হলে তো সব কোম্পানি খোলা থাকত। এখন মাত্র ৬০-৭০টি ফিড মিল চালু আছে।

চক্রের চক্কর

গরুর মাংসের দাম বাড়লে চারদিকে হুলস্থুল পড়ে যায়। তবে পশুখাদ্যের দাম দফায় দফায় বাড়লেও সিন্ডিকেট ভাঙার দিকে নজর নেই কারও। এ যেমন- কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তে আড়তে লাখ লাখ টন গোখাদ্য মজুত করে রাখা হলেও যেন দেখার কেউ নেই।

চট্টগ্রাম চাক্তাইয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিউল আলম বলেন, বড় শিল্প গ্রুপগুলো ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বিক্রি করে। পণ্য সরবরাহ করে এক থেকে দেড় মাস পর। সবার কাছ থেকে আগে টাকা নিয়ে নেয়। তারা এত বেপরোয়া হয়ে গেছে যে, মিল বন্ধ করার সময় কাউকে বলেও না। এখানে পাইকারি ক্রেতারা অসহায়। 

চট্টগ্রামের ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকার গোখাদ্যের পাইকারি বিক্রেতা মো. মোবারক জানান, ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে গাড়ি ভাড়াও। এক সময় পণ্য পরিবহনে ট্রাক ভাড়া ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তা বেড়ে এখন প্রায় ২০ হাজার টাকা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন হায়দার বলেন, অল্প কিছু মিল মালিক ও মজুতদারের কারণে বর্তমানে দেশে ডেইরি ও পোলট্রি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। বেশির ভাগ খামারি গরু বিক্রি করে খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিলগুলো আটা, ময়দা ও সুজি তৈরি করে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে আটা-ময়দা-সুজির চেয়ে গমের ভুসির দাম বেশি। মুরগি ও মাছের ক্ষেত্রে মিটবোন মিল, ফিসমিল, চিকেন মিল, শুঁটকি ব্যবহার করা হয়। তবে গরু শুধু ঘাস, লতাপাতাই খায়। সয়ামিলই গরুকে সবচেয়ে বেশি খাওয়ানো হয়। তবে এর দামেই আগুন। সারা পৃথিবীতে সয়ামিলের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। সয়ামিল উৎপাদন করে বাংলাদেশে ৪-৫টি কোম্পানি। এ ৪-৫টি কোম্পানির স্বার্থে দেশে সয়ামিল আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম, মুরগি এবং মুরগির বাচ্চার মতো পোলট্রি ফিডের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশের গুটিকয়েক করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তাদের যখন মন চায়, সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়ে অর্থ লোপাট করে। দেশে বছরে পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন হয় ৮০ লাখ টন। ফিড মালিকরা এখন প্রতি টনে বাড়তি মুনাফা করছেন ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে বছরে তারা পোলট্রি ফিড থেকে বাড়তি মুনাফা করছেন ৪ হাজার কোটি টাকা।

তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ যাতে কম দামে পোলট্রি পণ্য খেতে পারে এ জন্য সরকার পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। দেশের ফিড ব্যবসায়ীরা ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭৮ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৭৮ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় পেয়েছে পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে। অথচ পোলট্রি ফিডের দাম না কমিয়ে বাড়িয়েই চলেছেন তারা। 

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ৬০-৭০টি পণ্যের সমন্বয়ে ফিড তৈরি হয়। এগুলোর ৬০ শতাংশ উপকরণই আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টা আর সয়াবিন মিলসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপকরণ এবং ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না।

বাজারে ভেজাল খাদ্য

অনুমোদনহীন নিম্নমানের ভেজাল গোখাদ্যে ও পোলট্রি ফিড তৈরিরও অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এসব খাদ্যে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখসহ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্যও থাকে না। আবার কখনো কখনো প্যাকেটে নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে খামারিদের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে অসাধু চক্র। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল প্রাণিখাদ্য তৈরির সন্ধান পাওয়া যায়। পরে জরিমানাসহ সংশ্লিষ্ট কারখানা সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বগুড়ার শেরপুরের খামারি আতাউর রহমান ও আবদুল মান্নান বলেন, খাদ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ আটা, বালু ও সিরামিকসের ধুলা। পরে নামিদামি কোম্পানির সিল দেওয়া বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। কোনটি আসল আর কোনটি নকল, সেটি চেনাই এখন কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে প্রাণিজ খাবারের ভেজাল কারখানা আছে অন্তত ৩ হাজার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বগুড়ার শেরপুর ও সিরাজগঞ্জে।

বিপদে খামারি

সারাদেশে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখ। কোরবানির জন্য এবার প্রস্তুত করা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ পশু। তবে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবারের ঈদে লোকসানের শঙ্কা করছেন খামারিরা।

রংপুরের তারাগঞ্জের খামারি আকিুল কাদের বলেন, দানাদার ছাড়া বিদেশি গাভি তো খড়পানি খায় না। একবেলা খাবার না পাইলে চিৎকার শুরু করে। গরুগুলার হাঁকডাক শুনছেল বুকটা ফাটি যায়। বুঝি না হাকাউ এমতোন করি খাদ্যের দাম বাড়াওছে কেনে। সরকার কেনে এগুলা দেখছে না।

বগুড়ার শেরপুরের খামারি সাদিকুল ইসলাম বলেন, কোরবানি উপলক্ষে প্রতিবছর গরু পালন করি। গত বছর ভালোই দাম পেয়েছিলাম। এবার বাজার ভালো না। গত ২০ বছরের খামার জীবনে এমন অবস্থা দেখিনি।

বগুড়ার সুরা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত বছর ৪৮টি গরু বিক্রি করেছিলাম। এবার একটাও ষাঁড় রাখিনি। কারণ ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসা করা সম্ভব না। খাবারের দাম যদি নাগালে আসে, তাহলে আবারও নতুন করে সিদ্ধান্ত নেব। 

যা বলছেন

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আলী আজম রহমান শিবলী বলেন, খামারিদের বাঁচাতে হলে দুধের দাম বাড়ানো, প্রাণিখাদ্যে ভর্তুকি, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খামার পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বাড়ানো, নিম্নমানের গুঁড়াদুধ আমদানি বন্ধ করা, গোখাদ্যের সিন্ডিকেটকারী ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা ও ভেজাল খাদ্য রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘাসের ওপর নির্ভর করে শুধু দেশীয় গরু লালন-পালন সম্ভব। উন্নতজাতের গাভি যেগুলো দিনে ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়, সেসবের জন্য অবশ্যই ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার লাগবে। 

তিনি আরো বলেন, আগে খোলা মাঠে ছিল সবুজ ঘাস। প্রয়োজনের তাগিদে সেই মাঠ এখন আবাদি জমি হয়ে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তবে কৃত্রিম খাদ্যের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন,  এ বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছি। কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন বলেন বলেন, দাম নিয়ে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি নিয়মিত।  প্রাণিখাদ্যের দাম কমানোর চেষ্টা চলছে।