কবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছাড়বে, জানালো রাশিয়া

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) অংশীদারিত্ব থেকে বেরিয়ে আসবে রাশিয়া। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৪ সালের পর মহাকাশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসবে তারা। রুশ গণমাধ্যম তাসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়া আপাতত পড়ছে না মহাকাশে। মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছাড়বেন না রুশ মহাকাশচারীরা।

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে গত কয়েক মাস ধরেই জল্পনা চলছিল।

কিন্তু মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর নতুন প্রধান ইউরি বরিসভ জানান, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেই থাকবেন রুশ মহাকাশচারীরা। 

এদিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরে বরিসভ বলেন, আমরা এখন মহাকাশ চুক্তি মেনে চলব। অবশ্যই, আমরা আমাদের অংশীদারদের প্রতি সব বাধ্যবাধকতা পূরণ করব। তবে ২০২৪ সালের পরে স্টেশনটি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্তটি আপাতদৃষ্টিতে বরিসভের সাম্প্রতিক পূর্বসূরি দিমিত্রি রোগোজিনের দেয়া বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। যিনি ইউক্রেন আক্রমণের আগে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার আইএসএস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করে বক্তব্য রেখেছিলেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রেষারেষির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার মহাকাশ চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে বলে জল্পনা ছিল। এর জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যতও।

কারণ যে পাঁচটি দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা যৌথভাবে পরিচালনা করে মহাকাশ স্টেশন তাদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ও রুশ সংস্থা রসকসমস।

মস্কোর ঘোষণার পর আপাতত সেই জল্পনার অবসান হলো। যদিও মস্কোর সিদ্ধান্তে এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণাক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি দীর্ঘায়িত করতে চায় না মস্কো।

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনের অবস্থান। ১৯৯৮ সাল থেকে এটি ভরশূন্য অবস্থায় দিন-রাত প্রায় দেড় ঘণ্টা অন্তর একবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। 

সিএনএনের দাবি, বয়সের কারণে মহাকাশ স্টেশনে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পৃথিবীর কক্ষপথে জমা হওয়া নানা মহাকাশ-বর্জ্যের কারণে মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকারী নভোচারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ২০৩১ সালে সেটা পাকাপাকিভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। সেখানে এখন রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের চার ও রাশিয়ার তিন মহাকাশচারী।

রাশিয়া মহাকাশ স্টেশন ছাড়ার সময়সীমা ঘোষণা করলেও বিষয়টি এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়নি।মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সে (আইএসএসআরডিসি) নাসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন যে, রসকসমস থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

নাসার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিচালক রবিন গ্যাটেনস সম্মেলনের একটি প্যানেলে বলেছেন, 'আমরা আমাদের অংশীদারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাইনি।' তিনি আরও জানান, যে নাসা পরিকল্পনাটি এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে কথা বলবে।