ফ্রান্স থেকে মা-মেয়ে এসে দেখলেন বাড়ি দখল করে নিয়েছে ভাতিজা

ভাতিজা নুরুল হুদা আজাদকে বিশ্বাস করে বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন চাচা মো. আলাউদ্দিন হোসাইন। কিন্তু মালিক মারা গেলে সেই তত্ত্বাবধায়কই বাড়ির মালিক বনে গেছেন। হয়ে গেলেন কোটিপতি। রক্ষক থেকে বনে গেলেন ভক্ষক। ভুয়া অসিয়তনামা দেখিয়ে করে নিয়েছেন হোল্ডিং ট্যাক্স। চাচি আফরোজা বেগমকে হয়রানি করতে দিয়ে যাচ্ছেন মামলা আর প্রাণনাশের হুমকি। এমতাবস্থায় স্বামীর সম্পত্তি উদ্ধারে ফ্রান্স প্রবাসী আফরোজা জানিয়েছেন আকুতি।

ফ্রান্স প্রবাসী আফরোজা বেগম নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাবুপুর এলাকার রোজ ভিলার স্বত্বাধিকারী মৃত মো. আলাউদ্দিন হোসাইনের স্ত্রী।

জানা যায়, ২০১৬ সালে বাবুপুর এলাকায় ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে রোজ ভিলা নামে তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন ফ্রান্স প্রবাসী মো. আলাউদ্দিন হোসাইন। বাড়ি দেখভাল ও ভাড়া তোলার দায়িত্ব দেন ভাতিজা নুরুল হুদা আজাদকে। ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আলাউদ্দিন হোসাইন। ফান্সের চার্সেল শহরের চার্সেল বিলাশ এলাকায় তাকে  দাফন করা হয়। পরবর্তীতে ভুয়া অসিয়তনামা দেখিয়ে বাড়ির মালিক বনে যান নুরুল হুদা আজাদ।

মৃত আলাউদ্দিনের স্ত্রী আফরোজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আর আমার মেয়ে ফ্রান্স থেকে এসে দেখি আমার স্বামী যাকে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বাড়ির মালিক বনে গেছে। আমাকে এবং আমার মেয়েকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। আমার নামে দুইটা মামলা দিয়েছে। আমার স্বামীর এফডিআরের ৩৫ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমার মেয়েকে তুলে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। আমাকে প্রাণনাশ এবং কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছে। ভাড়াটিয়ারা আমাকে ভাড়া দেয় না। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি।

আফরোজা বেগম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য কামনা করে আফরোজা বেগম বলেন, আমার স্বামী পরিবারের সবাইকে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সে নিয়ে গিয়েও অনেককে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজ স্বামী নেই বলে সকল সম্পত্তির মালিকানা তারা দাবি করছেন। অথচ ওয়ারিশ হিসেবে আমি, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করছি। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, সেনবাগের ইউএনও, পৌরসভার মেয়রসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।

আলাউদ্দিনের মেয়ে সুমাইয়া ঢাকা পোস্টকে বলে, আমি সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকি। আমার ভাই ফ্রান্সে থাকেন। আমি আর মা দেশে এসেছি। এখানে আমার ভয় হয়। আমার বাবা নেই বলে আমরা কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। আমি সবার কাছে সাহায্য এবং নিরাপত্তা চাই।

রোজ ভবনে ভাড়া থেকে মিসবাহুল কোরআন নামের একটি মাদরাসা পরিচালনা করে আসছেন মাওলানা আবদুল্লাহ আল মিজান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়ির মালিক আলাউদ্দিন সাহেব ভাড়া নেওয়ার জন্য তার ভাতিজা আজাদকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা সকল ভাড়াটিয়া আজাদের কাছে ভাড়া দিতাম। মালিক দেশে এলে তার হাতেও দিতাম। তবে মালিক মারা যাওয়ার পর উনার স্ত্রী আফরোজা বেগম এবং আজাদ উভয় ভাড়া দাবি করেন। আমরা জানি স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী সন্তান মালিক হয়। তবে উনাদের মধ্যে সমন্বয় না আসা পর্যন্ত আমরা দুই মাস ধরে ভাড়া দিচ্ছি না।

অসিয়তনামা সত্য দাবি করে নুরুল হুদা আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাচা আমাকে অসিয়তনামা দিয়ে গেছেন। আমার চাচি যা বলছেন তা সত্য নয়। আমি দুইটা মামলা দায়ের করেছি। বিষয়গুলো আদালতে বিচারাধীন আছে। উনার অভিযোগ সত্য হলে আদালত যা রায় দেবেন আমি তা মেনে নেব।

মেয়ের সঙ্গে আফরোজা বেগম

সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু নাছের ভিপি দুলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মহোদয় আমাকে ফ্রান্স প্রবাসী নারীর বিষয়টি দেখতে বলেছেন। আমি উনাকে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেছি। তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। উভয় পক্ষকে ডাকা হবে। সেখানে কাগজ দেখে যা সঠিক হয় আমরা তাই করবো। কাগজের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।

এ বিষয়ে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তবে আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে উভয় পক্ষ থেকে বিষয়টি শুনতে হবে। যেহেতু জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় তাই এটি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা একটা মানবিক আবেদন। আফরোজা বেগম আমার কাছে এসেছিলেন। আমি মেয়র সাহেবকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য। এখানে একটা প্রতারক চক্র কাজ করছে বলে আমরা ধারণা করছি।