ব্রেকিং:
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া? কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি
  • রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণের নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

প্রতি গ্রুপে ৫০ জন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আছে শিশুসহ ১৬ জন

প্রতি গ্রুপে ৫০ জন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আছে শিশুসহ ১৬ জন

ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দলগতভাবে সংগঠিত করে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষে সরকার ওখানকার রোহিঙ্গাদের সেলাই, হাস-মুরগীপালন, মৎস্য চাষ, গবাদি-পশু পালন ও জনসচেতনতাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। এ প্রশিক্ষণ পরিচালনায় চিপ কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে রয়েছেন বিআরডির প্রকল্প পরিচালক শংকর কুমার পাল। রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণের এ প্রকল্পটি প্রথম থেকেই আনুষাঙ্গিক মালামাল ক্রয় ও ভুয়া প্রশিক্ষনার্থীর নামে চলছে লক্ষ লক্ষ টাকা হরিলুট।

বিআরডিবি সূত্রে জানা যায়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সেলাই, হাস-মুরগীপালন, মৎস্য চাষ, গবাদি-পশু পালন ও জনসচেতনতাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষে দীর্ঘ মেয়াদি একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি ব্যাচে ২৫০ জন রোহিঙ্গা অংশ নেওয়ার কথা।  ৫০ জন নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরী করে পাঁচটি গ্রুপের সমন্বয়ে পাঁচটি কক্ষে পাঁচ দিন ব্যাপী ২৫০ জনের ব্যাচ পরিচালনা করা হয়ে থাকে।  এভাবে এ যাবৎ ৪ টি ব্যাচের অর্থাৎ ১ হাজার রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে এ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। পরবর্তী বরাদ্ধ আসলে পর্যায়ক্রমে প্রতি রোহিঙ্গা পরিবারকে এ প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কথা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথম দিন ৩শ টাকা মূল্যের একটি ব্যাগ, ১০টাকার একটি কলম ও ৪০ টাকার একটি খাতা সরবরাহ করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৭০ টাকা মূল্যের ব্যাগ, ৩ টাকার কলম ১০ টাকা মূল্যের খাতা প্রদান করা হয়েছে। প্রতি ব্যাচে প্রথম দিন প্রশিক্ষণ সামগ্রী পাওয়ার আশায় ২৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী উপস্থিত থাকলেও পরদিন থেকে উপস্থিতির হার ১শত থেকে ১২০ জনে নেমে আসে। ১৬ ফেব্রুয়ারী এ প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে জানেছে এদিন ২৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীর স্থলে মাত্র ৮০ জন ও পরদিন (বুধবার) শিশুসহ ৯০ জন উপস্থিত ছিলেন।  আয়োজক কর্তৃপক্ষ কৌশলে প্রথম দিনই পাঁচ দিনের উপস্থিতির ঘরে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। শেষ ৪ দিন উপস্থিতি অর্ধেক বা তার চেয়ে কম হলেও ২৫০ জন উপস্থিত দেখিয়ে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর সকালের নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ ও বিকালের নাস্তাসহ ৩ বেলা খাবারের ভাউচার করা হয় ৩৬০ টাকা। স্থানীয় ফ্রেন্ডশিপ-২ হোটেল থেকে মাত্র ১২০ টাকার চুক্তিতে এ ৩ বেলার খাবার কেনা হয়। প্রশিক্ষণার্থীর প্রতি ব্যাচের খাবার থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা হারে ৪টি ব্যাচ থেকে খাবার বিল থেকেই প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রথমে এসব প্রশিক্ষক ৬ মাসের জন্য নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশিক্ষক অনেকে তাদের প্রাপ্য ভাতা থেকে প্রকল্প পরিচালককে কমিশন দিতে অস্বীকার করায় প্রথম ব্যাচ শেষে তাদের মধ্যে অনেককে বাদ দিয়ে কমিশন আদায়ের মুখিক চুক্তিতে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। এদের জনপ্রতি ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিটি ক্লাসের জন্য ১৫শত  টাকা করে। এছাড়া এদের পিছনে বহন করতে হচ্ছে প্রচুর টাকার টিএ  বিল ।  এ ২০ জন প্রশিক্ষকের জন্য ২০ টি কমপোর্ট কম্বল কেনা হয়েছে ৮ থেকে ৯ শত টাকা মূল্যের। অথচ এসব কম্বলের মূল্য ধরা হয়েছে ২২ শত টাকা। স্পট কোটেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের যাবতীয় মালামাল ক্রয়ের নিয়ম থাকলেও সব মালামাল সরবরাহ করেছেন প্রকল্প পরিচালক শংকর কুমার পাল নিজেই।

এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান হাতিয়া কন্ঠকে জানান, আমি এখানে (ভাসানচর) এসেছি প্রশিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতে। প্রশিক্ষণার্থীর উপস্থিতি ও আর্থিক বিষয়ের সাথে আমি সরাসরি জড়িত নয়, সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে ঢাকা হেড অফিস থেকে প্রকল্প পরিচালক শংকর বাবু। আপনি উনার সাথে যোগাযোগ করুন।

হাতিয়া পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাও একই কথা বলে পরে যোগ করেছেন, দুর্গম এলাকা, আসা-যাওয়া ব্যয়বহুল। তাই একটু এদিক সেদিক করে পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক শংকর কুমার পাল হাতিয়া কন্ঠকে অভিযোগগুলো অস্বীকার না করে পাল্টা এ প্রতিবেদককে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়ে বিব্রত করার চেষ্টা করেন। আপনাকে এসব কে বলেছে ? তার নামটি জানতে পারি ? আপনাদের উপজেলা চেয়ারম্যান লিটন ও লিটনের ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুব আমার খুব কাছের বন্ধু ! প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে আপনাদের হাতিয়ারই আরডিও ও এআরডিও। তাদের স্বাক্ষরে সব কাজ হচ্ছে। আপনি তাদের কাছ থেকে প্রকল্প বিষয়ে খবর নেন। আমি এসব অনিয়মের কিছুই জানি না।

হাতিয়া পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শরীফ বলেন, ভাই, আমি উর্ধতন বসের চাপে আছি, তাই উনি যখন যা চাচ্ছেন তখন আমি তাই করতে বাধ্য হচ্ছি। এছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। তাই এ বিষয়ে জানতে হলে আপনি পিডি’র সাথে যোগাযোগ করুন।

রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণের নামে চলছে হরিলুট এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অপ্রাসঙ্গিক আরো একটি চাঞ্চল্যকর অসামাজিক ঘটনা। প্রশিক্ষক রংপুরের উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা লিটন মোহন দে প্রশিক্ষণের ফাঁকে প্রশিক্ষণ সহায়ক বিআরডিবির এক মহিলা মাঠকর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে ভাসানচরে হৈ চৈ পড়ে যায়। ভিকট্রিম সাথে সাথে তাঁর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যুগ্ম পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালককে জানায়। প্রকল্প পরিচালক এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে মিমাংশায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। এতে পরবর্তীতে ভিকটিম সামান্য কিছু টাকা নিয়ে এ বিষয়ে না দাবি জানান। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টির সত্যতা পেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে লিটনকে প্রশিক্ষক থেকে অব্যাহতি দিয়ে রংপুর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ও ভিকটিমকে ভাসানচর থেকে প্রত্যাহার করে তার পূর্বের কর্মস্থল সুবর্ণচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের এ প্রকল্পে ৪ ব্যাচে ১ হাজার রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণে ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে আরো ৪ ব্যাচ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে মঙ্গলবার আরও ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্ধ এসে পৌঁছেছে স্থানীয় বিআরডি ব্যাংক একাউন্টে। এত বড় বিশাল প্রকল্পটিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দলগতভাবে সংগঠিত করে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।