ব্রেকিং:
তেলের দাম বাড়াল সৌদি ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি, আ.লীগ নেতাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার নোবিপ্রবিতে চালু হলো প্রথমবারের মতো পিএইচডি প্রোগ্রাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মাসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া? কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
  • মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চাটখিলের উজ্জ্বল নক্ষত্র আ ফ ম মাহবুবুল হক

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

ষাট ও সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতির এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আ ফ ম মাহবুবুল হক ছিলেন লড়াই আর নৈতিকতার আদর্শ। যাদের আলোয় আলোকিত চাটখিলের এই ছোট উপজেলাটি। তাদেরই একজন আ ফ ম মাহবুবুল হক। জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রথমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থী ছাত্রলীগের প্রিয় নেতা এবং পরে জাসদ ও বাসদের নেতা হিসেবেই আ ফ ম মাহবুবুল হক খ্যাত হন এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাসদ (মাহবুব) অংশেরই নেতা ছিলেন। ১৯৮৩ সালে এই অংশের কেন্দ্রীয় আহবায়ক হিসেবে তিনিই ছিলেন মূল নেতা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং পাঁচ দল গঠনেও তিনি ছিলেন অন্যতম একজন।

তবে ছাত্রনেতা হিসেব তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় একজন। ষাটের দশকে যে সব ছাত্রনেতা অসম্ভব মেধা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা দেখিয়ে সবার মন জয় করেছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি ১৯৬২ সালে স্কুল জীবনে শরীফ কমিশনের প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ সূর্যসেন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

৬৮-৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, ’৬৯-৭০ সালে কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ’র অন্যতম প্রশিক্ষক ও ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা সম্মেলন করলে তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধ অংশের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি এই অংশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে দ্বিতীয় ডাকসু নির্বাচন। জাসদপন্থী ছাত্রলীগের তখন একচ্ছত্র অবস্থান দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে। ডাকসুতে জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে আ ফ ম মাহবুবুল হক ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। এই নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী ছাত্রলীগ কর্তৃক ছিনতাই হয়ে গেলে আ ফ ম মাহবুবুল হক ভিপির মুকুট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। ১৯৭৮-৮০ সালে জাসদের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। এরপর জাসদ ভেঙে বাসদ হলে তিনি বাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। সর্বশেষ বাসদ রাজনীতির সাথেই তার সম্পৃক্ততা ছিল।

তিনি কখনো ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্গে আপোস করেননি। সারাজীবন মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন তিনি। দেশের রাজনীতিতে মাহবুবুল হক সাহস, সততা, সত্যবাদিতা, দেশপ্রেমের এক দুর্লভ দৃষ্টান্ত। তার রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অনন্য।

আজকের আদর্শহীন ও ক্ষমতালোভী রাজনীতিতে তার মতো আপোসহীন নেতার বড় প্রয়োজন। ৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের মুহসিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র আব্দুর রউফ নিশতার। এর আগে ছিলেন ডাকসুর প্রতিনিধি।

শুধু শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আর তাই ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সমষ্টিগত স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ধনসম্পত্তি নয়, কেবলই লড়াই আর নৈতিকতাটুকই রেখে গেলেন তিনি।

এটা ঠিক রাজনীতিতে আ ফ ম মাহবুবুল হক বরাবরই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন। ৭৩ সালে ডাকসুর ভিপির মুকুট পেলে এই অকুতোভয় মানুষটি সমাজ পরিবর্তনে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো রাখতে পারতেন। একইভাবে ৯১ সালে যদি নিজ এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারতেন তাহলেও রাজনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনে তিনি আরেকটি ঝাঁকুনি দিতে পারতেন।

ষাট ও সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতির এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আ ফ ম মাহবুবুল হক পরলোক গমন করেন ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর। ওইদিন সকালে কানাডার অটোয়ার সিভিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এতে চাটখিলবাসী হারালো একজন গণ মানুষের নেতা ও গর্বিত সন্তানকে। আজ বছর ঘুরে তার মৃত্যুবার্ষিকী আসলেও স্মরণ করা হয় না। তাই সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন, মৃত্যুর পর যদি ভালো রাজনীতিবিদদের স্মরণ না করা হয় তাহলে নিঃস্বার্থ রাজনীতিবিদ তৈরি হবে না। তাই আগামীতে চাটখিলবাসী যেন এই বরেণ্য রাজনীতিবিদকে স্মরণ করেন এটাই সকলের চাওয়া।