ব্রেকিং:
নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মাসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া? কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা
  • রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

নৌকায় ভাগ্য বদল সৌরভ মাঝির

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২০  

নৌকায়ও ভাগ্য বদলানো যায়, দেখা যায় সচ্ছলতার মুখ-কথাটি প্রমাণ করেছেন লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাট নদী পাড়ের চা দোকানদার সৌরভ মাঝি।
একসময় তিনি নৌকায় করে নদীতে নদীতে ভাসমান ছিলেন। দিয়েছেন মানতা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব। ভাগ্য পরিক্রমায় সেই তিনি আজ ডাঙায়। একটি নৌকা পাল্টে দিয়েছে তার জীবন। আছে এক টুকরো জমি, ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার স্বপ্ন এখন- নদীতে নয়, ডাঙায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং সন্তানদের সুশিক্ষিত করার।
সৌরভ মাঝি (৪৫) চাঁদপুর জেলার মৃত আরব আলীর ছেলে। একসময় সমতল ভূমিতে ঘর ছিল তাদের। কিন্তু সেটি তার জন্মের প্রায় ১২ বছর পূর্বে মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই বসবাস নৌকায় ভাসমান জেলেদের (মানতা) সঙ্গে। তার জন্ম, বিয়ে, সংসার সবটাই নৌকায়। আর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পেশাও ছিল নদীতে মাছ ধরা।
তিনি জানান, নদীতে মাছ ধরা শেষে বিকালে ঘাটে ফিরতেন। সে সময় নদী পাড়ে থাকতো পর্যটকদের ভিড়। তারা নৌকায় নদীতে ঘুরতে চাইতেন। ক্লান্তি ও মাছ বিক্রির ব্যস্ততায় তা সম্ভব হতো না। এছাড়া ধারণা ছিল, মাছ শিকার তার কাজ, মানুষকে ঘুরানো নয়।
জেলাজুড়ে নেই বিনোদনের ভালো ব্যবস্থা। তাই প্রতিনিয়ত প্রায় সকল বয়সীরাই দলে দলে আসেন সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট ফেরি ঘাটে। নদীর ও তীরবর্তী চরের সৌন্দর্য দেখতে। আনন্দ কুড়াতে। কেউবা যান নদীতে নৌকায় ঘুরে বেড়াতে। তবে সেখানে ছিল না কোন নৌকা ঘাট। তাইতো বিনোদনের ষোলকলা পূরণ হতো না ভ্রমণ পিপাসুদের।
সৌরভ মাঝি বলেন, পর্যটকদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেই নিজের ছোট নৌকায় করে মানুষদের নদীতে ঘুরানোর। কখনো দুপুর থেকে বিকাল। আবার কখনো সন্ধ্যা পর্যন্ত। তাতে ভালো টাকা আসে। যা মাছ বিক্রির চেয়েও বেশি। আয় বেশি হওয়ায় একপর্যায়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। সারাদিন মেঘনায় মানুষদের ঘুরিয়েছি। এছাড়া চরগুলো থেকে কৃষকদের ফসল আনা-নেওয়াও করতাম।
তিনি বলেন, কিছুদিন পর নতুন আরেকটি নৌকা কিনলাম। অন্য একজন মাঝি দিয়ে সেটি চালিয়েছি। পরবর্তীতে তাকে দেখে একে একে আরো ১৬ জন মাঝি কাজটি শুরু করেন। একসময় সকল মাঝি একত্রিত হন। গঠন করেন একটি সমিতি। যার নিয়মানুসারে পরিচালিত হতো ঘাটটি। তাছাড়া সমিতির প্রধান ছিলেন তিনি।
সৌরভ মাঝি জানালেন, দুইটি নৌকার আয় দিয়েই সংসারে সুখ ফিরে তার। পাশাপাশি কিছু টাকা সঞ্চয় করেছেন। জমানো ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২০১১ সালে মজু চৌধুরীর হাট এলাকায় ১২ শতাংশ জমি কিনেছেন। এর ৪ বছর পর ওই জমিতে একটি পাকা ঘর তুলেছেন। পরিবার নিয়ে এখন তার ডাঙায়ই বসবাস। এ ছাড়াও সৌরভ মাঝি ২০১৯ সালে আরো ২ শতাংশ কিনেছেন। তিন ছেলের বাবা সৌরভ মাঝির স্বপ্ন এখন সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করার। যদিও একসময় আর্থিক সংকটের কারণে বড় ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারেননি।
তার প্রতিষ্ঠিত ঘাটটি বর্তমানে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ভাগ্নের দখলে। তাই নৌকা ছেড়ে নদী পাড়ে চাযের দোকান দিয়েছেন। দোকানেও ব্যবসা জমজমাট। নদী থেকে ডাঙায় ফিরে গেলেও, মানতারা তাদের বহরের সর্দার হিসাবে তাকেই রেখেছেন।
সৌরভ মাঝি নৌকায় নিজের ভাগ্যের বদল ঘটালেও তিনি এখন আর নৌকা চালান না। দুটো নৌকাই বিক্রি করে দিয়েছেন। তবু মানতা সম্প্রদায়ের জন্য মন কাঁদে তার।
তিনি বলেন, ভাসমান জেলেরা নদীতে যে টাকা আয় করেন তার বেশিরভাগ চলে যায় নৌকা ও জাল মেরামতে। তাই সঞ্চয় বলতে কিছু থাকে না তাদের। এজন্য যুগ যুগ ধরে তারা নদীতে ভাসমান থাকছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ডাঙায় ফিরতে পারেন না।
তবে তিনি মনে করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে ডাঙায় আবাসস্থলের ব্যবস্থা করলে, মানতা সম্প্রদায়ের মানুষেরা একটা নিশ্চিত সুন্দর জীবন ফিরে পেতো।