ব্রেকিং:
নোয়াখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি, আ.লীগ নেতাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার নোবিপ্রবিতে চালু হলো প্রথমবারের মতো পিএইচডি প্রোগ্রাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মাসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া? কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী
  • বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

লক্ষ্মীপুরে মুজিব কিল্লা নির্মাণের স্থান নির্ধারন

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৯  

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংরী ঘূর্নিঝড়ের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শনের অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম আসেন বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির পোড়াগাছা এলাকায়।

স্বাধীনতার পরও তিনি ৭০’র প্রলয়ংরী ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও মানুষের পশু-সম্পদের নুন্যতম আশ্রয়ের নিমিত্তে স্বেচ্ছাশ্রমে দেশের প্রথম মাটির কিল্লা নির্মাণ করেন সেই রামগতিতে। যা পরে শেখের কিল্লা বা মুজিব কিল্লা নামে সু-পরিচিত পায়।

১২ নভেম্বর প্রলয়ংরী ঘূর্নিঝড়ে নিহতদের স্মরণ এবং সেই স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সুরক্ষা লক্ষ্যে সরকার বহুবিধ সুবিধা সম্বলিত কমপ্লেক্স নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত স্থান পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর-৩ সংসদ সদস্য শাহাজাান কামাল এমপি, ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীন গুচ্ছগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প (সিভিআরপি) ২য় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড: এম অলি উল্লা (উপ-সচিব), প্রকল্প প্রকৌশলী মো: মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা, , উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল মোমিন, পৌর মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুচিত্র রঞ্জন দাস, উপজেলা আ’লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, সাধারন সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজাদ ভূঞা প্রমূখ। পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তাগণ স্থানীয় জনগনের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদিপশু রক্ষায় ২০১৮ সালে সারােদেশে ৩৭৮টি বিশেষ ধরনের এসব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ওই আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর নাম হবে

 ‘মুজিব কিল্লা’। এজন্য ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় স্বাধীনতা পূর্ব-উত্তর সময়ে নির্মিত ১৭২টি মুজিব কিল্লা সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। একই সঙ্গে কয়েক লাখ গবাদিপশুসহ বিভিন্ন প্রাণি মারা যায়। এজন্য স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু ঠাঁইয়েরও ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় নির্মিত হয় বলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ‘মুজিব কিল্লা’ নামে পরিচিতি পায়।

সমতল থেকে উঁচু গড়নের এসব আশ্রয় কেন্দ্র বেশিরভাগই ছিল মাটির তৈরি। তাই এগুলোকে মাটির কিল্লাও বলা হতো। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নির্মিত এসব কিল্লা ক্ষতিগ্রস্ত ও বেদখল হয়ে পড়ে আছে। এজন্য সরকার বিদ্যমান কিল্লা সংস্কার ও নতুন কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

তিন সুবিধার কথা মাথায় রেখে মুজিব কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রথমত, দেশের বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

দ্বিতীয়ত, সাধারণ আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশুর জন্য তেমন জায়গা থাকে না। ফলে গৃহপালিত পশু-পাখির ক্ষতির কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়ে। এখানে সেসবের ব্যবস্থাও থাকবে।

তৃতীয়ত, বন্যার সময় মানুষ সাধারণত কোনো বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়। এতে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কিল্লায় মানুষ তাদের ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়িও নিয়ে এসে সাময়িক আশ্রয় নিতে পারবে। এ কিল্লা মানুষ এবং গৃহপালিত পশুর আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করা হবে। অন্য সাধারণ আশ্রয় কেন্দ্রে সঙ্গে এর পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত এসব কিল্লা ভূমি থেকে বেশ উঁচু করে গড়ে তোলা হবে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা দুর্যোগে সেখানে যেন পানি প্রবেশ করতে না পারে। আর এগুলো আকারেও অনেক বড় হবে। ফলে বন্যার সময় মানুষকে বেড়িবাঁধ বা অন্যান্য স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে হবে না।

তাছাড়া স্বাভাবিক মৌসুমে এটি সাপ্তাহিক বা দৈনন্দিন বাজার হিসেবেও ব্যবহার হবে। আবার কিল্লায় স্থায়ী পাকা ভবনও তৈরি করা হবে; যা প্রয়োজনের সময় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। আকারে বড় হওয়ায় এটি শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠসহ নানা সামাজিক সমাবেশের কেন্দ্রস্থল হিসেবেও গড়ে উঠবে। এক কথায় বহুমুখী ব্যবহারের কথা ভেবেই এসব কিল্লার ডিজাইন করা হয়েছে।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে উপকরণ স্বল্পতায় কিল্লাগুলো মাটি দিয়ে তৈর করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো কয়েকটি সংস্কার ও তাতে ইটের ব্যবহার করা হয়। তবে এখন নতুন করে যেসব কিল্লা নির্মাণ করা হবে, সেসব কিল্লায় মাটির উঁচু টিলার ওপর ইট ও কাঠের স্থাপনা তৈরি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে এগুলো নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় তিন ক্যাটাগরিতে মোট ৫৫০টি কিল্লা নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত ১৮১টির মধ্যে নতুন নির্মাণ ১২৬টি এবং সংস্কার করা হবে ৫৫টি। এগুলোর প্রতিটিতে একটি মাঝারি আকারের প্রাণিসম্পদ শেডও রাখা হবে।

‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত ১৭৫টির মধ্যে নতুন নির্মাণ ১১৩টি এবং সংস্কার করা হবে ৬২টি। প্রতিটি কিল্লায় একটি বড় প্রাণিসম্পদ শেড রাখা হবে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির ১৯৮টির মধ্যে নতুন নির্মাণ ১৩৯টি এবং সংস্কার করা হবে ৫৫টি।

প্রতিটিতে একটি বড় প্রাণিসম্পদ শেড ও তিন তলাবিশিষ্ট আশ্রয় ভবন থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ২৭৫ কিলোমিটার সংযোগ রাস্তা, সোলার প্যানেল ও নলকূপ স্থাপন করা হবে। সাতটি বিভাগের উপকূলীয় ও বন্যাপ্রবণ ৩৮টি জেলা এলাকায় এসব কিল্লা নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলা;

বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা;

খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল জেলা;

ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ;

রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও রাজশাহী জেলা;

রংপুরের গাইবান্ধা, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা;

সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলায় এ কিল্লাগুলো নির্মাণ করা হবে।