ব্রেকিং:
নোবিপ্রবিতে চালু হলো প্রথমবারের মতো পিএইচডি প্রোগ্রাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মাসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া? কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মামুনুল হক শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয়? সরাসরি মুসলিমদের নিশানা বানিয়ে ভোটের প্রচারে মোদি দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ
  • সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সৌদি আরবে গিয়ে মৃত্যু, লাশ ফিরিয়ে আনার আকুতি পরিবারের

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২৩  

‘আমার হানিফরে আমার কাছে আইনা দেন, তাকে আমি প্রাণভরে একবার দেখতে চাই। আমার ছেলে সংসারের বোঝা মাথায় নিতে সৌদি আরব গেছে। আমি তিন জায়গা থেকে কিস্তি নিয়ে তারে বিদেশ পাঠাইছি। তারে বিদেশ পাঠাইতে আমার মেয়ের স্বর্ণ-গয়না বিক্রি করছি। সেখানে আমার ছেলেরে মেরে ফেলছে। তার লাশ আমি কেমনে আনমু? আমি যে তারে এক নজর দেখতে চাই’ এভাবেই বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের আবদুল্যাহপুর গ্রামের আবদুল মোতালেব। 

জীবিকার সন্ধানে নোয়াখালী থেকে দালালের মাধ্যমে সৌদিআরবের আভা শহরে গিয়ে প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আবদুল মোতালেবের বড় ছেলে মো. হানিফের (৩৪) মৃত্যু হয়। গত ১৬ জুন সৌদিআরবের রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর সেখানে বসবাসকারী নিকটাত্মীয়রা মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে। ফলে নিহত হানিফের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাড়িতে নিহত হানিফের বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানরা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন।

নিহত হানিফের পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা হানিফ অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকে নির্মাণ শ্রমিকের (রাজমিস্ত্রি) কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চলতি বছরের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে সৌদিআরবে বসবাসকারী তার বড় বোনের শ্বশুর মোহাম্মদ শহিদ উল্যাহ তাকে উন্নত জীবনের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে সৌদিআরব নিয়ে যান। তার পাসপোর্ট নম্বর ইবি ০১৭৭০২৬। তাকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী এনজিও থেকে লোন নিয়ে ও বোনের স্বর্ণ গয়না বিক্রি করে শহিদ উল্যাহকে চার লাখ টাকা দেন। 

সৌদিআরব যাওয়ার পর তাকে রাজমিস্ত্রির কাজ না দিয়ে আভা শহরে ভেড়া চরানোর চাকরি দেওয়া হয়। যে মালিকের অধীন তাকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল ওই ব্যক্তি তাকে নানা ধরনের শারিরিক নির্যাতন করতো। বিষয়টি তার আত্মীয় শহিদকে জানানোর পর তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সেখানে নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৬ জুন রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একইদিন স্থানীয় সময় বিকেল তিনটায় হানিফ মারা যান।

হানিফের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘আমরা চার ভাই এক বোন। আমার ভাই হানিফ সবার বড়। সংসারের হাল ধরতে তিনি বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। অল্প বয়সে রাজমিস্ত্রির কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দেশে থাকতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেই সংসার চালাতেন। আমার বৃদ্ধ বাবা-মাসহ আমরা সবাই তার আয়ের উপর নির্ভর ছিলাম। এছাড়া তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের ভরণপোষণ ও তিনি করতেন। আমার বোনের শ্বশুরের দেখানো প্রলোভনে পড়ে তিনি সৌদি আরব যান। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে।’

হানিফের বাবা আবদুল মোতালেব কান্না করতে করতে বলেন, আমার সব শেষ। আমার হানিফের স্বপ্ন ছিলো আমাদের ভালো রাখবে। কিস্তি নিয়ে সে বিদেশ যায়। প্রথম দুই মাস বেতনের টাকা বাড়ি পাঠায়। এরপরই তো সে মারা যায়। আমি কিস্তির টাকা কিভাবে শোধ করবো। শুনেছি তার লাশ আনতে অনেক টাকা লাগবো। আমি টাকা পাবো কই? আমি যে আমার ছেলেকে এক নজর দেখতে চাই। বলেই আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

হানিফের মেঝো ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমাদের আত্মীয় শহিদ উল্যাহকে তার লাশ দেশে আনার কথা বললে তিনি উল্টো ক্ষেপে যান। এ নিয়ে কাউকে কিছু বললে তিনি আমাদের ক্ষতি করার হুমকি দেন।

নিহত হানিফের ছোট বোন বিবি মরিয়ম বলেন,আমার ভাই হানিফ দেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালাতেন। বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ, স্ত্রী আফিয়া খাতুন ও তিন সন্তানের খরচ জোগাতেন। তাঁর বড় ছেলে মেহেদী হাসান পঞ্চম শ্রেণীতে, ছোট ছেলে নূরানী মাদরাসয় প্রথম জামায়াতে পড়ে। একমাত্র মেয়ে উম্মে জয়নবের বয়স আড়াই বছর।

অভিযুক্ত শহিদ উল্যাহর বক্তব্য জানার জন্য সৌদিআরবে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিবার ফোন ও মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি এবং মেসেজের রিপ্লাই দেননি। তাই অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সহিদ উল্যাহ প্রায় ১৫ বছর ধরে সৌদিআরব বসবাস করছেন। দীর্ঘ এই সময় ধরে তিনি একবারের জন্যও দেশে আসেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু ছালেক বলেন, নিহত মো. হানিফ যদি বৈধ পথে সৌদিআরব গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে বিনা খরচে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ নিয়ম অনুযায়ী সরকারিভাবে দেওয়া ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।