ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস আজ

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২১  

পুরো মার্চ মাসই বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মাস। মার্চের প্রতিটি দিনই রচনা করেছে কোনো না কোনো ইতিহাস। এই মাসেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ রোপণ হয়েছিল। ২ মার্চ বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত একটি জনসভাতেও স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। ওই সভায় তিনি না থাকলেও যেন বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন না থেমে থাকে সে জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর টালবাহানা এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠেছিল পুরো দেশ। ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার।স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ। বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে ছাত্রসমাজ।

 

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ

তখন থেকেই ৩ মার্চ পালন করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস। বঙ্গবন্ধু ওই সভায় বলেছিলেন, ‘আমি মরে গেলেও সাত কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকার স্বাধীন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি না-ও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে।’

একাত্তরের ৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানান। পরদিন ৪ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক এবং আজাদে সভার বিস্তারিত ছাপা হয় ।

জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলায় উদ্বেলিত মানুষ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড়, মুক্তিবাহিনী গঠন কর’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে।

নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয় । জনসভায় বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান এবং ডাকসু নেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন।

 

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি না-ও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি না-ও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে।

ড. মোহাম্মদ হান্নান তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু এদিন ভাষণে অফিস আদালতে যাওয়া এবং কর খাজনা দেয়া বন্ধ রাখতে বলেন। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করলে তিনি তা মান্য না করার নির্দেশ দেন।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দানবের সাথে লড়াইয়ে যেকোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজন বোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করব না।’

এর আগে ৩ মার্চ রাজনৈতক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় পাকিস্তানের নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি বৈঠক ডাকেন। আমন্ত্রিতদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন- পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তান পিপলস পার্টি থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে খান আবদুল ওয়ালী খান, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইউম) থেকে খান আবদুল কাইউম খান, মুসলিম লীগ কাউন্সিল থেকে মিয়া মোমতাজ দৌলানা প্রমুখ ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই রাজনৈতিক সভাকে বন্দুকের নলের মুখে ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, কবি এবং সাংবাদিক আবুল মোমেন ৩ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আগে থেকে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি এদিনের জনসভাতেও স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি এনেছিলেন। যদিও জোরালোভাবে তা উচ্চারিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে।

সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, অনেক আগে থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচিত হলেও সত্তর দশকে এবং আগে সংগঠিত নানা আন্দোলন সংগ্রামে স্বাধীনতার প্রত্যাশাটি আরো বেশি জোরালো হয়ে উঠে। স্বাধীনতার প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনুধাবন এবং পাকিস্তানীদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য ৩ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধানতার প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন বলে মনে করেন আবুল মোমেন।

পল্টনের সভা থেকে এ দিন ৪ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানানো হয়। ৫ মার্চ বায়তুল মোকারম থেকে একটি লাঠি মিছিল বের করারও কর্মসূচি ঘোষিত হয়।

এদিকে ৩ মার্চ সারা দেশে পূর্ণ হরতাল শেষে ঢাকা, চট্রগ্রাম, রংপুর ও সিলেটে গোলযোগ হয়। পরদিন দৈনিক আজাদের খবরে বলা হয়, এদিন রাজশাহীতে টেলিফোন অফিসের সামনে সামরিক বাহিনীর গুলিতে আহতদের স্থানীয় মুসলীম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। এ সময় আহতদের কয়েকজন ব্যাংকের দেয়ালে তাদের দেহ থেকে নিঃসরিত রক্ত দিয়ে ‘বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ কথা লেখেন।