ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পরকীয়া প্রেমিককে ৫ টুকরো করে পাশে বসা ছিলো প্রেমিকা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের একটি বাড়ির চারতলার ছোট্ট কক্ষে মধ্য বয়সী এক নারী একটি মরদেহ পাঁচ টুকরো করে তার পাশে ভাবলেশহীনভাবে বসে রয়েছেন। পুরো ঘর রক্তাক্ত।  

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর বেরিয়ে এলো গোপনে পরকীয়া প্রেমিক সজিবের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শাহনাজ।

এই সম্পর্কের জের ধরে সজিবের আরো কিছু অপকর্ম শাহনাজ জানতে পারেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান তারা। শেষ পর্যন্ত শাহনাজ একাই বাসার ভেতর সজিবকে হত্যা করে মরদেহ নিয়ে বসে ছিলেন।

পাঁচ বছর আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন পরিবহনকর্মী সজিব হাসান ও শাহনাজ পারভীন। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ আকস্মিক সজিবের বাসায় অভিযান চালানোর পর যে দৃশ্য দেখা যায় তাতে বাড়ির মালিক ও আশপাশের বাসিন্দারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

পুলিশ শাহনাজকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি সজিবকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, সজিব তার স্বামী নয়। তার স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে। এক মেয়েকে স্কুলে নেয়ার সময় বছর পাঁচেক আগে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফ সজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। প্রথমে টুকটাক কথা হতো। এরপর এক পর্যায়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। তখনই সজিব শাহনাজকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বামীবাগে বাসা ভাড়া নেন। প্রায় প্রতিদিনই দিনের বেলায় সজিবের ভাড়া বাসায় এসে সময় কাটাতেন শাহনাজ। আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় ফিরতেন। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতেন শাহনাজ। তার স্বামী ও সজিবের বাসা ওয়ারীতে।

শাহনাজ পুলিশকে জানিয়েছেন, সজিব তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অন্যদের জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে প্রায়ই টাকা আদায় করতেন। শাহনাজের মেয়ের ওপরও তার কুনজর পড়েছিল। আরো কয়েক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল সজিবের। এটা টের পান শাহনাজ। এর পরও সজিব যে কোনো সময় তাদের সম্পর্ক কাউকে জানিয়ে দিতে পারে- এই ভয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন শাহনাজ। আবার স্বামীর সঙ্গেও শাহনাজের সুসম্পর্ক ছিল না। স্বামী-স্ত্রী দু’জন প্রায়ই ঝগড়ায় জড়াতেন। পাঁচ বছর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রাখলেও শাহনাজের স্বামী তা টের পাননি।

জানা গেছে, গত সোমবার স্বামী ও দুই সন্তান রেখে শাহনাজ পারভীন সজিবের বাসায় গিয়ে ওঠেন। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। পুলিশও জিডির তদন্ত শুরু করে। প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য বিশ্নেষণ করে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে শাহনাজের অবস্থান সজিবের বাসায় বলে নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে সজিবকে হত্যার পর শাহনাজ তার স্বামী জসীমকেও ফোন করে জানান, খুব বিপদে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। জসীমও বিষয়টি পুলিশকে জানান।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে পাঁচ টুকরো মরদেহের সামনে শাহনাজকে বসে থাকতে দেখেন। এরপর ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় মরদেহের পাঁচটি টুকরো। দুই হাত ও দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে মেঝেতে রাখা হয়।

পুলিশ জানায়, শাহনাজ গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে। আর সজিব সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারের স্টাফ ছিলেন। তার স্ত্রীর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না সজিবের। স্বজনরা জানতেন, ঢাকায় এক বয়স্ক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন সজীব।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার হানান্নুল ইসলাম জানান, অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড। স্বামীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহনাজকে সজিব নিজেই তার বাসায় নিয়ে আসেন। সে একজন বহুমুখী প্রতারকও। ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরমে সে নিজের স্ত্রীর নাম ‘মৌসুমী’ বলে জানায়। তবে এই নামে তার কোনো স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে লোকজন এতকাল জানতেন শাহনাজই তার স্ত্রী। চরম ক্ষোভ থেকেই হত্যার পর মরদেহ আবার পাঁচ টুকরো করেছিলেন তিনি। এটা এক ধরনের মানসিক বিকৃতির পরিচয়ও। শাহনাজের এক হাতেও একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হয়তো শাহনাজের আশঙ্কা ছিল সজিব তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাই ঝগড়ার সময় সে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।

পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে সজিবের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উঠেছিলেন। তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সজিব আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সজিব তাকে লাঠিপেটা করেন। এরপর সজিব ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। সজিবের কাছ থেকে তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এরপর ছুরি দিয়ে সজিবের দুই হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। সজিবকে একাই হত্যা করেছেন বলে দাবি শাহনাজের।

ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাজ্জাদ রোমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শাহনাজের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে দিতে বলেন সজিব। বাস কাউন্টারের কাজ ছেড়ে দিয়ে ওই টাকায় সজিব ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে বাদ সাধেন শাহনাজ। 

তাকে জানিয়ে দেন, স্বামীর সংসার ছেড়েছেন তার কারণে। গহনা বিক্রি করবেন না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। শাহনাজের দাবি, সজিব তাকে ছুরি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় তিনি ছুরি কেড়ে  নিয়ে সজিবের পেটে আঘাত করেন। এরপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সজিবের কনুই থেকে দুই হাত ও হাঁটু থেকে দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।

মরদেহের টুকরোগুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। রক্তমাখা ছুরিসহ শাহনাজ পারভীনকে আটক করে ওয়ারী থানায় নেয়া হয়। খণ্ডিত দেহ উপুড় হওয়া অবস্থায় ছিল।