ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ক্ষুধার্ত’ মেঘনার ভাঙন খেলা, বাড়ছে কান্না

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২০  

মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রতিনিয়ত বসতভিটা হারাচ্ছে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দারা। প্রায় ৩৫ বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে যেন ‘ক্ষুধার্ত’ মেঘনা গিলে নিয়েছে উপকূলের ৩৭ কিলোমিটার এলাকার বাড়িঘরসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে হাজারো পারিবারিক বন্ধন। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে নিঃস্ব মানুষের কান্না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউপি থেকে কমলনগর হয়ে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা উপকূল। বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও ফসলি জমিসহ পুরো এলাকারই বিস্তীর্ণ অঞ্চল নদীতে তলিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বাজার, বাড়ি ও পূর্ব-পুরুষের কবর। দিন দিন বেড়েই চলছে নদী ভাঙনের তীব্রতা। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপকূলে আছড়ে পড়া মেঘনার প্রতিটি ঢেউ সর্বনাশ ডেকে আনছে।

এদিকে কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউপির নাছিরগঞ্জ বাজারকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন স্থানীয় একদল যুবক। ২৬ জুন থেকে এ বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় এক হাজার ফুট এলাকায় বাঁশের বেড়া, গাছ, কাঠ দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এটি প্রায় তিন ফুট এলাকায় নির্মাণ করা হবে। তবে এ বাঁধটি শুধু কমলনগরকে বাঁচাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনের খোরাক মাত্র।

মেঘনার তীব্রতায় যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে জঙ্গলা বাঁধটি। নদীর ভাঙন থেকে উপকূলকে বাঁচাতে প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধের। জিও ব্যাগ ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি উপকূলবাসীর।

স্থানীয় যুবকদের জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের বর্তমান এমপি, সাবেক এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাঁধ নির্মাণ। শুক্রবার এ আসনের এমপি ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবসর) আব্দুল মান্নান দুই লাখ টাকা সহায়তা করেছেন।

সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। কিন্তু অরক্ষিত ৩২ কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী শাসনে জনপ্রতিনিধিরা কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে হচ্ছে না।

স্থানীয় সংবাদকর্মী সানাউল্যা সানু বলেন, ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বিদ্যালয় ভবনটির অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়ে।

অন্যদিকে রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউপির বয়ারচরের টাংকি বাজার এলাকায় একটি বিশাল ঝাউবাগান ছিল। বাগানটি সব সময় পর্যটকদের দখলে ছিল।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালের শেষে পুরো ঝাউবাগানটি মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে যায়। বাগানটি এখন কেবলই স্মৃতি। টাংকি বাজারের মাছ ঘাটটি জেলার বৃহৎ একটি ইলিশের হাট হিসেবে পরিচিত। এখানে দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। কিন্তু যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে ঘাটটিও। ভাঙনে সদর উপজেলার বুড়ির খাল এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোক্তা রাকিব হোসেন সোহেল ও জসিম উদ্দিন জানান, নাছিরগঞ্জ বাজারটি রক্ষায় তারা জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। প্রায় এক হাজার ফুট বাঁধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নদীর তীব্র ঢেউয়ে বাঁধটি বিধ্বস্ত। সেটি পুনরায় ঠিক করা হচ্ছে। তিন হাজার ফুট এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তবে এটি দিয়ে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। আপাতত বড় বড় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন যুবকরা।

উপজেলা বিকল্পধারার সাধারণ সম্পাদক আবু ছিদ্দিক বলেন, জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন এমপি আব্দুল মান্নান। কিন্তু এ বাঁধটি সাময়িক, স্থায়ী সমাধান নয়।

কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু বলেন, জঙ্গলা বাঁধ স্থায়ী সমাধান নয়। নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

২০১৪ সালে একনেক সভায় কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাশ হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে চার এবং কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রামগতি-কমলনগর রক্ষা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের শেষে বাতিল করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প জমা রয়েছে।