ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় চলছে ৩৪ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২০  

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান। এ হাসপাতালের সর্বত্রই শুধু নেই আর নেই। নানা সমস্যা আর দুর্গন্ধ ময়লা-আবর্জনা ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হাসপাতালটি যেন দেখার কেউ নেই।

বাথরুমসহ ওয়ার্ডগুলো দুর্গন্ধযুক্ত। হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ পরিত্যক্ত ভবন জুড়ে গরু-ছাগলের বিচরণ। হকার আর সিএনজিচালিত আটোরিকশার দখলে চলে গেছে হাসপাতালের গেটের ভেতরের খালি জায়গা।

হাসপাতালে এক-দুটি ওষুধ ব্যতীত রোগীদের সব ওষুধ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। শুধু নেই আর নেই বলেন নার্স ও ওয়ার্ড ইনচার্জরা। নিম্নমানের সস্তা ও কম খাবার সরবরাহ করে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ তোলেন রোগীরা।

জেলার প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে ৯৫ শতাংশ রোগীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হাসপাতালের প্রবেশ পথে দালালদের ছড়াছড়ি। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট থাকায় সম্প্রতি ৫০টি সিলিন্ডার দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হলেও মুমূর্ষু রোগীরা অক্সিজেন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

রোগীদের অভিযোগ, প্যাথলজি সেন্টারে পিয়ন থেকে কর্মকর্তারা কমিশন বাণিজ্য নিয়ে থাকেন ব্যস্ত। সকাল ও রাতে দুইবার ওয়ার্ডে রোগীদের খোঁজখবর নেয়ার কথা থাকলেও শুধুই সকালে যান চিকিৎসকেরা। নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বার ও প্রাইভেট হাসপাতাল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্যাথলজিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আউটডোরে রোগীর চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টার পর কেউ থাকেন না। আউটডোরে যথাসময়ে চিকিৎসক আসেন না এবং আসলেও কিছুক্ষণ রোগী দেখে চলে যান।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী, তাদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা সেবায় অবহেলার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ নেই। চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশন লিখে দেন, পরে ওষুধ আনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। চিকিৎসকদের চেম্বারের বাইরে থাকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দীর্ঘ লাইন। নিজ কোম্পানির ওষুধ লিখেছেন কিনা তা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিশ্চিত হন তারা। রোগীদের  রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বেশিরভাগ সময় পাঠানো হয় হাসপাতাল এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে।

রোগীদের অভিযোগ, তাদের নিয়মিত দেখতে আসেন না চিকিৎসকেরা। আবার কখনো দেখতে গেলেও রোগের বিস্তারিত শুনতে চান না, কেবল নামেই রোগীর ফাইল দেখেন। এরপর ওষুধ লিখে দিয়ে সেগুলো খাওয়ানোর নির্দেশনা দিয়ে চলে যান।

হাসপাতালে ভর্তি রহমত, আনসার আলী, মাইনউদ্দিন, রিমা আক্তার ও আমেনা বেগম বলেন, আমরা ভর্তি হয়েছি চিকিৎসা সেবা নিতে। কিন্তু উপযুক্ত সেবা মিলছে না। বেশিরভাগ ওষুধ কিনে আনতে হয় বাইরে থেকে। আর সামান্য ওষুধ দেয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। হাসপাতালের বেডগুলো নোংরা হয়ে আছে। বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী। নেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা ৪৬ জন এবং অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সংযুক্ত আছেন ৬ জন। ১১জন চিকিৎসকের পদ শূন্য। পাশাপাশি সেবিকা পদে ৭, আয়া সুইপার পদে ১৩ ও অফিস কর্মচারীদের ৮টি পদে লোকবল নেই।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন জাহানারা ও খাদিজা বেগম বলেন, হাসপাতালের টয়লেটে গেলে দুর্গন্ধে বমি আসে। এখানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী ছানাউল্লাহ ও মোহাম্মদ রফিক জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তারা। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় বেশিরভাগ ওষুধই তাদেরকে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। শুধু ওষুধই নয়, হাসপাতাল থেকে যে খাবার সরবরাহ করা হয় তাও অত্যন্ত নিম্নমানের।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, করোনা সংকটে কোভিড হাসপাতাল ও আইসোলেসন ওয়ার্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অন্য ওয়ার্ডে নজরদারি কম হচ্ছে। আমাদের জনবল কম থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধেরও সংকট আছে। আমরা আরো সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবো।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, হাসপাতালের গেট না থাকার কারণে বাইরে থেকে গরু-ছাগলসহ হকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো হাসপাতালের ভেতরের অংশ এবং পরিত্যক্ত ভবনের ভেতরে অবস্থান নেয়। ভবন এবং গেট নির্মাণ হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে।

হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আসলে হওয়ার কথা নয়। তারপরও যদি কোনো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে, তা খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করা হবে।