ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অরুয়াইল-পাকশিমুলের নৌকার ব্যবসায় ভাটা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২২  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ অরুয়াইল ও পাকশিমুল। এ দুই ইউনিয়নের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। তবে এখানকার অর্থনীতির আমূল পাল্টে দিয়েছে স্টিল বডির নৌকা ও বাল্কহেড ভাড়ার ব্যবসা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে মানুষের ঘরে ঘরে। নৌকা ভাড়ার ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা আয় করে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় অধিকাংশ নৌকা পড়ে থাকছে নদীর ঘাটে। এতে করে মালিকরা যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তেমনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের অর্থনীতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। একসময় এসব মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস ছিল কৃষিকাজ। আর তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের কেউ কেউ অরুয়াইল বাজারে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। তবে নব্বই দশকে ভাগ্য বদল শুরু হয় দুই ইউনিয়নের মানুষের।
অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার স্টিল বডির নৌকা ও বাল্কহেড তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহনের ব্যবসা শুরু করেন। একেকটি নৌকা তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। এসব নৌকা ও বাল্কহেড দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইট, বালু, সিমেন্ট, পাথর ও রডসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়। ব্যবসাটি লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন এতে যুক্ত হন।

এখন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের স্টিলের নৌকা ও বাল্কহেড আছে প্রায় ৫০০। এর মধ্যে শুধুমাত্র রানীদিয়া গ্রামেরই আছে প্রায় ৩০০। একেকটি নৌকা ও বাল্কহেড থেকে ভাড়া বাবদ মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন মালিকরা। নৌকা ভাড়ার এ ব্যবসায় কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় হাজারো বেকার যুবকের।

তবে সম্প্রতি নৌকা ভাড়ার এ ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। মালিকদের আয় নেমে এসেছে অর্ধেকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও নৌপথে চাঁদাবাজির কারণে অধিকাংশ সময় অলস পড়ে থাকছে তিতাস নদীর অরুয়াইল বাজার ঘাটে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর মালিকরা ১৪ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ফলে এখন নৌকায় ভাড়া হচ্ছে কম। এছাড়া পুলিশি হয়রানির অভিযোগও রয়েছে নৌকা মালিক-শ্রমিকদের।

কয়েকজন নৌকার মালিক জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ঘাটে-ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। এতে করে ভাড়ার তুলনায় খরচ মিটিয়ে লাভ হয় না। এছাড়া লাইসেন্সসহ নানা অজুহাতে হয়রানি করে নৌপুলিশ।

রানীদিয়া গ্রামের নৌকা কারিগর দানিশ মিয়া জানান, তিনি নৌকা তৈরি এবং মেরামত করে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করতেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে কাজ অর্ধেক কমে গেছে। বর্তমানে মাসে ১০-১২ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না। এতে করে পরিবার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

রানীদিয়া গ্রামের নৌকার মালিক মুর্শিদ মিয়া জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও নৌকার ভাড়া তেমন বাড়েনি। ১ কোটি টাকা দিয়ে বানানো নৌকা এখন ঘাটে ফেলে রাখতে হচ্ছে। চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির কারণে শ্রমিকরা নৌকা নিয়ে যেতে চায় না। 

আরেক নৌকার মালিক সিরাজ মিয়া জানান, নৌকা ভাড়ার ব্যবসার মাধ্যমে অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের চিত্র পাল্টে গিয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে এই ব্যবসা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর এটি যদি ধ্বংস হয়, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের আর কোনো পথ থাকবে না।

অরুয়াইল স্টিল বডি নৌকা মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবু তালেব বলেন, ‘আমাদের দুই ইউনিয়নের নৌকা মালিকরা ভাড়া বাবদ ৬-৭ কোটি টাকা আয় করেন। কিন্তু এখন ব্যবসায় মন্দা চলছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নৌকার ভাড়া ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতে করে নৌকাগুলোতে ভাড়া হচ্ছে কম। ফলে ঘাটে অলস পড়ে থাকছে অধিকাংশ নৌকা। এছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট ও সুনামগঞ্জের ছাতকসহ কয়েকটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া লাইসেন্সের জন্য পুলিশ হয়রানি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম যদি না কমানো হয় এবং চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ না হলে- নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে করে নৌকা ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে পথে বসবে হাজারো মালিক-শ্রমিক।’

জানতে চাইলে নৌপুলিশের কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘একসময় নৌকা মালিক-শ্রমিক সমিতির নাম করে টোকেনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি হতো। তবে এখন সেটি বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নৌপথ অনেক বিস্তৃত জায়গা। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে দৃষ্টি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা কঠিন। আমাদের নৌযানের স্বল্পতা আছে। এর ফলে মানুষ যেমন প্রত্যাশা করে, তা পরিপূর্ণভাবে নজরদারি করতে পারি না। যদি নৌযানের ঘাটতি পূরণ হয়, তাহলে নজরদারি বাড়ানো যাবে এবং চাঁদাবাজির ঘটনাগুলোর অবসান ঘটবে।’