ব্রেকিং:
লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টিতে ভোটার শূন্য কেন্দ্র সুবর্ণচরে এক বুথে ঘণ্টায় পড়ল ১ ভোট ছেলের বিরুদ্ধে ভোট করলে ইউনিয়নে উন্নয়ন বন্ধ করার হুমকি এমপিপত্নীর নোয়াখালীতে ভোটের আগের রাতে টাকা বিতরণের অভিযোগ আওয়ামী লীগে স্বজনদের নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসী নিহত উপজেলা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি, আ.লীগ নেতাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার নোবিপ্রবিতে চালু হলো প্রথমবারের মতো পিএইচডি প্রোগ্রাম তিন রাত শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট বন্ধ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মাসহ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খরচ হবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়া ফাঁদ সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন বেগম জিয়া?
  • বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দশেরে কিছু দেওয়ার লইগ্যা ধনী অয়া লাগে না

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২০  

'দশেরে কিছু দেওয়ার লইগ্যা ধনী অয়া লাগে না। মনটাই সব মানুষের। মন চাইলে দশের লইগ্যা সব দেওন যায়। আমার কিছু নাই। দুই বছর ধইর‌্যা একটা পাঞ্জামি (পাঞ্জাবি)। এক রোজায় হেইড্যা একজন দান করছিল। দুইড্যা ছ্যাড়া লুঙ্গি। ঘরডা ভাঙা।' গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনে সমকালের সঙ্গে কথোপকথনের সময় আবেগঘন স্বরে এসব কথা বলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গান্ধীগাঁও ইউনিয়নের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম .উদ্দিন। তিনি তার সারা জীবনের সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা স্থানীয় ইউএনওর করোনা তহবিলে দান করেন।

এই সংকটকালে ভিক্ষুক হয়েও নাজিমউদ্দিনের সবটুকু সঞ্চয় দান করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার এই মহৎ উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানান। এই অনুকরণীয় দৃষ্টাল্পত ও মহত্ত্ব নাড়া দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনকেও। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫ লাখ টাকার জমি ও ঘর দেওয়া হচ্ছে তাকে। তার ভিটেমাটি পাকা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

নাজিম উদ্দিন বলেন, 'তিন বছর ধইর‌্যা এক ট্যাহা, দুই ট্যাহা কইর‌্যা জমাইয়্যা ১০ হাজার ট্যাহা অইল। হিতানের বালিশের মধ্যে তা গুইজানো ছিল। ঘর ঠিক করার লইগ্যা এই ট্যাহা গুইজ্যা রাখতাম। করোনা আওয়ার পর চিন্তা করলাম, বুইর‌্যা অইয়্যা গেছি। ৮০ বছরের বেশি বয়স অইল। ঘর দিয়া আর কি করুম। এই অল্প ট্যাহায় ঘরও করার পারুম না। তাই ঠিক করলাম এই ট্যাহা দশেরে দিয়া দেই। করোনার সময় দশের উপকার অইব। ট্যাহা দেওনের পর এহন হকলে আমার খবর নিতে লাগল। হাছানা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নাকি খুব খুশি অইছে। ডিসি স্যার আমারে কইল। আমারে হাছানা ঘর কইর‌্যা দিব। আমারে ট্যাহা দিব। ২০ হাজার টাকা ডিসি স্যার দিছে। আর ভিক্ষা করুম না। হাছানা আমারে ভিক্ষার লইজ্যা থেকে বাছাইছে। হাছানা আমার মা। যতদিন বাঁচুম তারেই মা বলে ডাকুম। আমি তার ছেলে। আমার তো মা-বাপ নাই। হাছানারও নাই।'

নাজিম উদ্দিন সমকালকে জানান, ৭-৮ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন তিনি। এর আগে অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। তবে ড্রেনের ভেতরে পড়ে গিয়ে তার এক পা ভেঙে যায়। তখন থেকে কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাধ্য হয়ে এলাকায় ভিক্ষা শুরু করেন। তার স্ত্রী আবেদা খাতুনেরও এক পা ভাঙা। কয়েক বছর আগে একটি ভবন থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায় তার।

নাজিম উদ্দিনের তিন ছেলে তিন মেয়ে। তার মধ্যে চারজনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলে ঢাকায় রিকশাচালক। আরেক ছেলে ভৈরবে ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তাদেরও অভাব-অনটনের সংসার। আরেক মেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন।

নাজিম উদ্দিনের কথায় তার জীবনযাপনের অবর্ণনীয় চিত্র উঠে আসে। তিনি বলেন, 'বিহানে এট্টু পাল্পতা ভাত আর কাঁচামরিচ খাই। কোনোদিন এর লগে রুটিও জোটে। দুপুরে চাইরড্যা ভাত আর রাতেও চাইরড্যা ভাত খাওয়া হয়। ভাতের সঙ্গে টুকটাক সবজি আর কোনও দিন ডাল থাহে। মাছ-মাংস খুব একটা খাওয়া অয় না।'

তিনি আরও জানান, যেদিন করোনা ফান্ডে ১০ হাজার টাকা দান করেছেন সেই দিনও তিন বেলা ঠিকমতো পেট ভরে খেতে পায়নি তার পরিবার। নাজিম বলেন, 'হুনলাম ইএনও স্যার করোনায় যারা কষ্টে রইছে, হেগোরা সাহায্য দিচ্ছে। স্যারের সামনে একা যাইতে ভয় করছিল। হিতানের বালিশ থেইক্যা ট্যাহা বের কইর‌্যা বকুল মেম্বারের কাছে যাই। হ্যারে নিয়া স্যারের কাছে ট্যাহা নিয়ে গেছি। যাওয়ার আগে বউরে বললাম। হেও সায় দিল, কইল, তোমার এই ট্যাহা তো মাইনের (অন্যের) কাছথে' চাইয়্যা পাইছ। এহন এই ট্যাহা দশের উপকারের জন্য দিয়া দাও।'

নাজিম বলেন, যে ভিটায় আছি এটা সরকারের। এখন হুনলাম হাছানা আমারে ঘর কইর‌্যা দেবে। হাছানার দেওয়া ট্যাহা দিয়া একটা ছোটখাটো দোকান দিমু। পান-চা বিক্রি করুম। আল্কল্গাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ হাছানার হায়াত বাড়িয়ে দিক। সে দেশের মা। আমি সাধ্যমতো দেশের মায়ের সন্তানদের একটু সাহায্য করলাম।

তিনি বলেন, জীবনে মোবাইলে কথা কমু ভাবিনি। স্যারের ফান্ডে ট্যাহা দেওয়ার পর অনেকে খোঁজ নিতেছে। ৪-৫ দিন অইলো এক ভাতিজা একটা মোবাইল ফোন কিনা দিছে। সবাই এইট্যা-হেউট্যা দিচ্ছে। এসপি স্যার নতুন জামা ও চাল-ডাল, নুন দিছে। চেয়ারম্যান খাবার দিছে। এহন কত্ত ভালো আছি। যারা করোনার জন্য খারাপ আছে হেগো লইগ্যা দোয়া করছি। দেশ থাইক্যা করোনা চইল্যা যাক।