ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ধান চাষ করে পেতাম ৩ হাজার টাকা, ড্রাগন চাষে আসে ২ লাখ’

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৩  

প্রায় পাঁচ দশক ধরে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত নোয়াখালীর সুবর্ণচরের কৃষক আমিন উল্যাহ। ধান চাষ করে যে জমিতে বছরে পেতেন তিন হাজার টাকা ড্রাগন চাষ করে সেই জমিতে পান দুই লাখ টাকা। শুরুটা ইউটিউব দেখে শেখা তার। পরিবারের কেউ ড্রাগন চাষের বিষয়টি ভালোভাবে নেইনি। অনেকে ভেবেছিলেন ড্রাগন চাষে তেমন লাভের মুখ দেখবে না। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় শুধু নিজের ঐকান্তিক ইচ্ছা শক্তিতে সফল কৃষক আমিন উল্যাহ।

কৃষক আমিন উল্যাহ সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ফুলজান নগর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, ইউটিউব দেখেই কৃষক আমিন উল্যাহর শেখা হয় ড্রাগন ফল চাষের খুঁটিনাটি। ২২ শতক জায়গায় ১৪০টি পিলারে চলছে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ। দুই বছরের অদম্য চেষ্টায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করে পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা। পরিচিত ফসল চাষের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ড্রাগন ফলের চাষ করে সুবর্ণচর উপজেলায় আলোড়ন তুলেছেন তিনি। পথ দেখাচ্ছেন বেকার যুবকদের।

বাগান ঘুরে দেখা যায়, ১৪০টি পিলারে ৫৬০টি ড্রাগন গাছ রয়েছে কৃষক আমিন উল্যাহর। সবুজ ক্যাকটাসের মতো কাঁটাযুক্ত প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে অসংখ্য ফুল ও ফল। কিছু ফল পেকে লাল টুকটুকে। আর কিছু ফল পাকার অপেক্ষায়। এছাড়া একইসঙ্গে গাছে হলদে রঙের ফুলও শোভা ছড়াচ্ছে।

dhakapost

উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ড্রাগন চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বর্তমানে ৩০ জন চাষি ড্রাগন ফল চাষ করছেন। অনেকটা ক্যাকটাসের মতো এই গাছ। চাষিরা সিমেন্টের পিলার ও রড-টায়ার দিয়ে মাচা করেন। কারণ একবার গাছ বড় হলে টানা ৩০ বছর ফল দেয়। ড্রাগন গাছটিকে সোজা রাখতেই এত শক্ত করে মাচা করতে হয়।

কৃষক আমিন উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউটিউবে ড্রাগন চাষ দেখে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়ে এই পর্যন্ত এনেছেন। আমার জমির বয়স দুই বছর দুই মাস। গত বছর আমি দুই লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি। এবার প্রথমে এক লাখের বেশি বিক্রি করেছি। সামনে আরেকবার এক লাখের বেশি বিক্রি করতে পারবো। 

আমিন উল্যাহ আরও বলেন, আমি চাষাবাদ করার জন্য যখন চারা নিয়ে আসি তখন পরিবারের লোকজন বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু যখন ফল এসেছে তখন সবাই খুশি। মানুষজন আমার বাগানে ঘুরতে আসে। আমার কাছ থেকে শিখতে আসে। নতুন নতুন বেকার যুবকেরা আগ্রহী হচ্ছে। আমার বাগানের ফল বাজারে নিতে হয় না। বাড়ি থেকেই সব বিক্রি হয়ে যায়।

dhakapost

আমিন উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই জমিতে ধান চাষ করলে আমি বছরে পেতাম তিন হাজার টাকা। ড্রাগন ফলে পাই বছরে লাখ টাকা। আর পরিচর্যার কষ্ট কম। একবার গাছ রোপণ করলে ৩০ থেকে ৪০ বছর ফল দেয়। আমি ৫০ বছর ধরে কৃষিকাজ করি কিন্তু এই ফলের নাম শুনিনি। কীভাবে চাষ হয় তাও জানতাম না। কিন্তু আমি করার পর অনেকেই আগ্রহী হয়েছে। কৃষি বিভাগ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে।

কৃষক আমিন উল্যাহর বন্ধু কৃষক শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ফলের বেচাকেনা ভালো, দামও বেশি। আমাদের এই উপজেলায় এসব ফল চাষ হতো না। মানুষ দেখতে আসে, কিনতে আসে। আমাদের কাছে ভাল লাগে। তার সফলতায় আমরা অনেক খুশি। 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মদিনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকায় ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতো না। কেউ চাষ করবে এই বিষয়টা তারা ভাবেনি। আমিন উল্যাহ ভাইয়ের সফলতা, ফলের মিষ্টতা ও চাহিদা দেখে অন্যরা এগিয়ে আসছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুবর্ণচর উপজেলায় উচ্চমূল্যের ফসল ড্রাগন চাষ ও সম্প্রসারণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৩০ জন চাষি ড্রাগন ফল চাষ করছে। তাদের মধ্যে চরওয়াপদা ইউনিয়নের কৃষক আমিন উল্যাহ অন্যতম। কৃষি বিভাগ তার পাশে থেকে সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তিনি ৮০টা পিলার থেকে এক লাখ টাকার বেশি ফল বিক্রি করেছেন। আরও ৬০টি পিলার রয়েছে। এই বছর তিনি মোট দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবেন। যেহেতু এটা ব্যয়সাধ্য ফসল তাই বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে বলে আমি আশা করি। এতে করে সুবর্ণচরের ড্রাগন ফল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। কৃষক উপকৃত এবং লাভবান হবেন। কৃষক লাভবান হলে আমাদের দেশও লাভবান হবে।