ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আনোয়ার ইব্রাহিম: কারাবন্দি থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২২  

মালয়েশিয়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম। তিন দশক ধরে দেখা স্বপ্নপূরণের মাইলফলকে পৌঁছে গেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ইব্রাহিম। তবে তার এ স্বপ্নের যাত্রাপথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। কখনো রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন, কখনও গেছেন কারাগারে।

এক মন্তব্যে তিনি বলেছিলেন, তিন দশক ধরে যে পদটিতে চোখ রাখছিলেন তিনি সেই পদ পেতে তাকে করতে হয়েছে প্রচণ্ড অধ্যবসায়।

গত শনিবারের নির্বাচনের একদিন পর ৭৫ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমার কাছ থেকে একটি বিষয় শিখতে হবে- ধৈর্য, দীর্ঘ অপেক্ষা ও ধৈর্য।

আনোয়ারের প্রগতিশীল রাজনৈতিক জোট সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছিল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তাই বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদে সরকার গঠনের সৃষ্ট অনিশ্চয়তার অবসান ঘটান মালয়েশিয়ার রাজা সুলতাম আব্দুল্লাহ। আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।

বারবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে দূরে ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। নব্বইয়ের দশকে প্রথমে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পরে ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে যান তিনি।

ডা. মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলে সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় এক দশক জেলে ছিলেন আনোয়ার। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অস্বীকার করেন তিনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্যারিশম্যাটিক বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। ১৯৯০ এর দশকে পরামর্শক থেকে মাহাথির মোহাম্মদের শত্রু বনে যান তিনি। তার নেতৃত্বে মাহাথিরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার মানুষ।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক আনোয়ারের প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপটেও পরিবর্তন এনেছে।

মাহাথির এক সময় আনোয়ারকে ‘বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তাকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা দেন। কিন্তু পরে সমকামিতার অভিযোগ ও দেশটির আর্থিক সংকট মোকাবিলা নিয়ে মতবিরোধের জেরে মাহাথির বলেছিলেন, আনোয়ার ‘তার চরিত্রের কারণে’ দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য।

দেশটির এ দুই রাজনীতিবিদ জোটের মাধ্যমে ২০২৮ সালে সরকার গঠন করেছিলেন। তবে সেই জোট ভেঙে দিয়ে মালয়েশিয়াকে নজিরবিহীন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাঝে ফেলে দেন  মাহাথির।

জেলে ও সংসদে থাকাকালীন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিম ধীরে ধীরে মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল জোট থেকে সরে যান। ক্ষমতায় থাকাকালীন এ জোট দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়দের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।

প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মালয়েশিয়ায় ৭০ শতাংশ মানুষই জাতিগত মালয় সম্প্রদায়ের; যারা প্রধানত মুসলিম ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী। বাকিরা জাতিগত চীনা ও ভারতীয়। আনোয়ার ইব্রাহিম কয়েক দশক ধরে বহু-জাতির এ দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তিনি মালয়পন্থী ইতিবাচক নীতির অপসারণ এবং পৃষ্ঠপোষক ব্যবস্থারও অবসানের আহ্বান জানান; যা এখন পর্যন্ত বারিসানের অবস্থানকে মজবুত রেখেছে।

আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং ফেলো ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেমস চাই বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমকে সবসময় এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে লিপ্ত সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। তাকে নিয়ে উপযুক্ত যে কথাটি বলা যায়, সেটি হলো এক বিভক্ত সময়ে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি।

 

আনোয়ার ইব্রাহিম- ছবি: সংগৃহীত

আনোয়ার ইব্রাহিম- ছবি: সংগৃহীত

বন্ধু ও শত্রু

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগদানের আগে আনোয়ার ইব্রাহিম একজন তুখোড় ইসলামিক যুবনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন, যা তাকে পরবর্তীতে বারিসান ন্যাশনাল জোটের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যায়। তাই তাকে ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগদান করান সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

১৯৯৩ সালে অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি নিজের ডেপুটি হিসেবে আনোয়ারকে নিযুক্ত করেন মাহাথির। পরবর্তীতে মাহাথিরের কাছ থেকে আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট মোকাবিলার কৌশল নিয়ে তাদের মাঝে বিভাজন তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে তাদের। সেই সময় মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন ইউএমএনওর দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন আনোয়ারও।

১৯৯৮ সালে আনোয়ারকে বরখাস্ত করলে দেশটিতে মাহাথিরের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের সূচনা হয়। আর ভিন্নমত দমনে কঠোর অভিযান শুরু করে মাহাথির মোহাম্মদ নেতৃত্বাধীন সরকার। পরে আনোয়ারের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় সমকামিতার অভিযোগ আনা হয়। যদিও আনোয়ার বলেছিলেন, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে এ অভিযোগ আনা হয়েছিল।

আনোয়ার কালো কাপড়ে এক চোখ ঢেকে সমকামিতার বিচারের অভিযোগে আদালতে হাজির হন; যেটি তখন তার রাজনৈতিক দলের প্রতীক হয়ে ওঠে। কারাগারে আনোয়ারকে লাঞ্ছিত করার কথা স্বীকার করেন তৎকালীন পুলিশ প্রধান।

অবশেষে ২০০৪ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হন আনোয়ার। কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। তার দুই বছরের নেতৃত্বে সংসদে অসাধারণ সফলতা পায় তৎকালীন বিরোধীদল। এরপর ২০১৫ সালে আবার তাকে কারাগারে যেতে হয়। সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় এক দশক জেল খেটেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

 

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আনোয়ার ইব্রাহিম- ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আনোয়ার ইব্রাহিম- ছবি: সংগৃহীত

শেষ চেষ্টা

২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার রাজনীতি আশ্চর্যজনক এক মোড় নেয়। ঐ বছরের নির্বাচনে মাহাথির ও আনোয়ার আবার একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হন। নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে বারিসান ন্যাশনালকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবির মাঝে ঐক্যমতে পৌঁছান তারা।

তখন থেকে ন্যাশনাল বারিসানের নেতা নাজিব রাজাক মালয়েশিয়ার বহুল আলোচিত ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

ঐ নির্বাচনে জয়ের পর রাজকীয় আদেশে আনোয়ারকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দুই বছরের মধ্যে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন মাহাথির। কিন্তু তার আগেই তাদের জোট ভেঙে যায়। ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতার মুখে আনোয়ারকে আবার ত্যাগ করেন মাহাথির।

মালয়েশিয়ার গত শনিবারের ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পর দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ নির্বাচনে রক্ষণশীল মালয় মুসলিম জোটের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন আনোয়ার। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো- বারিসান জোটের সাহায্য নিয়েই এ অচলাবস্থা কাটাতে হয়েছে তাকে।

এবারের নির্বাচনই শেষ কিনা জানতে চাইলে আনোয়ার ইব্রাহিম সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে বলেন, আগামী কয়েক বছরে আমাকে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করা হবে কিনা, সেটির সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।