ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য খাতে আসছে ‘মেগা প্ল্যান’

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২০  

প্রতিবছর বাজেটে বিভিন্ন খাত গুরুত্ব পেলেও একরকম ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে এই স্বাস্থ্য খাত। করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা অবহেলিত ছিল এই খাত। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে দেশে বহু করোনা আক্রান্ত মানুষের নমুনা সংগ্রহ করানো যাচ্ছে না।
জনবলের অভাবে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার ফল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। অপরদিকে আক্রান্তদের সেবা দিতে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স।

দিনে অধিকসংখ্যক পরীক্ষার জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত কিটও। বিভিন্ন হাসপাতালে নেই আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)। থাকলেও পর্যাপ্ত নেই। এমনকি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সক্ষমতার ঘাটতিও সবার নজরে এসেছে।
যদিও অপ্রত্যাশিত থোক বরাদ্দ, বিভিন্ন দাতা সংস্থার অনুদান ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাটছাঁটের অর্থ স্বাস্থ্য খাতে স্থানান্তর করে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেয়া হচ্ছে।

সেই অবহেলার গর্ত থেকে এ খাতকে তুলে আনতে সরকার আসন্ন বাজেটে ঘোষণা করবে ‘মেগা প্ল্যান’। এর মধ্যে থাকবে ৩ বছরের মধ্যম এবং ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আর এই দুই মেয়াদে দেশের চিকিৎসা খাতে আনা হবে আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার, যা করোনাভাইরাস-পরবর্তী মোকাবেলায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও ব্যবস্থা থাকবে।
সরকারপ্রধানের নির্দেশনায় এমনটি নিয়ে রূপরেখা দাঁড় করাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এটি উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত টাকা স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ হবে- বিষয়টি জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাজেটে) সিরাজুন নুর চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগ চূড়ান্ত হবে আলোচনার মাধ্যমে। এখনই চূড়ান্ত নয়। নানা দিক থেকে আলোচনা ও পর্যালোচনা করেই ঠিক করতে হবে এ খাতে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতের কতটা অধঃপতন হয়েছে, তা এবারের করোনা সংক্রমণের পর দেখা গেছে। আসছে বাজেটে দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাজেটে সেটা বলতে হবে, কোথায় কোথায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনা হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের নগর স্বাস্থ্যে বিশেষ নজর দেয়া উচিত সরকারের। এখানে বাজেট বাড়াতে হবে। এছাড়া শুধু হাসপাতাল নয়, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও নজরে আনতে হবে।’ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে থাকছে জনবল নিয়োগ। প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্সসহ এ খাতে ঘাটতি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে।
এই মেয়াদি পরিকল্পনায় উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এনে দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। এসব ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে অনুসরণ করা হবে ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ থেকে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ আনা হবে। তাদের মাধ্যমে দেশে গড়ে তোলা হবে দক্ষ জনবল। পাশাপাশি এই পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা আরও বাড়ানো হবে। বিনিয়োগ বাড়ানো হবে অবকাঠামো খাতে।

নতুন হাসপাতাল নির্মাণও করা হবে। প্রত্যেক জেলায় গড়ে তোলা হবে গবেষণাগার। বিশ্বের অনেক দেশে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের মতো বাংলাদেশেও স্থাপন করা হবে। এছাড়া মেডিকেল সরঞ্জাম কেনাকাটা করা হবে। এতে মধ্য মেয়াদে ব্যয় করা হবে অর্থ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চাইলে রাতারাতি একটি খাতকে ব্যাপক পরিবর্তন করা যাবে না। এটি যারা বলছে ভুল করছে। কারণ অনেকে বলছেন উন্নয়ন বাজেটের টাকা কম ব্যয় করে স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহার করতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয় করার সক্ষমতা কতটুকু। এ মন্ত্রণালয় বছরে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে না। কিন্তু তাদের সেখানে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে কোনো লাভ হবে না। এজন্য ব্যয়ের সক্ষমতা আগে বাড়াতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, সরকার বিদ্যুৎ খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতে ১০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতেই মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। একসময় দেশে বিদ্যুতের সংকট ছিল। এ খাত উন্নয়নে সরকার সব ধরনের আইন শিথিল করেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে এ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিয়েছে।
নানা ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর আজ বিদ্যুৎ খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে এটি ২০০৯ সাল থেকে শুরু করা হলেও ২০২০ সালে এসে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। বিদ্যুৎ খাতের মতো সরকার একই ধরনের চিন্তা ও পরিকল্পনা নিচ্ছে স্বাস্থ্য খাতেও। এজন্য মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

এই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন মিলে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
করোনা মোকাবেলায় কর্মরত সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলে তাদের পদ অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন বাজেটে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া সদ্য নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসক এবং নতুন করে নিয়োগ পেতে যাওয়া পাঁচ হাজার নার্স ও দুই হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্টের বেতন-ভাতা বাবদ বাজেটে ৬০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ তুলনামূলক অনেক কম, যা মোট জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। স্বাস্থ্য খাতে আরও বাজেট বাড়ানো জরুরি। কিন্তু সেই বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় নয়, উন্নয়ন প্রকল্পে বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার জন্য এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এগিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এডিবির অর্থায়নে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। এআইআই ব্যাংকের অর্থায়নে আরেকটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। আর দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য ভেন্টিলেটর কেনা হবে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআই ব্যাংকের ঋণের টাকায় হাসপাতালগুলোয় আইসিউ স্থাপন করা হবে। আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। স্থলবন্দর, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৩টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে।
আইইডিসিআরের জন্য ল্যাব সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহন বাড়ানো, দেশের বিভাগীয় শহরে আইইডিসিআরের অফিস স্থাপন করা হবে। এই চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজেটে আড়াই হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এআইআই ব্যাংক দুই ধাপে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।