ব্রেকিং:
দেশে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো দিন হবে না এটা আমার শেষ বিসিএস ছিল, ৩-৪ মিনিটের জন্য স্বপ্ন ভেঙে গেল এক সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন দেওয়া হবে না : গণপূর্তমন্ত্রী সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ জব্দ পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
  • সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আল জাজিরা’র ‘প্রোপাগান্ডা’ ও ‘ফোকাস’ হওয়া মহাপ্রতারক সামি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

বাংলাদেশ নিয়ে আল জাজিরার ঔদ্ধত্যপনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে ‘টার্গেট’ করে উগ্রপন্থী রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা করেছে আল জাজিরা। সর্বশেষ সাম্প্রতিক-অতীতের বাংলাদেশকে নিয়ে কল্পিত নাটকের অবতারণা করেছে তারা। এ হাস্যরসের বিনোদন চরিত্রে মূল উপজীব্য করে তোলা হয়েছে সামিউল আহমেদ খান ওরফে জুলকার নাইন সায়ের খান ওরফে সামিকে। আসলে নিজের প্রকৃত নাম-পরিচয় গোপন করা সামির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে এক মহাপ্রতারককেই ‘ফোকাস’ করেছে আল জাজিরা।

হাঙ্গেরির মতো উন্নত দেশকে অবৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও বসবাসের জন্য বেছে নেয়া সামিকে অন্ধকার থেকে আলোতে এনে মিলিয়ন ডলার খরচায় নির্মিত ‘প্রোপাগান্ডা শো’র মাধ্যমে আল জাজিরা চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর ‘পেইড এজেন্ট’ হিসেবেই নিজেদের তুলে ধরেছে।

ডেইলি বাংলাদেশের তিন পর্বের অনুসন্ধানের তৃতীয় ও শেষ পর্বে বারবার ভোল পাল্টানো ‘সামিউল আহমেদ খান’ ওরফে সামির মহাপ্রতারণা নিয়ে এবারেও থাকছে বিশেষ প্রতিবেদন।

বাবার পরিচয়কে পুঁজি করে নিজের প্রতারণায় যখন যে পরিচয়ের প্রয়োজন, সেই পরিচয়েই আবির্ভূত হতেন সামি। কখনো সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট, কখনো ক্যাপ্টেন, কখনো র‌্যাব কর্মকর্তা—তার সব পরিচয়ই আদতে ছিল ভুয়া। এতসব কুকর্মের কারণে সেনা সদর ২০০৬ সালে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে। অতঃপর পুনরায়  প্রতারণার স্বপ্নের জাল বুনে আয়েশি জীবনের হাতছানিতে সামি পাড়ি জমান হাঙ্গেরিতে। জীবনের এ অধ্যায়ে মধ্য ইউরোপের ছোট দেশটিতে সামি ‘জুলকার নাইন সায়ের খান’ পরিচয়ে পরিচিত হন। কিন্তু কাতারভিত্তিক ‘প্রোপাগান্ডা চ্যানেল’ আল জাজিরা তাকে দৃশ্যপটে তুলে আনে ‘সামি’ নামে।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্রশিক্ষণকালে সামিউল আহমেদ খান ওরফে জুলকার নাইন সায়ের খান ওরফে সামি ২০০৬ সালের ২০ জুলাই র‌্যাব-১-এর বিশেষ দলের হাতে গ্রেফতার হন। সেই সময় নিজেকে ভুয়া র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের এজে টেলিকমিউনিকেশন থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন কিনে একটি ভুয়া চেক দিয়েছিলেন। একইভাবে প্রাইজ ক্লাব নামক একটি কম্পিউটার ফার্ম থেকে ১০টি ল্যাপটপ কিনে ভুয়া চেক দিলে এবং সেই চেক চেক ডিজঅনার্ড  হলে সেই ফার্ম কর্তৃপক্ষ র‌্যাব-১-এর নিকটে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে।

চুরি, মাদক ব্যবসা ও প্রতারণাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জেরে ২০০৬ সালে সেনা সদর তাকে দেশের সব সেনানিবাসে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। এমনকি মৃত্যুর আগে সামির বাবা তার অনিয়ন্ত্রিত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য তাকে ত্যাজ্য করেন।

গুজব ও অপপ্রচারের অভিযোগে গত বছরের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার অন্যতম আসামিও তিনি। জানা গেছে, বিদেশের মাটিতে বসে দেশের সু-পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিয়ে নানাবিধ অপপ্রচারে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। জানা যায়, সাইবার ক্রাইম ইউনিট অনলাইনে জাতির পিতা, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তি ও আপত্তিকর প্রচারণা এবং করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচারসহ বিভিন্ন গুজব রটিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, তাদের অন্যতম সামি। ‘উই আর বাংলাদেশি’ পেজ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে অভিযুক্তদের ল্যাপটপ ও মোবাইল অনুসন্ধান করে ১১ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিললে তাসনিম খলিল, সামিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এ মামলার প্রতিবাদে কলাম লিখেছিলেন আরেক অপপ্রচারকারী ডেভিড বার্গম্যান।

বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের চ্যানেল ওয়ানে যোগ দিয়েছলেন সামিউল আহমেদ খান ওরফে জুলকার নাইন সায়ের খান ওরফে সামি। ওই সময় অদিতি সেনগুপ্তকে মামুনের বিয়ের ঘটনায় সাক্ষীও হয়েছিলেন তিনি। এরপর  শ্বশুরের টাকায় হাঙ্গেরিতে নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে তারেক-মামুনের সঙ্গে আগের ঘনিষ্ঠতায় ইউরোপ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন সামি। ইউরোপেও নানা ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য অনেকেই তাকে খুঁজছেন। ফলে বহুদিন যাবত প্রকাশ্যে আসতে পারেন না সামি। 

উল্লেখ্য,  আজ বুধবার বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুনাম হানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচারের অভিযোগে সামিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।  ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আশেক ইমামের আদালতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক এ আবেদন করেছেন। এই মামলার অপর আসামিরা হলেন- নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান ও আল জাজিরা টেলিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল মোস্তফা স্যোঊয়াগ।

মামলাটির এজহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের সুনাম হানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধেও লিপ্ত রয়েছে এবং যৌথভাবে অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দি প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ নামে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী  একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন এবং উক্ত প্রতিবেদন ইউটিউবেও ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। এই প্রতিবেদন পরদিন বিভিন্ন মুদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকাসমূহে প্রচারিত হয়। 

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আসামিরা উক্ত প্রতিবেদনে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য না দিয়ে এবং তথ্য উপাত্ত বা দলিলাদি উপস্থাপন না করেই ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি এবং সাক্ষাৎকারের ছবি ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর সম্পাদনা করে একটি কাল্পনিক ভুয়া, মিথ্যা ও সাজানো কল্পিত তথ্য চিত্রের প্রতিবেদন তৈরি করে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে আল জাজিরা টেলিভিশনসহ ইউটিউবের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে অপপ্রচার করেছে। বিষয়টি দেশে বিদেশে বাংলাদেশের সরকার ও রাষ্ট্রের সুনাম ও মর্যাদার হানি ঘটিয়েছে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১২৪/১২৪(এ)/১০৯/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে। এমতাবস্থায়, ন্যায়বিচার জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিপূর্বক প্রয়োজনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি বিধান করতে আদালতের যেন মর্জি হয়।