ব্রেকিং:
কেএনএফের সভাপতি সানজু খুম বম গ্রেফতার নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন ওবায়দুল কাদের দুই বাংলাদেশির মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ ঢাকায় মনোনীত নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে এই ডেভিড মিল ঋণ শোধের সক্ষমতা অর্জন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নোয়াখালীতে হেরে গেলেন ওবায়দুল কাদের পতেঙ্গায় আগুন ধরে প্রশিক্ষণ বিমান কর্ণফুলীতে, ২ পাইলট আহত লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টিতে ভোটার শূন্য কেন্দ্র সুবর্ণচরে এক বুথে ঘণ্টায় পড়ল ১ ভোট ছেলের বিরুদ্ধে ভোট করলে ইউনিয়নে উন্নয়ন বন্ধ করার হুমকি এমপিপত্নীর নোয়াখালীতে ভোটের আগের রাতে টাকা বিতরণের অভিযোগ আওয়ামী লীগে স্বজনদের নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসী নিহত উপজেলা নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস তেলের দাম বাড়াল সৌদি ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি, আ.লীগ নেতাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার নোবিপ্রবিতে চালু হলো প্রথমবারের মতো পিএইচডি প্রোগ্রাম
  • শনিবার ১১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সন্দ্বীপ হয়ে পালায় রোহিঙ্গারা!

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

গত ১ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে ৪ রোহিঙ্গা। এরপর গত রবিবার একই ইউনিয়ন থেকে আটক হয় আরও ৪ জনকে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, স্থানীয় বাসিন্দা ও সন্দ্বীপ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে সন্দ্বীপে পালিয়ে এসে মুছাপুর, রহমতপুর, মাইটভাঙ্গা, গাছুয়া, আজিমপুর, সারিকাইত, মগধরা ও উড়িরচর ইউনিয়নে স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়েছে ৫৭ রোহিঙ্গা। আটক হয়েছেন এক দালাল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপ পালিয়া আসা রোহিঙ্গাদের সিংহভাগই ধরা পড়ে না।

স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বলছেন, মাঝেমধ্যে দু-একজন রোহিঙ্গা স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ে। বেশিরভাগই সন্দ্বীপের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে পাড়ি জমায় চট্টগ্রামে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। সন্দ্বীপকে পালানোর রুট হিসেবে ব্যবহার করে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন সময় আটক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গারা নোয়াখালী ও সন্দ্বীপের স্থানীয় দালাল ও জেলেদের সহায়তায় মাছ ধরা নৌকায় ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপ চলে আসে। গত বছরের ৩০ মে সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নে আটক হওয়া ১৪ রোহিঙ্গার একজন মিনহা ইমতিয়াজ (২৫) বলেন, ‘আমরা ৩০-৪০ জন ভাসানচর থেকে নোয়াখালীতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকে ৩০ হাজার টাকা করে দালালকে দিয়েছিলাম। আমাদের পরিবারের সদস্যরা কুতুপালং ক্যাম্প থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দালালদের কাছে টাকা পাঠিয়েছিল। নৌকার মাঝি নোয়াখালীতে নামানোর কথা বলে আমাদের এখানে (সন্দ্বীপ) নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।’

চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল আটক ৩ রোহিঙ্গার একজন আবদুল হোসেন (২৭) বলেন, ‘আমরা তিনজন ২১ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাসানচর ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের কামাল দালালের মাধ্যমে কক্সবাজার যাওয়ার চুক্তি করি। রাত ১১টায় কামাল দালাল আমাদের একটি নৌকায় করে সন্দ্বীপ পাঠায়। পরে সন্দ্বীপ থেকে কক্সবাজার পাঠানোর কথা ছিল।’

অবৈধভাবে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা। গত বছর ১৪ আগস্ট গভীর রাতে ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন ২১ শিশুসহ ৪১ রোহিঙ্গা। প্রাণ হারায় ১১ শিশুসহ ১৫ জন।

ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। ভাসানচরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সন্দ্বীপ উপকূলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সহজেই রোহিঙ্গারা নদী পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপ চলে আসতে পারছে।

সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের জেলে মঙ্গল জলদাস বলেন, ‘মাছ ধরতে ভাসানচরের কাছাকাছি গেলে রোহিঙ্গাদের দেখা যায়। তারা তীরের কাছে ছোট ছোট জাল দিয়ে মাছ ধরে। ভাসানচর থেকে নদীপথে সন্দ্বীপ আসা একবারেই সহজ।’

গত ২২ জুলাই সরেজমিনে ভাসানচর গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা সাগরে মাছ ধরছে। সংরক্ষিত এলাকা থেকে বেরিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নদীসংলগ্ন দোকানগুলোতে।

বিভিন্ন সময় আটক হওয়া রোহিঙ্গারা জানান, ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা অংশ আয় রোজগার কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অনেকে মা-বাবা পরিবার-পরিজন কক্সবাজারে থাকার কারণে সেখানে ফিরে যেতে চাচ্ছে। আবার একটা শ্রেণি আছে যারা দ্বীপের মধ্যে নিজেদের বন্দি বলে মনে করছে। কেউ আবার বেকার, পড়াশোনা জানা কিন্তু কোনো কাজ পাচ্ছে না। এসব কারণেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

গত বছর ২০ আগস্ট সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নে আটক হওয়া রোহিঙ্গা আল আমিন (২০) স্থানীয় লোকজনকে বলেছেন, তিনি এবং তার সঙ্গে আরও একজন চার মাস ধরে সন্দ্বীপে বসবাস করছেন। সন্দ্বীপের হাসান নামে এক যুবক তাদের কাজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে আসে। তাদের দিয়ে ইয়াবা, গাঁজা ও অস্ত্র ব্যবসা করানো হচ্ছে।

এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩১ জন আটকের ঘটনা ঘটেছে সন্দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নে। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম বলেন, ‘সন্দ্বীপে রোহিঙ্গা আসা বন্ধ না হলে ওরা মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে। কক্সবাজারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।’

সন্দ্বীপ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদীপথে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের। স্থলভাগে রোহিঙ্গা ধরা পড়লে কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে আমরা তাদের ভাসানচর পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। রোহিঙ্গারা যাতে সন্দ্বীপে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সর্বদা সতর্ক আছি।’

ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কেন ঠেকানো যাচ্ছে না এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন সন্দ্বীপ (রহমতপুর) কোস্ট গার্ড ও সারিকাইত কোস্ট গার্ডের দুজন কন্টিনজেন্ট কমান্ডার।