ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

হাতিয়ায় পল্লী চিকিৎসক ফাতেমা,জীবন বদলে দেওয়ার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২০  

কখনো পায়ে হেটে, কখনো রিক্সায় কিংবা কখনো মোটরসাইকেলের পিছনে চড়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেন রোগীর বাড়ী বাড়ী। পুরুষ শাসিত এই সমাজে স্বামী নেই তবুও নিজেকে অসহায় মনে করেননা তিনি । গ্রামের অসহায় সাধারন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে জীবনের বাকী অংশ পার করে দিতে চান ৪০ বছর বয়সী হাতিয়া দ্বীপের পল্লী চিকিৎসক ফাতেমা।

সরেজমিনে গিয়ে ফাতেমা ডাক্তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বুড়িরচর বড়পোল এলাকার চরআমান উল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাছলিমা বেগম (৩০) বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ফাতেমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি ছোট হলেও আছে ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা। হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের অজ পাড়ায় কয়েকটি গ্রামের নারীদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে পল্লীচিকিৎসক ফাতেমা ডাক্তার। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ফাতেমা রোগীকে কখনো নিজে বা কখনো রোগীর সাথে গিয়ে উপজেলা সদরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বত্তা মার্কেটের রাস্তার পাশে ছোট একটি টিনসেড ঘরে ফাতেমার ফার্মেসী দোকান। এই দোকানে বসে দিনের সকাল ও বিকাল দুই সময়ে রোগী দেখেন ফাতেমা।
কর্মজীবনে প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হলেও মৎস্য চাষ, হাঁস মুরগী পালন ও অন্যান্য ব্যবসার সাথে জড়িত ফাতেমা। তবে এসব পেশার মধ্যে নিজেকে পল্লীচিকিৎসক এই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে জানান পল্লী চিকিৎসক ফাতেমা। 

ফাতেমা ডাক্তার আরো জানান, তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারওয়ার ছিলেন স্বাস্থ্য সহকারী । সেই সময় গ্রামের অসহায় মানুষকে বিভিন্ন রোগব্যাধী নিয়ে তার পিতার কাছে আসতে দেখে তার চিকিৎসা সেবা করার ইচ্ছা জাগে। সে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ২০০২ সালে ঢাকাতে দুই বছর মেয়াদি ডি এম এ প্রশিক্ষন ও একটি গাইনি বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষন গ্রহন করেন।
এর পর থেকে ফাতেমা স্থানীয় বত্তা মার্কেটে ফার্মেসীতে বসে পল্লীচিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ব্যক্তি জীবনে ফাতেমা এক সন্তানের জননী। ২০১৭ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছুটা থমকে যায় জীবনের গতি। কিন্তু অধম্য ফাতেমা থেমে নেই । একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্রয় করেছেন কয়েক বিঘা জমি। তৈরী করেছেন পরিপূর্ন আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি বাড়ী। চিকিৎসা সেবার পাপাশি দিনের অবসর সময় টুকু ব্যয় করেন হাঁস মুরগি পালন ও নিজের মাছের খামারে।
বুড়িরচর দক্ষিন রেহানিয়া গ্রামের আফছার উদ্দিন (৪৫) বলেন , প্রতিদিন নিজের চেম্বারে ও বাড়ীতে গিয়ে ৪০/৫০ জন রোগী দেখেন ফাতেমা। এর মধ্যে অধিকাংশ মহিলা রোগী। গ্রামের রোগীরা বা তাদের অভিভাকরা ফাতেমাকে নারী ভাবেননা, ভাবেন চিকিৎসক হিসাবে। গভীর রাতে মোবাইলে কল করেও ডেকে নেন ফাতেমাকে। এই ক্ষেত্রে নিজের পরিবারের দুই তিনজন পুরুষ সাথে গিয়ে ফাতেমাকে সহযোগিতা করেন প্রতিনিয়ত।
ফাতেমা ডাক্তারের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা রেহানিয়া গ্রামের বিনা রানী নাথ (৬০) নামে এক বৃদ্ধা জানান, প্রতিনিয়ত তিনি ফাতেমা ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে আছেন। তার বাড়ী থেকে উপজেলা সদর অনেক দূরে হওয়ায় সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেননা। শুধু তিনি নয় তার পরিবারের সকল সদস্যের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন এই ফাতেমা ডাক্তার।
মাঝে মাঝে পুরুষ শাসিত সমাজে গ্রামের অন্য পল্লী চিকিৎসকদের থামিয়ে রাখার অপচেষ্টা মোকাবিলা করতে হয় ফাতেমাকে। চলার পথে বিভিন্ন সময় নারীর প্রতি পুরুষের লোভনীয় ছোট ছোট কটুক্তি শুনেও তাকে চলতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটাকে এখন নিয়ম মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান ফাতেমা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ইউছুফ সোহাগ বলেন, ফাতেমা একজন নারী। সে গ্রামে থেকে পুরুষ মহিলা সবাইকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন । মাঝে মাঝে জটিল কোন রোগী আসলে মোবাইলে সে আমার সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। একজন নারীর ক্ষেত্রে বর্তমান সমাজে এটা বিরল দৃষ্টান্ত