ব্রেকিং:
৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা ২১ বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে সেতু, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ শিক্ষামন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা মোহনপুরে নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৩ জেলে আটক ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক ২ পূজা নিয়ে এমপি বাহারের বক্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমপি বাহারের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দেখছেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে মেঘনায় মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেডক্রিসেন্টের অ্যাডহক কমিটি গঠন
  • মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সাড়ে ৪৬ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২০  

জাতীয় সংসদে বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সোমবার কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের মধ্যে দিয়ে ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে জাতীয় সংসদ। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। বিরোধী দলের সদস্যরা বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করতে ব্যর্থ হওয়া মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রস্তাবে আপত্তি জানান।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে এই অর্থ অনুমোদনের জন্য ২৬টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দুটি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে দেয়া হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২০ কণ্ঠভোটে পাস হয়। সম্পূরক বাজেট পাস শেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশন আগামী ২৩ জুন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করেন।

সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈশ্বিক মহামারী থেকে দেশের জনগণকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এখন যদি খরচ না করি তবে মানুষ বাঁচবে কেমন করে? আর মানুষকে যদি বাঁচাতে না পারি তবে দেশ কার জন্য? দেশের বাজেট কার জন্য? বাজেট তৈরি করেছি দেশের মানুষকে সামনে রেখে, দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের মানুষকে রক্ষায় এবার বিপুল অংকের অর্থ প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি মানুষকে রক্ষায় কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার সংসদে এই সম্পূরক বাজেট পাস হয়।

সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ২৪টি দাবির বিপরীতে মোট ১৬৭টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। ব্যয় বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির পীর হাবিবুর রহমান, রওশন আরা মান্নান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও বিএনপির হারুনুর রশীদ। অবশ্য তাদের ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পক্ষে ৫টি মঞ্জুরি দাবি নিজেই উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার উত্থাপিত দাবিগুলো ছিল- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট।

সংসদে উত্থাপিত বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ নিট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ এক হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটে অর্থ বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এবং সবচেয়ে কম এক কোটি ৫৪ লাখ কম বরাদ্দ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি, কোন ছাড় নয় ॥ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত এক হাজার ২৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেন, করোনাকালীন সমন্বিত একটি তালিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জনগণের আমানত এই দুর্যোগে প্রকৃত মানুষের পাওয়া উচিত। অথচ ৭০ ভাগ যারা সাহায্য পাওয়র যোগ্য তারা বঞ্চিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেন, প্রায় ৫ কোটি পরিবারকে সাহায্যের তালিকায় এনেছি। আর ত্রাণ বিতরণে কোন ধরনের দুর্নীতি না হয় সেজন্য ডাটাবেজ তৈরি করে বিতরণ করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তালিকা বেড়েই যাচ্ছে। রেড জোনগুলোতে লকডাউন করার পর সেখানেও সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয়ের সঙ্গে জড়িত কাউকেই প্রধানমন্ত্রী ছাড় দেননি, গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধিতা ॥ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও অধিক স্বচ্ছতা আনা উচিত। বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে মানুষ চরম কষ্টে রয়েছে, কিন্তু বয়স্ক-বিধবা-স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা প্রদানেও স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য করা হচ্ছে। প্রবাস থেকে চাকরি হারিয়ে অনেকে ফেরত আসবে, কিন্তু এ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের পুনর্বাসনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিরোধী দলের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করতে আমরা সক্ষম হবো। করোনার করালগ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে সমাজকল্যাণ খাতের সব টাকা মানুষকে রক্ষায় ব্যয় করা হয়েছে। এজন্য এমপিদের খাতে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি।

জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার দাবি বিএনপির ॥ করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মোঃ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রুপে বিধ্বস্ত। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার অবশ্যই জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা রাখি। এই সময়ে জাতির মধ্যে থাকা ক্ষতগুলো দূর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের এই দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কি? সরকারী হাসপাতালগুলোর কি অবস্থা? বিএসএমএমইউ’র মতো একটা স্পেশালাইজড হাসপাতাল সেখানে এখন পর্যন্ত কোভিডের চিকিৎসা চালু করা যায়নি। সারাদেশেই স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা খুবই করুন। করোনা নমুনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে উপসর্গ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলছে, নমুনা পরীক্ষা হার বাড়ানো। আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ, প্রতিদিন মাত্র ৮-১০ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করছি, তার ফলাফল প্রকাশ করছি। এটি খুবই সীমিত। এখন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালগুলোতে কোন ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। জেলাগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের ১০ দিন পর ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেন আগে খরচ করব, টাকা কোথায় থেকে আসবে জানি না। একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে এ রকম বক্তব্য আসতে পারে? তাহলে বাজেট কী জন্য? বাজেট দিয়েন না, টাকা খরচ করতে থাকেন। টাকা খরচ করার পর বাজেট দিয়েন।