ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রিফাত হত্যায় নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী মিন্নির কিছু সুস্পষ্ট প্রমান

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০১৯  

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে রহস্যের শেষ নেই যেন। রিফাত হত্যার প্রথম ভিডিও ফুটেজ দেখে দেশবাসী মিন্নির সাহসিকতার প্রশংসা করলেও পরবর্তীতে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও ফুটেজে মিন্নির রহস্যময় অঙ্গভঙ্গি ও আচরণে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমনকি নয়ন বন্ডদের রামদা’র কোপে আহত রিফাতকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে যাননি মিন্নি। এছাড়া রিফাত হত্যার বিবরণ গণমাধ্যমে দিলেও মনের অস্বাভাবিক অবস্থার অজুহাতে পুলিশের সাথে কথা বলতে রাজি হননি মিন্নি। যার কারণে রিফাত হত্যায় মিন্নির পরোক্ষ সমর্থন থাকার বিষয়টিরপ্রথমেই সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল দেশবাসীর মনে। পাশাপাশি রিফাত হত্যায় মিন্নির একাধিক বিয়ে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, তার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এটি কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা, মিন্নি কি এই হত্যার বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন, এমন নানা গুঞ্জন চাউর হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকাবাসীসহ সারাদেশের সচেতন মানুষের মনে।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র মারফত জানা যায়, মিন্নিকে নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন সময়ে প্রেম-প্রণয়ঘটিত নানা গুঞ্জন শোনা গেছে। একাধিক ছেলের সাথে মিন্নির সম্পর্ক নিয়েও কথা শোনা গেছে। জানা গেছে, স্কুল জীবন থেকেই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে তার নিহত স্বামী রিফাত শরীফের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। মিন্নি আইডিয়াল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ে প্রথমে জুয়েল নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। পরে রিফাত শরীফের প্রেমে পড়েন মিন্নি। তাদের প্রেমের বিষয়টি অনেকেই জানতেন। কিন্তু বছর দুয়েক পর তাদের মধ্যেও মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। এই ফাঁকে মিন্নি সখ্যতা গড়ে তোলেন সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে। এলাকায় নয়ন বন্ড এর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় মিন্নি তার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং একপর্যায়ে তার সান্নিধ্যেই ইয়াবায় আসক্ত হয়। নয়ন বন্ডের অনেক অপরাধের গোপন সাক্ষী মিন্নি। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর দুই পরিবারের অনুপস্থিতিতে গত ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন নয়ন বন্ড ও মিন্নি। কিন্তু দুজনই মাদকাসক্ত হওয়ায় প্রায়শই তাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি হতো। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। এছাড়া নয়ন বন্ড মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাওয়ায় সমাজ ও পরিবারের কথা বিবেচনা করে নয়নের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় মিন্নির। ফলে বিয়ের ছয় মাস পর নয়ন বন্ডকে ছেড়ে দেন মিন্নি। এরপর প্রাক্তন প্রেমিক রিফাত শরীফকে এ বছরের ২৬ এপ্রিল বিয়ে করেন। এ বিয়ের আগে নয়নকে তালাক দিয়েছিল কি না সে সম্পর্কে জানা যায়নি। মিন্নি নয়ন বন্ডকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে কিছু জানাননি তার আত্মীয়-স্বজনদের।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, মিন্নিকে বিয়ের কারণে রিফাত শরীফের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন নয়ন বন্ড। প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকলেও নয়ন বন্ডের ক্ষমতা, প্রভাব, মাদকাসক্তি, পুরনো প্রেমের স্মৃতির কারণে তার সাথে নিয়মিত ফোনে ও ফেসবুকে যোগাযোগ রাখতেন মিন্নি। মোট কথায় মিন্নির দু নৌকায় পা দেয়া নীতির কারণে পরিস্থিতি অনেকটা বিগড়ে যায়। একই সময়ে স্বামী ও বয়ফ্রেন্ডকে ম্যানেজ করতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির রহস্যময় আচরণ জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিবাহিত হয়েও পরপুরুষের সাথে মিন্নির যোগাযোগ এবং পরোক্ষ ইন্ধন-আচরণ হয়তো নয়ন বন্ডকে রিফাত হত্যায় প্ররোচিত করেছে, এমন গুঞ্জনও চাউর হচ্ছে এলাকায়।

জানা গেছে, সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটলেও মিন্নির সাথে রিফাতের সম্পর্ক মেনে নিতে পারতো না নয়ন বন্ড। এমন পরিস্থিতিতে নয়ন বন্ড ও তার ঘনিষ্ট বন্ধু রিফাত ফরাজী দুজনে মিলে রিফাত শরীফকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।
আরো জানা গেছে, গত ২৬ জুন নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী পরিচালিত ‘০০৭’ ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে সমন্বয় করে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেদিন সকালে বরগুনা কলেজ গেটে আসতে বলেন। ফেসবুক গ্রুপে তারা মাহাথির মোহাম্মদ নামে একজনকে রামদা নিয়েও আসতে বলেন।

ঘটনার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রিশান ফরাজী নামের একজন রিফাত শরীফকে জাপটে ধরে আছেন। এ সময় নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী তাকে কোপাচ্ছেন। প্রথমে মিন্নি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে নয়ন চলে গেলে মিন্নি স্বাভাবিক আচরণ করেন এবং রিফাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এসময় তার হাতব্যাগটি পড়ে গেলে ঘাতকদেন একজন এসে তা মিন্নির হাতে তুলে দিলে, তিনি স্বাভাবিকভাবে তা গ্রহণ করেন এবং আহত রিফাতের সাথে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই মিন্নিকে নিয়ে এলাকাতে নানা ধরণের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। রূপবতী ও স্মার্ট হওয়ায় এলাকার উঠতি তরুণ ও যুবকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ছিল মিন্নির বিশেষ শখ। এছাড়া কিছুটা খোলামেলা চলাফেরা করার কারণে স্থানীয় এলাকার তরুণ-যুবকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি। মিন্নি তার যৌবন ও সৌন্দর্যের বিষয়টি নিয়ে উপভোগ করতেন। তাই এসব কারণে মিন্নি একাধিক প্রেম, প্রণয়, একাধিক বিয়ে ও তালাকের বিষয়ে অনেকটা আবেগপ্রবন আচরণ করতেন।

রিফাত হত্যায় ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় ভিডিওটিতে মিন্নির আচরণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় কলেজ গেটে একাধিকজন রিফাতকে মারধর করছে, তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ মিন্নি স্বাভাবিকভাবে তাদের পিছু পিছু হাঁটছেন। এসময় মিন্নির চলাফেরা বা আচরণে কোন ধরণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ফুটে ওঠেনি। আবার রিফাতকে কুপিয়ে জখম করার শেষ পর্যায়ে মিন্নিকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে দেখা গেছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

প্রথম ভিডিওতে প্রতিবাদী হলেও পরের ভিডিওতে রহস্যময় আচরণ মিন্নিকে রিফাত হত্যায় প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো হত্যাকারীরা রিফাতকে এলোপাতাড়িভাবে কোপ দিলেও মিন্নিকে একটিও আঘাত করেনি। কেন আঘাত করেনি, সেটি নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। এছাড়া হত্যা পরবর্তীতে Minni Shorif নামক ফেসবুক আইডি থেকে নয়ন বন্ডকে পাঠানো ‘Sorry Jan’ লেখা মেসেজ, হত্যাকাণ্ডের দিন মিন্নির কলেজে আগমন, কলেজ গেট থেকে রিফাত শরীফকে কিল ঘুষি দিতে দিতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তার বাধা না দেয়া ও নির্বিকার ভঙ্গিতে আস্তে আস্তে নয়ন বন্ডের পিছনে পিছনে হেঁটে যাওয়া, পরবর্তীতে ঘাতকদের তুলে দেয়া হাত ব্যাগটি গ্রহণ করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসা, নয়ন বন্ডের সঙ্গে ঘটনার আগের দিন ও পরেরদিন মোবাইলে কথোপকথন হত্যাকাণ্ডে কোন না কোন ভাবে মিন্নির পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এলাকাবাসী মিন্নিকে ছন্নছাড়া ও খোলামেলা চরিত্রের মেয়ে হিসেবে দাবি করার পর থেকে সন্দেহ আরো দানা বেধেছে। এছাড়া রিফাতের সাথে বিয়ে হওয়ার পরও নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল যা কিছুটা আভাস দেয় যে, রিফাত শরীফকে হত্যা পরিকল্পনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তাই গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রশ্ন উঠেছে, রিফাত হত্যার মূল কারণ এবং প্রেক্ষাপট জানার জন্য অনতিবিলম্বে মিন্নিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন এজাহারভুক্ত ও তিনজন সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে তারা নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। আসামি রিফাত ফরাজী বর্তমানে ৭ দিনের রিমান্ডে। এর আগে গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি।

পাশাপাশি, রিফাত হত্যাকাণ্ডে ঘাতকদের সাথে মিন্নির কোন রকম মদদ বা ইন্ধন রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে মিন্নিকেও আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করাও এখন সময়ের দাবি।