ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাস্তা-ঘাটে কোনো বস্তু পাওয়া গেলে করণীয়

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

আমরা প্রায় সময় দেখতে পাই রাস্তা-ঘাটে টাকা, মূল্যবান সামগ্রী বা পানাহারের বস্তু পড়ে আছে। অনেকে এগুলোকে এড়িয়ে যায়। 

অন্যের মাল বলে সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না। না জানার কারণে এমন মাল থেকে দূরে থাকাকেই অনেকে মনে করেন দ্বীনদারি।

কিন্তু আমাদের জানা থাকা দরকার যে, কখনো কখনো পড়ে থাকা মাল নিজ সরংক্ষণে নেয়া ফরজ হয়ে যায়। তখন হারানো বস্তু পেলে করণীয় সর্ম্পকে ইসলামের বিধিবিধান জানাও জরুরি হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে নিজের মাল হেফাজত করা যেমন দায়িত্ব, অন্যের মাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হলে তা হেফাজত করাও দায়িত্ব।

আমি যদি সে দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা করি তাহলে আমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে। কারণ, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ তবে যদি কারো নিজের ব্যাপারে আশঙ্কা হয় যে, নিলে মালের লোভের কারণে আর ফেরত পাঠাবো না তাহলে অন্য কোনো আমানতদার ব্যক্তির নিকট সংরক্ষণের আশায় রেখে আসতে কোনো সমস্যা নেই।

হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর যুগে আমি একটি থলি পেলাম, তাতে একশ স্বর্ণ মুদ্রা ছিলো। আমি এগুলোকে কী করবো তা জানার জন্য রাসূল (সা.) এর দরবারে আসলাম। তিনি (সা.) নির্দেশ দিলেন এক বছর পর্যন্ত এগুলোর জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। আমি এক বছর প্রচারণা চালিয়েও কাউকে পাইনি। পুনরায় আমি রাসূল (সা.) এর দরবারে আসি এবং করণীয় জানতে চাই। তিনি পূর্বের ন্যায় নির্দেশ দেন। আবার এক বছর প্রচারণা চালাই, কিন্তু মালিকের কোনো খুঁজ পাইনি। তৃতীয় বার রাসূল (সা.) এর কাছে এলে তিনি বলেন, থলিটিতে যে মুদ্রা আছে, তার পরিমাণ এবং থলির বিস্তারিত বিবরণ স্মরণে রাখ। এমন কী যে রশি দিয়ে এর মুখ বাধা ছিলো তার বিবরণও তুমি স্মরণে রাখ। যদি কোনো ব্যক্তি দাবি করে সঠিক তথ্য দিয়ে প্রমাণ করতে পারে এই থলে তার তাহলে তাকে দিয়ে দাও। অন্যথায় নিজে ব্যবহার করতে পার। (বুখারী-১১৭২)।

উল্লিখিত হাদিসের ভিত্তিতে প্রসিদ্ধ চার মাজহাব মতে হারানো বস্তু কারো হস্তগত হলে, তার ওপর ওয়াজিব হলো প্রচারণা চালানো। কারণ, কারো হারানো মাল কেউ হস্তগত করলো আর এর প্রচারণা করলো না তাহলে তা সংরক্ষণ করা আর না করা উভয় সমান বরং এরূপ সংরক্ষণ করার চেয়ে না করাই বরং ভালো। কেননা সে হস্তগত না করলে মালিক হয় তো ওই স্থানগুলোতে সন্ধান চালাতো এবং পেয়ে যেতো বা এমন কেউ হেফাজত করতো, যে যথাযথ প্রচারণার মাধ্যমে মালিক পর্যন্ত পোঁছার ব্যবস্থা করতো। হাদিসে ওই সাহাবিকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার কারণ হচ্ছে, হয়তো তিনি দরিদ্র ছিলেন। ধনী হলে পাওয়া বস্তু ব্যবহারের অনুমতি দিতেন না। তাই ফিকহি মাসআলা হলো যথাযথভাবে প্রচারণার পরও মালের মালিক খুঁজে পাওয়া না গেলে, যে পেয়েছে সেই ওই মাল ব্যবহার করতে পারবে, যদি সে গরীব হয়। অন্যথায় সদকা করে দিতে হবে।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, মালিকের সন্ধান লাভের জন্য কতো দিন প্রচারণা চালাতে হবে? হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) হজরত উবাই ইবনে কাবকে এক বছর প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে ইমামগণের মাঝে কিছুটা মত ভিন্নতা পাওয়া যায়। ইমাম মালেক, আহমদ ও শাফী এবং হানাফি মাজহারের ইমাম মুহাম্মাদ (রা.) এর মত হলো, মাল কম-বেশি পরিমাণ যাই হোক এক বছর মালিকের সন্ধানে প্রচারণা চালাতে হবে। ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) মতে মাল যদি দশ দিরহাম (আনুমানিক তিন হাজার টাকা) এর কম হয় তাহলে যতটুকু প্রচারণা করলে মনে হয় মালিক থাকলে এসে যেতো ওই পরিমান সময় প্রচারণা করলেই দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। আর যদি মালের পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক বছর প্রচারণা চালাতে হবে। (আল মাওসূয়াতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতি, খন্ড-৩৫, পৃষ্ঠা-২৯৮) উভয় পক্ষ স্বীয় মতের পক্ষে বুখারীর হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন।

মাল হারানোর পরপরই মালিক এর সন্ধান বেশি চালায়। তাই মালিককে খুঁজে পাওয়ারও সম্ভাবনা বেশি থাকে। কাজেই প্রথম প্রথম দৈনিক দু’বার প্রচারণা চালানো। এরপর সপ্তাহে একবার। তারপর আস্তে আস্তে কমিয়ে মাসে একবার দু’বার প্রচারণা চালাবে।

হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ বর্ণনা করেন, এক গ্রাম্য লোক নবী (সা.) এর নিকট উপস্থিত হয়ে রাস্তা-ঘাটে প্রাপ্ত বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। রাসূল (সা.) বলেন, ওই বস্তুর মালিকের সন্ধানের জন্য এক বছর প্রচারণা চালাতে হবে। এবং বস্তুর সমস্ত আলামত সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে যদি মালিক উপস্থিত হয়ে প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে তাকে দিয়ে দেবে। অন্যথায় তুমি উপযুক্ত হলে নিজেই তা ভোগ করতে পারবে।

ওই লোকটিই রাসূল (সা.)-কে হারানো ছাগল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল (সা.) বলেন, ওই ছাগলকে তুমি হেফাজত করবে বা অন্য কেউ সংরক্ষণ করবে, নতুবা তা বাঘের খোরাক হয়ে যাবে। (রাসূল (সা.) বুঝাতে চাইলেন, ছোট জানোয়ার, যেগুলো সংরক্ষণ না করলে শিয়াল, বাঘ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলতে পারে তাকে সংরক্ষণ করা প্রাপকের দায়িত্ব।

ওই লোক রাসূল (সা.)-কে হারানো উট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তার এই প্রশ্ন শুনে রাসূল (সা.) খুব রাগ করলেন। এমন কী তাঁর চেহারায় রাগের আলামত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিলো। রাসূল (সা.) বলেন, তোমার সঙ্গে উটের ন্যায় এত বিশাল জন্তু হারানোর সম্পর্ক কি? (সে তোমার সাহায্যের প্রত্যাশা করে না।) সে নিজে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় যেতে সক্ষম এবং সে নিজে পানাহার করতে এমনকী কয়েক দিনের পানি নিজের ভেতরে সংরক্ষণ করতে সক্ষম। তুমি এটাকে সংরক্ষণ না করাই বরং ভালো। তাহলে ওট রাস্তায় ঘুরবে আর মালিক তাকে খুঁজে পেয়ে যাবে। (বুখারী-১১৭৩)।

এই হাদিসের সারমর্ম হচ্ছে, যে সকল বস্তু সংরক্ষণ করা না হলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে ওগুলোকে সংরক্ষণ করা। আর যেগুলোকে সংরক্ষণ না করলে নষ্ট হবে না বরং ছেড়ে দিলে মালিক সহজে পেয়ে যাবে সেগুলোকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে হেফাজতে না নেয়া। উটকে রাসূল (সা.) এর যুগে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে চোর-ডাকাতের উৎপাতের কারণে নিখোঁজ বড় প্রাণী পাওয়া গেলেও তাকে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটাই ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) এর মত। 

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন,  আমি একবার বাড়িতে এসে বিছানায় দু’টি খুরমা পড়ে থাকতে দেখি। কিন্তু উহা সদকার খুরমা হওয়ার আশঙ্কায় খাইনি। (বুখারী-১১৭৫)। নবী (সা.) এর জন্য সদকার মাল খাওয়া হারাম হওয়ায় তিনি এই খুরমা খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। প্রত্যেক খাবার আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত। তাই তাঁর কোনো নেয়ামত নষ্ট হতে দেখলে করণীয় হচ্ছে তাকে নষ্টের হাত থেকে বাঁচানো। এখানে একটি বিষয় জেনে নেয়া জরুরি যে, কোনো মালের মালিক যদি মালের ওপর থেকে কোনো কারণে তার কর্তৃত্ব বা মালিকানার দাবি প্রত্যাহার করে নেয় যেমন প্রয়োজন না থাকা, ওই মালের ওপর ব্যয় চালিয়ে যেতে অক্ষম হওয়া, অথবা তুচ্ছ হওয়ার কারণে ফেলে দেয়া ইত্যাদি তাহলে অন্যদের জন্য ওই মাল নেয়া, মালিক হওয়া বৈধ আছে এবং এই মালের মালিক সন্ধান করাও জরুরি নয়। 

যেমন- গ্রাম এলাকায় হাট শেষ হওয়ার পর কৃষকরা যে শাক-সবজি ফেলে যায়, বাড়ির মালিক অপ্রয়োজনীয় মনে করে বাড়ির বাইরে যা ফেলে রাখে, শস্য মাড়াই করার সময় বিক্ষিপ্তভাবে যেগুলো পড়ে থাকে এবং মালিক ওঠায় না, বাগানের অবশিষ্ট ফল ও গাছের লাকড়ি, যেগুলোকে মালিক ফেলে আসে। এগুলোকে নেয়া এবং ব্যবহার করা জায়েজ হবে। এগুলোর মালিকের সন্ধান করাও জরুরি নয়।

অনেক জায়গায় সাময়িক সময়ের জন্য মানুষ একত্রিত হয়। যে উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়, তা শেষ হওয়ার পর এখানে পুনরায় মিলিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না বা দ্রুত সময়ে নেই। যেমন ইজতেমার ময়দান, বিভিন্ন মাঠে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সমাবেশ। এমনিভাবে মেলা, ওরছ ইত্যাদি। এই সুরতগুলোতে প্রাপকের মনে হতে পারে, এখানে প্রাপ্ত মালের প্রচার করে লাভ নেই। কারণ, সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছে। তারা এই মালের জন্য এখানে আসবে না। প্রাপ্ত এ ধরনের মালের ক্ষেত্রে মাসআলা হচ্ছে, এ রকম মালের ক্ষেত্রেও প্রচারণা চালাতে হবে। হতে পারে মালিক আশপাশেই কোথাও আছে বা সংবাদ আস্তে আস্তে মালিকের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এই অবস্থার প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে নবী করিম (সা.) মক্কায় প্রাপ্ত মালের ব্যাপারে প্রচারণার নির্দেশ দিয়ে ছিলেন।

কারো কোনো মাল হারানো গেলে যদি ঘোষণা করা হয়, যে লোক আমার হারানো বস্তু পেয়ে দিবে বা সন্ধান দিবে তাকে আমি নির্দিষ্ট টাকা বা কোন বস্তু দেবো। এই রকম ঘোষণাকে শরয়ী পরিভাষায় ‘আকদে জাআলা’ বলে। উক্ত ঘোষণার পর যদি কেউ মাল পেয়ে দেয় বা সন্ধান দেয় তাহলে সে ঘোষিত বস্তুটির হকদার হবে। এবং ওই টাকা বা বস্তু নেয়াও জায়েজ হবে। হযরত ইউসুফ আ. যখন তার একটি স্বর্ণের পাত্র হারিয়ে ফেলেন, তখন এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিরমিজি শরীফের এক হাদীসেও এরূপ একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

সমুদ্র বা নদীতে ভাসমান কোনো জিনিস পাওয়া গেলে, যা কারো মালিকানাভূক্ত নয় বলে দৃঢ়ভাবে মনে হয় তা নেয়া জায়েজ হবে। আর সমুদ্র বা নদীতে ভাসমান কোনো বস্তুর ব্যাপারে মালিকানাভূক্ত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস হলে তার মালিক সন্ধান করে মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।