ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভাগ্যবদলের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায়: চাটখিলের মৃত্যুর মিছিল

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, যাঁরা খুন হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দোকানমালিক ও ব্যবসায়ী।

ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হামলার পরই এসব খুনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম উদ্বেগের মধ্যে আছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব হত্যাকান্ডের সঠিক কারণ জানা না গেলেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতিসহ নানা ঘটনার শিকার হয়ে দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম ভাগ্যবরণ করছেন বাংলাদেশিরা। যার বড় একটি অংশ ২০ থেকে ৩০ বছরের তরুণ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিবছর গড়ে ২০০ বাংলাদেশি হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন। গত বছর হত্যাকান্ডের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়েছেন ৫৬ বাংলাদেশি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৫৩৩টি। প্রবাসী বাংলাদেশি সূত্রে জানা গেছে, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অভিযোগে গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর বিদেশিদের দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় জোহানেসবার্গ সংলগ্ন সোয়েটো এলাকার কৃষ্ণাঙ্গরা। এ ঘটনায় বাংলাদেশিসহ অন্তত এক হাজার ৫০০ বিদেশির দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনা চলাকালে চার কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হলে ‘সেভ অ্যান্ড ক্লিন সাউথ আফ্রিকা’ নামে একটি সংগঠন সব বিদেশিদের দোকান থেকে বের করে দেয়ার আলটিমেটাম দেয়। এরপর থেকে বিদেশি নাগরিক খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে।
গেল বছরের শেষ তিন মাসে কমপক্ষে ২৬ বাংলাদেশি খুন হন। জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭ জন বাংলাদেশি খুন হন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসেই চার জন যুবক খুন হন। ফেব্রুয়ারিতে খুন হন পাঁচ জন। এর মধ্যে ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে জোহানেসবার্গের সোয়েটো লোকেশনের এলডেরাডো পার্কের একটি দোকানে নাজমুল হুদা বিপ্লব (২৫) নামে এক প্রবাসীকে গুলি করে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত শনিবার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান ওরফে সায়মন (২০) খুন হন। ওই দিন রাত ৮টার দিকে সায়মনের মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে। সায়মনের স্বজনরা জানান, দেড় বছর আগে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য সাউথ আফ্রিকাতে কাজের সন্ধানে যায় সায়মন।

সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ফ্রিডম পার্ক এলাকায় তার খালুর দোকানে কাজ করতো সায়মন। গত সোমবার সে দোকানে বেশ কয়েকজন নিগ্রো সন্ত্রাসী ডাকাতির উদ্দেশ্যে হানা দেয়। এ সময় তাদের বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা গুলি করে দোকান লুট করে পালিয়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় সায়মনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সয়মন সবার বড়। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সায়মনের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সায়মনের লাশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তার পরিবার দাবি জানান। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার সুযোগ খুব কম। কিন্তু একশ্রেণির দালাল ছয়-সাত লাখ টাকা নিয়ে মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, তানজানিয়া, লাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় লোক পাঠায়। এভাবে যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যান, তাঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জে। তাঁদের বেশির ভাগ দোকান চালান। কিন্তু তাঁরা বৈধ নন। ফলে তাঁদের ব্যাংক হিসাব নেই। এ কারণে নিজেদের কাছেই তাঁরা নগদ টাকা রাখেন। আর ওই টাকা ছিনিয়ে নিতেই এসব হামলা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের কাছে এসব ঘটনার প্রতিকার ও ন্যায়বিচার চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে চট্টগ্রামের বাসিন্দা আমিন খান বলেন, এখানে জীবন হারানোর শঙ্কা নিয়ে চলতে হয়। অন্য দেশের কেউ মারা গেলে সে দেশের লোকজন ও এম্বাসি মামলা করে, কিন্তু বাংলাদেশিদের বেলায় কেউ আসে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের অভিযোগ, হত্যাকান্ডের শিকারের পর পুলিশের পক্ষে একটি ইউডি মামলা ছাড়া ভুক্তভোগীর পক্ষে কোনো মামলা হয় না। তাই খুনের ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্তও হয় না। তাই কি কারণে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে তা পুলিশী তদন্তের বাইরে থেকে যায়।

অপরদিকে অন্য কোনো দেশের নাগরিক সেখানে হত্যাকান্ডের শিকার হলে ওই দেশের কমিউনিটি নেতারা সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাত আসামীর নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার চুড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার তদারকি করে যান। এমন কি ওই দেশের অ্যাম্বাসী পর্যন্ত মামলার তদারকির জন্য নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগ করে। বাংলাদেশি প্রবাসীদের বেলায় ঘটে উল্টো ঘটনা। যে কোন এলাকায় কোন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হলে স্থানীয় বাংলাদেশিরা চাঁদা তুলে লাশটা কোনরকমে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।