ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনিয়োগ ১ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংক ঋণ মাত্র ১৫৮ কোটি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১  

পরিবহন ব্যবসার পাশাপাশি পেট্রোল পাম্প, সিএনজি স্টেশন, ফ্লাওয়ার মিল, ফুডইন্ডাস্ট্রি, কার্টন ফ্যাক্টরি, পোলট্রি ফার্ম, রাইস মিল, মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট, সংবাদপত্রসহ ৩২ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে এই শিল্প গ্রুপের। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। 
দু’টি বাস দিয়ে পরিবহন ব্যবসা শুরু করে ফেনী ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্টার লাইন গ্রুপ। ১৯৯৮ সালে ফেনী-ছাগলনাইয়া রুটে যাত্রা শুরু করা এই শিল্প গ্রুপে এখন ৫০ টি এসি বাস সহ ২’শ বাস চলাচল করে দেশের বিভিন্ন রুটে। ব্যবসায়ে নতুনত্ব, বৈচিত্র ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এই শিল্প গ্রুপের ব্যবসা ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রাম-ফেনী এবং ফেনী-ঢাকা রুটে প্রতি ৫ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির। এসব রুটে একচেটিয়া ব্যবসা স্টার লাইন বাসের। 
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় ৯’শ কোটি টাকা। বিনিয়োগ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক ঋণ মাত্র ১৫৮ কোটি টাকা। 
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে স্টার লাইন গ্রুপ গড়ে তুলেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ক্যাডেট কোচিং সেন্টার সহ বহু প্রতিষ্ঠান। নিজ শিল্প গ্রুপের কর্মীদেও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবানিশ্চিতের জন্য গড়ে তুলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল। সিএসআরখাতে এই শিল্প গ্রুপ প্রতি বছর ব্যয় কওে কয়েক কোটি টাকা। 
সম্প্রতি স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মোঃ মাঈন উদ্দিন  জানান প্রতিষ্ঠানটির উত্থান ও চড়াই উৎরাই পার হয়ে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছার গল্প। 
পিতার স্বপ্নের পরিবহন ব্যবসা বিস্তৃত হলো সন্তানদেও হাত ধরে:
স্টার লাইন গ্রুপের উদ্যোক্তাদের পিতা এরশাদ উল্লাহর জীবদ্দশায় একটিবাস ও ট্রাকছিল। ১৯৮৩ সালে ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে ৪৭ বছওে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর সাংসারিক খরচ চালাতে গিয়ে ওই দু’টি গাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন এরশাদ উল্লাহর স্ত্রী আলতাফের নাহার বেগম। 
এরশাদ উল্লাহর বড় ছেলে হাজী নিজাম উদ্দিন স্টার লাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি সৌদি আরবে ব্যবসা করেন। ২য় ছেলে হাজী আলাউদ্দিন স্টার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ফেনী পৌরসভার মেয়র হিসেবে দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেছেন। ৩য় ছেলে জাফর উদ্দিন স্টার লাইন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক, ৪র্থ ছেলে জামাল উদ্দিন ফিন্যান্স ডিরেক্টও এবং ছোট ছেলে মাঈন উদ্দিন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া এরশাদ উল্লাহর মেয়ে বিবি মরিয়ম এর স্বামী সাইদুল হক মিন্টু এবং সাহেদা আক্তার চম্পার স্বামী মাহমুদুল হক চৌধুরী মুনির স্টার লাইন গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘পরিবহন আমাদেও পারিবারিক ব্যবসা। বাবার মৃত্যুর ১১ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৪ টি গাড়ি দিয়ে ৪ জনের অংশীদারিত্বে ১৯৯৪ সালে ১ কোটি টাকা মূলধনে পরিবহন ব্যবসায় স্টার লাইন বাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্ত এই রুটে এস আলম গ্রুপেরএকসাথে নামানো ২০ টি হিনোবাসের সাথে পাল্লা দিয়ে স্টার লাইন বাসের এই ব্যবসা খুব বেশি দিন টেকেনি। লোকসানের পাল্লা ভারী হওয়ায় ১৯৯৭ সালে এসে অংশীদারদেও মধ্যে বাস ভাগাভাগির মাধ্যমে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় স্টার লাইন বাস। ওই সময় স্টার লাইন গ্রুপের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী আলাউদ্দিনের ভাগে দুুটি বাস পড়েছিল। প্রথম দফা বাস ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় হাজী নিজাম উদ্দিন পুনরায় পরিবহন ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী ছিলেননা। পরবর্তীতে মায়ের অনুরোধে তিনি এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। 
মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, ১৯৯৮ সালে সোহাগ পরিবহন থেকে পুরোনো একটি বাস কিনে ও একটি বাস ভাড়া নিয়ে স্টার লাইন বাস সার্ভিসের পুনঃযাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে পারিবারিকভাবে গড়ে ওঠা স্টার লাইন পরিবহন কেআর পেছনে ফিওে তাকাতে হয়নি। পরিবারের সব সদস্যেও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফেনীসহ সারা দেশে একটি উদীয়মান শিল্প গ্রুপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্টার লাইন। পরিবহন সেক্টওে নামি দামি প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে স্টার লাইন নিজেদেও আধিপত্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা- ফেনী, ফেনী- চট্টগ্রাম, ফেনী-কক্সবাজার রুটে পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করছে স্টার লাইন গ্রুপ।  
স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, পরিবহন ব্যবসার পুন:যাত্রায় আমার বড় ভাই গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন ৩ টি নতুন বিষয় সংযোজন করলেন। প্রথমত ধুমপান মুক্ত পরিবহন সেবা, নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে গাড়ি ছাড়া এবং যাত্রা পথে নামাজের বিরতি। পরিবহন সেবায় এই তিনটি বিষয়ের কারনে স্টার লাইন গ্রুপের ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতি বছর গাড়ির বহরে যুক্ত হতে থাকে ৪-৫ টি গাড়ি।
তিনি আরো বলেন, স্টার লাইন গ্রুপের ভিশন হচ্ছে দেশপ্রেম, সমাজ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং নতুনত্ব। একটি পরিপূর্ন পরিবহন ব্যবসা থাকতে হলে নিজস্ব বাস এর পাশাপাশি নিজস্ব টার্মিনাল, কাউন্টার, পেট্রোল পাম্প, ওয়ার্কশপ থাকতে হয়। এর সবগুলোই আছে স্টার লাইন গ্রুপের। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনীতে রয়েছে ৪ টিনিজস্ব টার্মিনাল। আমাদের ৩ টি পেট্রোল পাম্প এবং ওয়ার্কশ পরয়েছে। স্টার লাইন পরিবহন সেক্টওে নিয়োজিতআছে ২ হাজারকর্মী। 
সুখ কর ছিলোনা পরিবহন ব্যবসা:
ঢাকা- চট্টগ্রাম রুটে বিভিন্ন নামী দামি পরিবহন কোম্পানীদের সাথে পাল্লা দিয়ে স্টার লাইন গ্রুপের অবস্থান তৈরী করার পথ এতটা সুখ করছিলোনা। রাজনৈতিক নানা অস্থিরতায় বারবার হোচট খেয়েছে স্টার লাইন গ্রুপের পরিবহন ব্যবসা। ২০১৪ সালে অসহযোগ আন্দোলন, টানা হরতাল অবরোধের কারণে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ওই সময়ে ৫০ টি বাসে আগুন এবং ভাংচুরের কারনে ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয় স্টার লাইন বাসের। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিপুরণ দেয় সরকার । 
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফোর লেইন কাজ, মহিপাল ফ্লাইওভার, ফতেহপুর ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন  ব্রিজ সংস্কারের কারণে সীমাহীন যানযটে ও পরিবহন ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল নিরবিচ্ছিন্ন হওয়ার পর করোনার লকডাউন শুরু হয়। ফলে টানা প্রায় তিন মাস পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ ছিলো। 

ফেনীতে শিক্ষার মানউন্নয়নে কাজ করছে স্টার লাইন গ্রুপ। ফেনীতে ক্যাডেট কলেজ থাকলেও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে ফেনীর শিক্ষার্থীরা এই কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পায়না। ক্যাডেট কলেজে স্থানীয় শিক্ষার্থীদেও ভর্তিও সুযোগ সৃষ্টি করতে স্টার লাইন গ্রুপ চালু করেছে ক্যাডেট কোচিং সেন্টার। গত ৫ বছরে স্টার লাইন ক্যাডেট কোচিং সেন্টারে অধ্যয়ন করে ফেনীর ১১৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে পেরেছে। 
এছাড়া স্টার লাইন গ্রুপ প্লে থেকে এসএসসি পর্যন্ত একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পরিচালনা করে। এতে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নকরে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজে ৬৫০ শিক্ষার্থী এবং হেফজখানায় অধ্যয়ন করে ৩৫ শিক্ষার্থী। 
ফেনীর অধিবাসীদের কম মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরতে ফেনী-মহিপাল জিরোপয়েন্টে স্টার লাইন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল। যেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পাবে। 
শুধুমাত্র ব্যবসায় নয়, মানবিক নানা কাজে ভূমিকা রাখে স্টার লাইন গ্রুপ। ফেনীর সকল ধর্মীয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দেয় ব্যবসায়িক এই প্রতিষ্ঠানটি। করোনা ভাইরাস অতিমারীর কারণে ২০২০ সালে লকডাউনে ৩ মাস পরিবহন সেক্টও পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও সব কর্মীদের শতভাগ বেতনও বোনাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ও দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী। করোনা কালীন সময়ে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার খাদ্য সহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেছে স্টার লাইন গ্রুপ। 
গ্রুপের পরিচালক মাঈন উদ্দিন আরো বলেন,  আগামীতে একটি ফয়েল ফ্যাক্টরি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে আমাদের। এাছাড়া একটি পেট্রোল পাম্প ও ফেনীতে একটি ফলমার্কেট এবং কোল্ড স্টোরেজ নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।