ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বাংলাদেশে বাংলা ভাষার বাইরে রয়েছে আরো ৪১টি ভাষা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

বাংলা ভাষা বাঙালির মায়ের ভাষা। মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এমন ঘটনা শুধুমাত্র বাঙালিদের ঝুলিতেই রয়েছে। বিশ্বের সেরা দশটি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা অন্যতম। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই যে বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ রয়েছে তা কিন্তু নয়। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলায় কথা বলেন এমন মানুষ রয়েছে।

ইউরোপে এমন একটি জেলা রয়েছে যার নাম বাংলাদেশ। তবে এটির প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’। শুধু বাংলাদেশ কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই নয়। বাংলায় কথা বলে সিয়েরা লিওনের মানুষও। পশ্চিম আফ্রিকার দরিদ্র এই দেশটির দ্বিতীয় প্রধান ভাষাও বাংলা।   

তবে ভাষার জন্য যুদ্ধ করলেও বাংলাদেশে রয়েছে আরো অনেক ভাষাভাষীর মানুষ। বাংলা ভাষার ইতিহাস প্রায় ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলা ভাষা বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় ভাষা। প্রায় ৯৯% বাংলাদেশির মাতৃভাষা বাংলা। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ও বিশ্বের অন্যতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ অনুযায়ী, বৈদেশিক সম্পর্ক ব্যতীত অন্যান্য সকল সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার আবশ্যিক করেছে।

 

বাংলাভাষার ইতিহাস ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো

বাংলাভাষার ইতিহাস ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরনো

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র একভাষী রাষ্ট্র বলে বিবেচিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বসবাস করে এমন বাংলাদেশি আদিবাসীগণ তাদের নিজ নিজ ভাষা (যেমন চাকমা, মারমা ইত্যাদি) ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে বাংলা ভাষার যথেষ্ট রূপভেদ লক্ষ্য করা যায়।যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং সিলেট অঞ্চল এর ভাষা আদর্শ বাংলা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বহুপূর্বে সিলেট অঞ্চলে সিলেটি নাগরী নামক লিপি দ্বারা সিলেটি ভাষার লিখিত রূপও ছিল তবে বর্তমানে তা আর লেখা হয় না।

তাই বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও আরো ৪১টি মাতৃভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে। এতদিন ধরে প্রচলিত ধারণা ছিল এ ভূখণ্ডে মোট মাতৃভাষা আছে ১৫ থেকে ২৫টি। গবেষকরা এতোদিন ধরে এমন ধারণাই দিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন গবেষকদের ব্যক্তিগত গবেষণা ও অনুসন্ধানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ধারাবাহিক গবেষণা ও অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে মাতৃভাষার মোট সংখ্যা আগের ধারণার চেয়ে ১৫টি বেশি। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ ‌আলী মতে, বাড়তি আরো যে ১৫টি মাতৃভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলোরও হারিয়ে যাওয়ার বা বিলুপ্ত হবার আশঙ্কা রয়ে গেছে। এগুলোকে সংরক্ষণ করার বা টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ না নেয়া হলে একদিন এগুলোর অস্তিত্বই যাবে হারিয়ে।  

 

বাংলা বর্ণমালা

বাংলা বর্ণমালা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠির ভাষার ওপর বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা চালিয়ে মোট ৪১টি মাতৃভাষার সন্ধান পায়। এ ভাষাগুলো হল- সাঁওতালি, মাহলে, কোল, কোরা বা কোদা, মুন্দারি, খারিয়া, সাউরা, খাসি, আবেং, আচিক, কুরুখ, মাল্টো, তেলেগু, গারো/ মান্দি, হাজং, কোচ, লালেং/ পাত্রা, মারমা, কোকবরক, খুমি, খিয়াং, লুসাই, তংচঙ্গা, ম্রো, রাখাইন, পাংখুয়া, বাউম, রেংমিট্‌চা, চক, মণিপুরী মেইথেই, লিঙ্গম, সাদরি, মাদ্রাজি, থর, উর্দু, ওড়িয়া, অহমিয়া, মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া, কানপুরী , চাকমা , নেপালি এবং কন্দো। 

ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষকরা বেশ কয়েকটি মাতৃভাষার সন্ধান পেয়েছিলেন। তবে এতদিন পর্যন্ত কাজটিতে কোনো সমন্বয় বা ধারাবাহিকতা ছিল না। সবই করা হয়েছে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে ব্যক্তিগত চেষ্টায়। ফলে সংখ্যা নির্ণয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। ফলে বাংলাদেশে যে ২৫টির চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাতৃভাষার অস্তিত্ব রয়েছে সেটা কারো গোচরে আসেনি। 

বাংলাদেশে বাংলার বাইরে মাতৃভাষা আছে ৪১টি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই সংখ্যা নির্ণয়ের কাজটি করেছে। এ সংখ্যার সঙ্গে দ্বিমত করার খুব একটা অবকাশ নেই। নতুনভাবে খুঁজে পাওয়া (১৫টি) ভাষাগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো লিপি নেই। লিপি রয়েছে হাতেগোনা দু’একটির। লিপিহীন ভাষাগুলোকে আমরা ‘অক্ষরহীন ভাষা’ বলে থাকি। বাংলাদেশে বাংলার বাইরে মাতৃভাষা আছে ৪১টি।  

 

সিলেটি বর্ণ পরিচয়

সিলেটি বর্ণ পরিচয়

দেশের এই ৪১ টি ভাষার মধ্যে সবচেয়ে কম চর্চা হয় রেংমিট্‌চা ভাষা। কেননা বাংলাদেশে মাত্র ২৫ জন এই ভাষায় কথা বলে। তবে অন্যান্য ভাষাগুলোও বিলুপ্তির পথে। মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও মাতৃভাষাশ্রয়ী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার মধ্য দিয়ে এই ভাষাগুলোকে জীবন্ত করা যেতে পারে। দেশে যে ভাষাগুলো কেবল মৌখিক রূপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে, যেগুলোর কোনো লিপি নেই বা লেখ্যরূপ নেই, কাঠামো বা ব্যাকরণ নেই, যেগুলোতে কোনো বই লেখা হচ্ছে না সেগুলোকে আমরা বলছি অক্ষরহীন ভাষা। এই ভাষাগুলোকে যে করেই হোক টিকিয়ে রাখতে হবে। তবে কাজটা সহজ নয়। এ কাজটা করতে হলে প্রথমেই এ ভাষাগুলোকে জীবন্ত ও সচল করতে হবে। ব্যবহারিক কাজে এগুলোর প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে। এর জন্য কতগুলো বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া আছে।  

একেকটি ভাষার ভাষার ডকুমেন্টশন প্রস্তুত করা। তারপর এই ভাষাগুলোর প্রত্যেকটির অভিধান তৈরি করা। সংশ্লিষ্ট ভাষায় প্রাথমিক বই লেখার জন্য লিপি লাগবে, ব্যাকরণ দরকার হবে। ঐ ভাষার শিক্ষকদের শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে হবে।  এভাবেই নানান সৃজনশীল পন্থা ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে এসব ভাষায় আবারও নতুন প্রাণসঞ্চার হবে। এরপর দেখা যাবে ধীরে ধীরে ভাষাটি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার উপযোগী হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠতে শুরু করেছে।