বাঁশের কেল্লায় লকডাউন-টিকা নিয়ে অপপ্রচার, জনগণের তড়িৎ প্রত্যাখান

মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত জামাত-শিবির রাজাকারদের পক্ষে প্রচারণা চালনাকারী, সরাসরি পাকিস্তানি অর্থায়নে পরিচালিত ফেসবুক পেজ ‘বাঁশেরকেল্লা বাংলাদেশ - Basherkella Bangladesh’ এ আজ মধ্যাহ্নে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করা হয়। প্রচারপত্রে নানা কৌশলে বিশ্বজুড়ে চলমান মহামারী করোনাকে অস্বীকার করে মিথ্যা, ভুলে ভরা তথ্য ও তত্ত্ব প্রকাশ করা হয়। 

মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কোভিড ১৯ এ দিশেহারা, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে করোনার ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা উচ্চ শিখরে; তখন স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তান পন্থীদের ঈর্ষার জ্বালায় দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এই অপপ্রচারপত্র জারি করেছে প্রকাশনাটি।

মজার বিষয় হল, যে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এত গোঁজামিলের তথ্য প্রকাশ করেছে বাঁশেরকেল্লা, সেই পোস্টেই দেশের সচেতন জনগণ পাল্টা জবাব ও যুক্তি-তর্ক হেনে এই হাস্যকর পোস্টটিকে প্রত্যাখান করেছে। বাঁশের কেল্লার উক্ত পোস্টটি একচোখে পড়লে মনে হবে, “করোনা বলে দুনিয়ায় আসলে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু শুধুই কড়াকড়ি লকডাউন দিয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। আর এই পাকিস্তান পন্থী স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশের জনগণের জন্য কত মায়া! তাই তারা লকডাউন প্রত্যাখান করে দেশে করোনার প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে সবাইকে আহ্বান করছে”।

বাঁশের কেল্লার অপপ্রচারপত্রের প্রথমেই করোনায় ৭০০০ জন আক্রান্তের বিপরীতে ৭০ জনের মৃত্যু অর্থাৎ শতকরা ১ ভাগের মৃত্যু তথ্যের কথা উল্লেখ করে লকডাউনের অপ্রয়োজনীয়তার যুক্তি তুলে ধরে। এই পোস্টের কমেন্টেই এক সচেতন পাঠক প্রতি উত্তর দেন “ সংক্রামক রোগ যদি বেশি ছড়ায় মৃত্যু কি বেশি হবে না? আপনাদের কথা মত ১% মারা গেলেও দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের ১% হোল ২০ লক্ষ মানুষ। তার মানে আপনারা বলতে চাচ্ছেন ২০ লক্ষ মরে যাক আর রাষ্ট্র চুপচাপ দেখে যাক!”

বাঁশের কেল্লার অপপ্রচারপত্রের ২য় অংশে বলা হয়েছে, দেশের সর্বোত্র করোনা প্রকোপ নেই। তাই সারাদেশে লকডাউন দরকার নেই। এই তথ্যের বিপরীতে আলাদা কোন তথ্যসূত্র এই জামাৎ পক্ষীয় গোত্রটি দিতে পারে নি। বস্তুত এই সাবি পুরোটাই ভুয়া। উক্ত পোস্টের কমেন্টে আরেক সচেতন পাঠক স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যসূত্র তুলে ধরে প্রতি উত্তর দেন। আর সাধারণ কমনসেন্স কি বলে এই কথার বিপরীতে? “বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। কম আক্রান্ত জেলাগুলোতে যেন ব্যাপক আকারে কোভিড ছড়াতে না পারে তাই সেখানে লকডাউন আরো বেশি জোরদার করা উচিত”

বাঁশের কেল্লার অপপ্রচারপত্রের ৩য় অংশটি দেখা মাত্রই এদের বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জনগণের নিদারুণ বিতৃষ্ণার কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেরাম ইন্সটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা পাওয়া মাত্র এই টিকার বিরুদ্ধে জামাতি অপপ্রচার নতুন কিছু নয়। ধর্মীয়ভাবে নমনীয় বাঙালীকে এই টিকা নিলে ঈমানহারা হয়ে যাবার ভয়ও ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে এই ধর্মবেশ্যা দলটি। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা, মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া, যৌন ক্ষমতা নষ্ট হওয়া, নারী পুরুষের হরমোন চেঞ্জ হওয়া ইত্যকার বিবিধ প্রকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ইতোমধ্যেই টিকার বিরুদ্ধে চালিয়ে এই গোষ্ঠীটি। এবং জনগণ তা প্রত্যাখান করে ১ম ডোজ টিকা নিয়ে ২য় ডোজের জন্য প্রস্তু হয়েছে। এই সময় পুনরায় এই পাকিস্তানপন্থী ভারতবিদ্বেষী জামাত-শিবির চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষতির সম্মুখীণ করতে চাইছে; যেন বঙ্গবন্ধু কন্যার করোনাযুদ্ধে ভ্যাকসিন জয়ের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। যদি পাকিস্তানেও এই টিকা প্রচলিত হত তখন অবশ্য এদের উল্টোসুর দেখা যেত। 
এদের থেকে সাবধান

বাঁশের কেল্লার অপপ্রচারপত্রের ৪র্থ অংশটি পড়লে হাস্যকরভাবে তাদের যে গুজব লেখক সেই মানুষটিরও দ্বিধাগ্রস্ততা লক্ষ্য করা যায়। প্যান্ডোমিক থেকে বাঁচতে পুরো বিশ্ব যেখানে কড়াকড়ি ভাবে লকডাউন পালন করছে; নিজ নিজ জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে বন্ধ রেখেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানে বাংলাদেশ সরকার নাকি বিদেশি ষড়যন্ত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে ‘হতে পারে’। বাঁশের কেল্লার পোস্ট থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করছি,  “জাতিকে পঙ্গু বানানোর গভীর দেশী অথবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে”

লক্ষ্য করুন পাঠক, তারা নিজেরাও বলছে ‘হতে পারে’। করোনার মৃত্যুমুখ থেকে শিশু কিশোরদের বাঁচিয়ে রাখাটা নাকি জামাতের মতে পঙ্গু করা। অতি হাস্যকর। 

বাঁশের কেল্লার অপপ্রচারপত্রের শেষ অংশটা দেখে সত্যি হাসি থামিয়ে রাখাটা মুশকিল হয়ে পড়েছিলো পাঠকদের। হাবিজাবি গুজব আর বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে শেষে ‘বাঁশের কেল্লা’ লিখে, “রোগ-ব্যাধি, অসুখ বিসুখ প্রকৃতি প্রদত্ত। মানুষ প্রকৃতির নিয়মে মারা যাবে, রোগ-ব্যাধিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না”। আরো লিখে তারা “প্রকৃতি প্রদত্ত নিয়মে একেকজন একেক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, এটা ঠেকানোর চেষ্টা করে লাভ নাই”।
ভেবে দেখুন, ধর্মের নামে মানুষকে বিজ্ঞানমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে বিমুখ করে কপটতা আর কুসংস্কারের পথে ঠেলে দেবার নিয়তে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে এই পাকিস্তান পন্থী গোষ্ঠীটি। জনগণকে চিকিৎসা বিমুখ করে নিজেরা কিন্তু ঠিকই কোটি টাকার চিকিৎসা নেয় জামাতি নরপশুরা।

 অসুস্থতাজনিত কারণে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইবুনালে সাইদি অনুপস্থিত ছিল বারবার বাহানা দেখিয়ে। অসুস্থতার কারণে ফাঁসির দন্ড থেকে ক্ষমা পাওয়া গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছিলো হাসপাতালে।  যুদ্ধাপরাধের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েই মারা গিয়েছিলো। আর তাদের এই শেষাংশের কথাটি বাঁশের কেল্লার প্রথমাংশের সাথে সাংঘর্ষিক। এক মন্তব্যকারী উত্তর দেন, “একটু আগেই প্রথম কথায় বললেন যে কোন রোগেই এক শতাংশ মানুষ স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়। তাহলে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার যুক্তিটা কেন সত্য হবে না?? টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই-- আপনি কি ভাবে বুঝলেন। আপনার ছোট বেলায়- পলিও, হাম, টিবি ইত্যাদি টিকাগুলা কেন নিলেন আল্লাহ বলেছেন, তোমরা চেষ্টা কর যেই কোন সমস্যা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। তাহলে আপনি-- কোরআন হাদিস অস্বীকার করতেছেন। আপনি ইসলাম ও মানুষ জাতির শত্রু”।

সচেতন দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, জামাত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা সর্বাত্মকভাবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মত ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে সচেষ্ট। পাকিস্তান যেভাবে ৭১ এ নিজ দেশের নাগরিকের উপর গণহত্যা চালিয়েছিলো, এখনো নিজ দেশের নাগরিকদের টিকা না দিয়ে মেরে ফেলছে; বাংলাদেশেও তাই হোক-এমনটাই চায় এই বাঁশেরকেল্লা। এদের যথাপোযুক্ত উত্তর দিন। এদের থেকে সাবধান থাকুন।