ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ বাড়ছে, শিশুর বয়স চার পার হলেই স্কুল

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২০  

দেশের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় বড় ধরনের সংস্কার হতে যাচ্ছে। সরকার প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বয়স চার বছর পার হলেই শিশুরা স্কুলে যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা প্রাক্‌–প্রাথমিকে এক বছর পড়াশোনা করে। এরপর প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।


প্রথম দফায় আগামী বছর দেশের ২ হাজার ৫৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা চালু হবে। পরে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে তা চালু হবে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে যুগোপযোগী বলছেন। তবে তাঁরা এও বলছেন, এটি যেন পরীক্ষানির্ভর পড়াশোনা না হয়। খেলা ও আনন্দের মাধ্যমে যেন শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট করা হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, তাদের নেওয়া এই সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এ–সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়ে সই করেন। যেটি তাদের কাছে এসেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বৃহস্পতিবার এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আগামী বছর থেকেই নতুন এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। আগামী সোমবার সভা করে কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, তার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বুরোর তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি ছেলেমেয়ে। সরকারি, এনজিও পরিচালিত আর কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে সোয়া লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেনগুলোয় অনেক কম বয়সী শিশুদেরও ভর্তি করা হয়। তবে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিকে এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।

দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে প্রাথমিকে ঝরে পড়া কমেছে। ২০১০ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সেটি কমে ২০১৯ সালে হয় প্রায় ১৮ শতাংশ। প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পর থেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির হার, প্রাথমিকের শিক্ষাচক্র সমাপনী ও উপস্থিতির হার এবং সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হারও বেড়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতিতেও পর্যায়ক্রমে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা বলা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা–২০৩০–এ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইউনেসকোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের ৫২ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি ও ৩৩ শতাংশ দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা আছে। জাপান, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, সরকারিভাবে দেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না থাকায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার যেমন ঘটছে, তেমনি অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বাড়ছে। শিক্ষার ব্যয়ও বাড়ছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের করা এডুকেশন ওয়াচের–২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার ব্যয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় নয় গুণ বেশি। এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিশুরা খেলবে, কথা শিখবে, গাইবে, স্কুলের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হবে–ব্যবস্থাটি যদি এমন হয়, তাহলে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা ভালো হবে। আর যদি একজন শিক্ষক দিয়ে শিশুদের কেবল একটি রুমে আটকে রেখে শেখানোর চেষ্টা হয়, তাহলে দুই বছর না করাই ভালো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘আমি মনে করে এটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। তবে এটি যেন পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা না হয়। খেলতে খেলতে শিশুরা যেন পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট হয়।’ তিনি বলেন, এর ফলে তিন ধরনের সুবিধা হবে। প্রথমত, শিশুদের স্কুলগামী করা যাবে। এতে ঝরে পড়া কমবে। দ্বিতীয়ত, স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের সংযুক্ততা বাড়বে। তৃতীয়ত, শিক্ষকেরাও শিশুদের প্রতি যত্মশীল হওয়ার প্রস্তুতিটি নিতে পারবেন, যা পরবর্তী শ্রেণিতেও কাজে লাগবে।

যেভাবে বাস্তবায়ন হবে

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন অংশীজনদের মতামত নিয়ে দুই বছর মেয়াদি এই ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিক্ষাক্রম ও শিখণ সামগ্রীর উন্নয়ন করবে। প্রথম পর্যায়ে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ২ হাজার ৫৮৩টি বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি এই শিক্ষা চালু হবে। পরে এর ফলাফল পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি (তিন থেকে চার বছর) পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই সময়ে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া শিশুদের যত্নের জন্য প্রতি বিদ্যালয়ে একজন করে আয়া নিয়োগ করা হবে।

গ্লোবাল পার্টনার ফর এডুকেশন থেকে ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।