ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনে কাজ করছেন অধ্যক্ষ মাহাবুবুল করিম

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০  

উপকূল বিদৌত এলাকা লক্ষ্মীপুর জেলার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপিঠ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ। দেশের বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি সর্ব মহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স কোর্স, ডিগ্রি (পাস) কোর্স ও মাস্টার্স কোর্স (প্রাইভেট ও নিয়মিত) চালু রয়েছে। লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলার প্রায় সাড়ে নয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি আলোকিত পথের দিশারী।

এদিকে লক্ষ্মীপুরে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে ভীড় জমায়। এছাড়া নোয়াখালী ও চাঁদপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে শিক্ষার্থীরাও এসে এখানে লেখাপড়া করছে। জেলায় একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য এখানে আসে। আবার আসন কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয় না।

ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন প্রফেসর মোহাম্মদ মাহাবুবুল করিম। তিনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে রায়পুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ, লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজে উপাধ্যক্ষ, সেনবাগ সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ এবং অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। অত্র কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে থাকাকালীন সময়ে তিনটি বিষয়ে অনার্স, চারটি বিষয়ে মাস্টার্স ও ছয়টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করেন।

জানা যায়, প্রফেসর মোহাম্মদ মাহাবুবুল করিম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আরও কিছু সময়োপযোগী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বৈশি^ক মহামারি করোনায় বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাকার্যক্রম। মহাবিপর্যয় সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য তিনি নিজেই তৈরি করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষায় মেইন গেইটে প্রবেশাধিকার সীমিত করতে করা হয়েছে অস্থায়ী গেইট। যোগদানের শুরু থেকে বর্ণাঢ্য বসন্তবরণ, জাকজমক বার্ষিক ক্রীড়া, শিক্ষা সফর, জাতীয় দিবস  সমূহ উদযাপন ও মুজিববর্ষ উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।  মহামারী এ সময়ে শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থে গরীব, দিন মজুর ও রিক্সাওয়ালাদের মাঝে মানবিক সাহায্য প্রদান করেন।
এছাড়াও বেশ কিছু উন্নয়মূলক কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে থাকবে, দৃষ্টিনন্দন গেইট, পুরনো শহিদ মিনার আধুনিকীকরণ, পুরো ক্যাম্পাস সিসি টিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, কলেজের সৌন্দর্য বর্ধন, কলেজ দিঘির চারপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা, ইংলিশ, বাংলা, রসায়ন ও পদার্থ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের আধুনিকরণসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মাহাবুবুল করিম।

সম্প্রতি কলেজ ক্যাম্পাসের জন্য স্থাপিত পাওয়ার সাব ষ্টেশন যেটি মেরামতের লক্ষ্যে কলেজের উদ্যোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন ভবনের জন্য পুকুর ভরাটসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ জেলা শহরের পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। ১৯৬৪ সালে লক্ষ্মীপুরের জ্ঞান তাপসী মরহুম অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে ১০.৬৩ একর জমির ওপর লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা ঘটে। ১৫০ শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক ও ৮ কর্মচারী দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪৭ জন শিক্ষক এবং সরকারি ও মাষ্টার রুলে ৪১ জন কর্মচারী রয়েছে। তবে এখনো বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২৪জন শিক্ষকের সংকট রয়েছে।

মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির মাধ্যমে কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও স্থানীয় বিদ্যানুরাগীদের সহযোগিতায় অল্প দিনেই কলেজটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। তাই উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখা ও স্নাতক শ্রেণিতে বি.এ, বি.কম ও বি.এস-সি শাখার অনুমোদন হয়। পরে ১৯৮০ সালের ১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হয়। এর ফলে অগ্রযাত্রার এ সফলতা আরো গতিশীল হয়ে আজকে এ প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ১৯৯৫ সালে ১ম অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ১১টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া ২০০৫ সাল থেকে এখানে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ৭ টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।

অনার্স কোর্সের বিষয়গুলো হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজী, ইসলামী শিক্ষা, অর্থনীতি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মাষ্টার্স কোর্সের বিষয়গুলো হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলাম শিক্ষা ও গণিত। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাস), অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে।

সূত্র জানায়, এ কলেজে তিনটি ত্রিতল, একটি চারতলা ও একটি ৫তলা ভবন রয়েছে। ভবনগুলোতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০ টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি লাইব্রেরীও রয়েছে। এদিকে প্রত্যেকটি অনার্স কোর্স বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও কলেজের সৌন্দর্য বাড়াতে রয়েছে বিস্তৃর্ণ মাঠ, মূল গেটের রাস্তার দু’পাাশে ঝাউ গাছ ও দিঘি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে রয়েছে একশ শয্যা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী নিবাস, ৩০ ও ২০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি ছাত্র নিবাস।

পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সু-শৃংঙ্খল জীবন-যাপন ও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার মানসিকতায় এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বি.এন.সি.সি, রোভার স্কাউট, গার্লস-ইন-রেঞ্জার ও ঐতিহ্যবাহী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট। এছাড়াও স্থানীয়, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এ কলেজের শিক্ষার্থীদের গৌরবজনক সাফল্য রয়েছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মাহাবুবুল করিম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে শিক্ষার পরিবেশ বদলে গেছে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের কোনও বিকল্প নেই। আর  করোনার পরও এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তবে শুধু শ্রেণি কার্যক্রমই (ক্লাস) নয়, পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায়।

ইতোমধ্যে পুরো কলেজের সকল বিভাগ ও ভর্তি কার্যক্রম সফটওয়্যার বেইজ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর আওতায় পুরো কলেজের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে।  

তিনি বলেন, ‘আইসিটি শুধু প্রশিক্ষণের বিষয় না, এটা ব্যবহারের বিষয়ও বটে। এ জন্য দরকার আগ্রহ ও সাহস।’ এ সাহস ও মনোবল নিয়ে প্রথমে অনলাইনে, পরে ওবিএস এর মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারিকালীন সময়ে  অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু রেখেছেন এবং পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।

আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনার্স ১ম ও ২য়  বর্ষে অনলাইনে গঈছ পদ্ধতিতে নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা উন্নিত করে যথাক্রমে নূন্যতম জিপিএ বিজ্ঞান এ ৪.২৫, ব্যবসায় শিক্ষায় ৩.৭৫ ও মানবিক এ ৩.২৫  নির্ধারণ করা হয়।
এসময় শিক্ষার মানোন্নয়নে ও কলেজের উন্নয়নে সর্বদা কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।