ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়া রোধে কী করবেন?

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২১  

গত বছর করোনাভাইরাসের সূচনা হলেও একসময় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে চলতি বছরের মার্চে আবারো শুরু হয়েছে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। যার কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে থেমে নেই মৃত্যুর মিছিলও।  

এদিকে জানুয়ারিতেই বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের নমুনায় পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার নতুন স্ট্রেইন। যদিও এই স্ট্রেইনগুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে কি না, তা এখনো সরকারি পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তাই বর্তমানে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার জন্য এই নতুন স্ট্রেইনগুলোই দায়ী কিনা তা এখনো নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়।

মিউটেশনে ভাইরাসের কী পরিবর্তন হয়?

করোনাভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস, যা প্রাকৃতিকভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে রূপ পরিবর্তন করে এবং জন্ম দেয় নতুন স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টের। রূপান্তরিত স্ট্রেইনগুলো অনেক সময় আগের চেয়ে বেশি সংক্রামক ও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এসব পরিবর্তন ভাইরাসকে মানুষের মাঝে দীর্ঘদিন টিকে থাকার সক্ষমতা দিয়ে থাকে।

করোনাভাইরাস তার খোলসে থাকা স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমে মানব কোষের সঙ্গে আটকে যায়। স্পাইক প্রোটিনের একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ‘রিসিপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন’। এই অংশটির মাধ্যমেই মূলত ভাইরাসটি মানব কোষে থাকা নির্দিষ্ট রিসেপ্টর এসিই২’র সঙ্গে বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে সংক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে, যা কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। রিসিপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইনে যেকোনো পরিবর্তন ভাইরাসটির সংক্রমণ সক্ষমতা বাড়াতে পারে। যেসব ভ্যাকসিন স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করে বানানো হয়েছে, স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশনের কারণে ভাইরাসগুলো ভ্যাকসিন-প্রতিরোধীও হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বি.১.১.৭ নামক একটি নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত করে, যা ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশে ছড়িয়ে পাড়ে। যুক্তরাজ্যের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউটি হয় এই নতুন স্ট্রেইন দিয়েই, যার ফলে প্রাণ হারায় প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ। বি.১.১.৭ স্ট্রেইনটির স্পাইক প্রোটিনে প্রধানত একটি ডিলিশন (এইচভি৬০/৭০ ডেল) এবং এন৫০১ওয়াই ও পি৬৮১এইচ নামক দুইটি মিউটেশন একত্রে সংঘটিত হয়, যার ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে যায় ৭০ শতাংশ এবং গুরুতরভাবে অসুস্থ করার ক্ষমতা বেড়ে যায় ৩০-৪০ শতাংশ। এ ছাড়াও এই স্ট্রেইন দিয়ে যারা সিভিয়ার কোভিডে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যু-ঝুঁকি বেড়ে যায় আগের চেয়ে ৬১ শতাংশ।

যুক্তরাজ্য ছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেই করোনার নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে।  

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ১২০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে। যার মধ্যে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই গবেষণার ফলাফল এখনো কোনো বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়নি কিংবা এর তথ্য জিআইএসএআইডির ডেটাবেইজে জমা দেয়া হয়নি। তবে এই তথ্য যদি সঠিক হয় তাহলে তা অবশ্যই খুবই উদ্বেগজনক একটি সংবাদ।

বাংলাদেশে বর্তমান সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পেছনে যুক্তরাজ্যের ‘ইউকে স্ট্রেইন’ দায়ী কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও, বর্তমান সংক্রমণের গতি, বিস্তার, শনাক্তের হার, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের সংখ্যার দ্রুত বাড়া, হাসপাতালের শয্যা কোভিড রোগীতে ভর্তি হয়ে যাওয়া, তরুণদের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া- এসব কিছু মিলিয়ে এটি অনুমান করা যায় যে ইউকে স্ট্রেইনটি হয়তো দেশের জনগণের ভেতর ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলগুলোতে।

যদি এটি সত্য হয়, তাহলে আমাদের এখন থেকেই অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। এছাড়া কঠোর ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে দেশে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা যেতে পারে। এতে করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব স্তর সতর্কাবস্থায় থাকবে।

চলুন এবার জেনে নেয়া যাক দেশে করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়া রোধে আমাদের করণীয়গুলো কী কী-

>> করোনা সংক্রমণে দেশব্যাপী লকডাউন দেয়া হয়েছে। তবে তা এক সপ্তাহের জন্য। তবে সম্ভবত এক সপ্তাহের লকডাউন সংক্রমণের বর্তমান ঊর্ধ্বগতি প্রশমনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। এ ধরনের সংক্রমণের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহের লকডাউন প্রয়োজন। লকডাউন ছাড়াও সংক্রমণ কমাতে রাত্রিকালীন কারফিউ দেয়া যেতে পারে। কেবল লকডাউন ঘোষণা করলেই কাজ হবে না। এর যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।

>> নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করা জরুরি। কারণ লকডাউনে দরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষেরা স্বভাবতই কাজ হারিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই প্রথম সারির ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ রেশন ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সমাজের প্রতিটি কোণ থেকে লকডাউনের সমর্থনের জন্য এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া একান্ত জরুরি।

>> ক্রমবর্ধমান কোভিড রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ স্থাপন করা উচিত। এছাড়াও সব কোভিড হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। অক্সিজেনের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে কোভিড হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন জেনারেটর ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সরবরাহ করাও আবশ্যক।

৪. মিউটেশন সার্ভেইল্যান্স: দেশব্যাপী এখন মিউটেশন সার্ভেইল্যান্স শুরু করা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি সব দেশকে ভ্যারিয়েন্ট সার্ভেইল্যান্স চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য মিউটেশন সার্ভেইল্যান্স গুরুত্বপূর্ণ। জিনোম সিকোয়েন্সিং নতুন মিউটেশন শনাক্তকরণ ও মিউটেশন সার্ভেইল্যান্সের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি। তবে এই কৌশলটি ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ, যার জন্য দরকার বিশেষ দক্ষতা ও সক্ষমতা, যার অভাব স্পষ্টতই বাংলাদেশে রয়েছে।

বিকল্পভাবে থ্রি-জিন আরটি-পিসিআর কিট ব্যবহার করেও দেশে খুব সহজেই মিউটেশন সার্ভেইল্যান্স করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ‘ইউকে স্ট্রেইন’ শনাক্তকরণে ৯৯ শতাংশ কার্যকরী। এই কিটটি ‘টেকপাথ কোভিড-১৯ কিট’ নামে পরিচিত। বিখ্যাত থার্মোফিশার কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে এই কিট উৎপাদন করেছে। এই নির্দিষ্ট কিটটি পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) তাদের তিনটি লাইটহাউজ ল্যাবরেটরিতে বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকরণের জন্য হাজারো নমুনায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। পরবর্তীতে এই কিটটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটিতে মিউটেশন সার্ভেইল্যান্সের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। পিএইচই প্রকাশিত ‘টেকনিক্যাল ব্রিফিং ২’ অনুসারে, থ্রি-জিন আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় এস-জিন ড্রপআউট ‘ইউকে স্ট্রেইন’ শনাক্তে একটি ভালো প্রক্সি হিসেবে কাজ করে।

>> এখন টিকাদান কর্মসূচি চলছে দেশজুড়ে। এখনই সেরোসার্ভেইল্যান্সের সঠিক সময়। অঞ্চলভিত্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেরোসার্ভেইল্যান্স না করলে হার্ড ইমিউনিটির দিকে দেশ কতটুকু এগোচ্ছে তা বোঝা যাবে না। এছাড়াও, ভ্যাকসিন আমাদের দেশে মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কি না, সেটা জানাও জরুরি। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে ৫৭ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই এন্টিবডি তৈরি হয়েছে করোনা সংক্রমণ ও টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য কোভিডের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে চলেছে।

 হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যের মতো এবার আমাদেরও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য