ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত দালাল বাজার জমিদার বাড়ি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২০  

মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তিনশ বছরের পুরনো দালাল বাজার জমিদার বাড়িটি সংস্কারের পর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার করে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শেষে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল।

সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল এর প্রচেষ্টায় ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল এর অক্লান্ত পরিশ্রমে জমিদার বাড়ির চারপাশে রাস্তা নির্মাণ, পুকুর ভরাট করা, মাঝখানের পুকুরের চারপাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ, সোলার লাইট স্থাপনসহ শিশুদের বিনোদন সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে।

দীর্ঘ বছর থেকে বিধ্বস্ত প্রায় ত্রিতল প্রাসাদ, সুড়ঙ্গপথ আর ঐতিহ্যবাহী খাজনা আদায়ের কাছারি ঘরটিও দাড়িয়ে আছে ঐতিহ্যাসিক সাক্ষী হয়ে। এই বাড়িটি সংস্কার করে একটি পর্যটন স্পট হিসাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহন করার দাবী দীর্ঘ দিন থেকে স্থানীয়রা প্রশাসনের নিকট করে আসলেও কোন ফল পায়নি এলাকাবাসী। অবশেষে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল সব বির্তকের উদ্বে উঠে সরকারী সহযোগীতায় জমিদার বাড়িটির প্রায় সত্তর কোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করে সংস্কার করে অনেক গুলো সুন্দর কাজ করেছেন। বাকি অসম্পন্ন কাজ গুলো করে দিলে জমিদার বাড়িটি লক্ষ্মীপুর বাসীর নিকট ঐতিহাসিক সংরক্ষণ হিসেবে সমাদ্রিত হয়ে থাকবে।

সাড়ে সাত একর জমির উপর তৈরি জমিদার বাড়ির ভেতরে চারটি পুকুর, সাতটি ভবন ও একটি বিশাল বাগান রয়েছে। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর এই জমিদার বাড়ির সামনে ১৬ একর জমির উপর রয়েছে খোয়াসাগর দিঘি। সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়িটি দেখলে জমিদারের নান্দনিক রুচির পরিচয় পাওয়া যায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়,  সরকারী উদ্বোগে প্রত্নত্বত্ত বিভাগ অথবা পর্য়টন মন্ত্রনালয়ে যে কোন বিভাগের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রন করা হলে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। লক্ষ্মীপুর জেলাসহ এ অঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষের আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে ঘুরে ফিরে দেখার জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণের সঙ্গে এই জমিদার বাড়ির সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, জমিদার লক্ষ্মী নারায়ণ এর নাম অনুসারে প্রথমে লক্ষ্মীপুর জেলার নামকরণ করা হয়। তবে শুরু থেকেই লক্ষ্মীপুর জেলা ছিল না। এটি প্রথমে একটি গ্রাম ছিল। তারপর ১৮৬০ সালে এটিকে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় উন্নীত করা হয়। এছাড়া ১৯৮৪ সালে এটিকে লক্ষ্মীপুর জেলা ঘোষণা করা হয়। ধারনা করা হয়, রাজা গৌরকিশর রায় এর উত্তরসূরী নরেন্দ্র কিশোর রায় ও তার পরিবার পরিজন ১৮৩০ সন থেকে ১৮৫০ সন পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে এই জমিদার বাড়ির ভিতরে দালান কোটা গুলি নির্মাণ করেন।

১৯৪৬ সালে দালাল বাজারের জমিদার নবীন কিশোর রায় ও নরেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় ৩৬ একর সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে সরকার জমিদার প্রথা বিলুপ্ত করায় সরকারী হিসেবে এ সম্পত্তি পরিনত হয়। এরপর আস্তে আস্তে একটি প্রভাবশালী চক্র উক্ত জমিদার বাড়ি অবৈধভাবে দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে।

২০১৫ সালে দালাল বাজার জমিদারবাড়ি ও খোয়া সাগর দিঘি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি উচ্চ আদালতে রিট করলে উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। পরে হাইকোটের রিট মামলা গুলো গত বছর ২৯আগস্ট নিসম্পতি হয়। রায় আসে সরকারের পক্ষে। রায় পাওয়ার পর বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল নিজ দায়িত্বে কঠোর হস্তে সব কিছু মোকাবেলা করে এ জমিদার বাড়ি সরকারী সম্পদ উদ্ধার করে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়।

এদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি দালাল বাজার জমিদারবাড়ি সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে ঐতিহাসিক নিদর্শন বিবেচনা করে দালাল বাজার জমিদারবাড়িকে সংরক্ষণযোগ্য ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

শরিফ উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, লিজা সহ বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানায়, বর্তমান ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পাল স্যারের উদ্যোগে এই জমিদার বাড়িকে খুব সুন্দর করা হয়েছে, আমরা খুব খুশি। জমিদার বাড়ি সংস্কার করতে বরাদ্ধ ব্যবস্থা করায় সাবেক পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল ধন্যবাদ জানান তারা। একই সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম করে লক্ষ্মীপুরবাসীকে একটি দর্শনীয় স্থান উপহার দেওয়ায় জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃদজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গেলো বছরের ২৬ নভেম্বর প্রাচীন এ জমিদার বাড়িতে পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলের পরিত্যক্ত জমিদারদের প্রাচীন এ বাড়িটি দীর্ঘদিন বেদখল ছিলো। বর্তমানে এটি সরকারের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা পর্যটকদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও ঘোষনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারী ভাবে এ প্রাচীন বাড়িটিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রাচীন নিদর্শণগুলোর সাথে সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে আরো উন্নয়ন কাজ করা হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মোঃ বায়েজীদ ভূ্ইঁয়া বলেন, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ একেএম শাহজাহান কামাল স্যার পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালীন দালালবাজার জমিদার বাড়ি সংস্কারের জন্য বরাদ্ধের ব্যবস্থা করে দেন। ওই বরাদ্ধ পেয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল স্যার অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তিনি জমিদার বাড়িটিকে নিজের বাড়ি মনে করে খুবই গুরুত্ব সহকারে তা রক্ষা করে দেখা শুনা করছেন। এ জন্য লক্ষ্মীপুরবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই, আমরা জেলাবাসী ঋনী হয়ে থাকব।

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, এতদিন কেবল নামেই দর্শনীয় তালিকায় ছিল এ জমিদার বাড়িটি। এবার তাঁর উদ্যোগে মানুষের কাছে উপভোগ করার মত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা সরকারী বরাদ্ধ পেয়ে সব টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছ, পুরা বাড়ীর জঙ্গল গুলোকে আবাদ করা হয়েছে, চলাচলের সুবিদার জন্য ৪/৫টি ছোট বড় রাস্তা করা হয়েছে, অনেক গুলো ডাস্টবিন দেয়া হয়েছে, পর্যটকদের বসার জন্য কয়েকটি গোল ঘর স্থাপন করা হয়েছে। মোটামটি একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দর্শনার্থীদের জন্য একটি সুন্দর বিনোদন পর্যটন স্পট খুলে দেয়া হয়েছে। দূর দূরান্তের দর্শনার্থী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক ভাবে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ পেলে জমিদার বাড়িকে এমন ভাবে সাজাবো যা লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীর কাছে আজীবন দর্শনীয় স্থান হয়ে থাকরে।

সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর কুচক্রীদের হাত থেকে এই স্থাপনা উদ্ধার হয়েছে আদালতের রায়ের মাধ্যমে। এরই মধ্যে শত শত লোকজন স্থাপনাটি দেখতে প্রতিদিনই এখানে আসছেন। জেলার এই ঐতিহ্যকে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।