ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

জুতার গামেই হচ্ছে ঘি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ফেনীতে বিষাক্ত কেমিকেল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন নামি-দামি কোম্পানির ঘি। এসব নকল ঘি বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এদিকে ভেজাল ঘি খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরতলীর লালপোলে গ্রামীণ ব্যাংক সংলগ্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নকল ঘি শাহী, ভিআইপি, অভি স্পেশাল গাওয়া ঘি কারখানা। বিশাল এসব কারখানার দরজা বন্ধ রেখে তৈরি হচ্ছে ঘি। নামি-দামি ব্র্যান্ড নকল করা ঘি’তে সাবানের ফেনা, জুতার গাম, বিভিন্ন রং ফ্লেভার ও পামওয়েল এবং কেমিকেল দিয়ে তৈরি হয়।

কারখানায় কাজ করেন মধুয়াই এলাকার মোফাজল হকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও ফরহাদ। তারা বাজারজাত করার জন্য টিনের কৌটা তৈরি করে থাকেন। ৯শ’ গ্রাম ওজনের কৌটাগুলো পিকআপে করে ফেনী শহর ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। 

পাশ্ববর্তী চৌদ্দগ্রাম, বসুরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগে বাজারজাত করা হয়। এসব ভেজাল ঘি বাজারজাত করতে ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করা জন্য মার্কেটিংয়ে লোকও নিয়োগ দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল ঘি প্রতি ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে বিএসটিআই এর ভুয়া লগো ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখও ব্যবহার করা হয়।

কর্মচারীদের দেয়া তথ্যমতে, ভেজাল তৈরি করতে ১০০ টাকা খরচ না হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৬০-৭০০ টাকায়। এতে ব্যবসায়ীদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে বাবুর্চিরা। বাবুর্চিদের আকৃষ্ট করতে প্রতি কৌটায় টোকেনের মাধ্যমে ২শ’ টাকা করে দেয়া হয়। এতে বাবুর্চিরা লোভে পড়ে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে এসব ভেজাল ঘি ব্যবহার করেন। ভেজাল ঘি খেয়ে অনেকে বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এছাড়া বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়েই অনেক ঘি তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে শহরের লালপোল, রামপুর, ধর্মপুরসহ বিভিন্ন অলিগলিতে। টিনের কৌটার গায়ে কারখানা চট্টগ্রাম বিসিক এলাকার ষোলশহর, চৌমুহনী বিসিকে তৈরি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এসব ঘি গোপনে তৈরি হচ্ছে ফেনী লালপোল (মিতালী স্টোরের মালিকানাধীন লিটনের গোডাউন) বিরিঞ্চি-হ্যাংকার, রামপুর রাস্তার মাথা ও সদর উপজেলার ধর্মপুরে।

পোলাও, বিরিয়ানি, পরোটা, হালুয়া বা যেকোনো খাবার তৈরি ছাড়াও বিয়ে, বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হয় ভেজাল ঘি। এ সুযোগে দুই যুগ ধরে ফেনীর বাজার ভেজাল ঘি’তে সয়লাভ হয়ে গেছে। এর কারণে আসল ঘি বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

শাহী স্পেশাল গাওয়া ঘি, অভি স্পেশাল গাওয়া ঘি, ভিআইপি স্পেশাল গাওয়া ঘি, এপি-ওয়ান গাওয়া ঘি, টেস্টি গাওয়া ঘি ও হোমল্যান্ড গাওয়া ঘি, বাঘাবাড়ি ঘি, কহিনুর ঘি, মিল্ক ক্যারী, গোল্ড, এ-ওয়ান গাওয়া ঘি, কুকনি গাওয়া ঘি, সূর্য্যমুখি, রাণী, ডাবর গাওয়াসহ এসব ভেজাল ঘির দখলে রয়েছে বাজার। নকল ঘির দাপট ও চটকদার বিজ্ঞাপনের কাছে হার মানছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। শহরের বড় বাজারের বণিক স্টোর, মেসার্স মা ট্রেডার্স, রহিম এন্টারপ্রাইজ, মেসাস ভূঞা এন্টারপ্রাইজ, মিতালী চা বিতান, রাম ভান্ডার, মহসিন ব্রাদার্সসহ অনেকগুলো দোকানে ভেজাল ঘি দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। এসব নকল ঘিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৯০০ টাকায়। আবার কিছু কিছু ২৮০-৫৮০ টাকায় দামে বিক্রি হচ্ছে।

ফেনী শহরের লালপোলে কারখানা গড়ে তুলেছেন দাগনভূঞার রাজাপুর ইউপির আবুল বশরের ছেলে আনোয়ার হোসেন। সেখানে মেঝেতে রাখা ঘি এর কোটায় লিখা রয়েছে, আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গাভির খাঁটি দুধের ক্রিম দিয়ে তৈরি শাহী স্পেশাল গাওয়া ঘি। এসব ঘি’র মূল্য ৮৫০ টাকা। অথচ ক্রেতা আকৃষ্ট করতে সরকারি রেজিস্ট্রি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। লগো ব্যবহার করা হয়েছে বিএসটিআই এর।

একইভাবে এপি-ওয়ান গাওয়া ঘি, টেস্টি গাওয়া ঘি ও হোমল্যান্ড গাওয়া ঘি তৈরি করেন ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজহারুল হক আরজুর ভাই স্বপন ও মাজহারুল হক সুমন। এ-ওয়ান ঘির এজেন্ট বড় বাজারের নারিকেল পট্টির রামভান্ডার। এসব নকল ঘি’র ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন।

এদিকে ভেজাল ঘি বিক্রি ও বাজারজাত করণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বাবুর্চিরা। বিনিময়ে প্রতি কোটার জন্য পাচ্ছেন ২শ’ টাকা। এছাড়া ঈদের বোনাস পেয়ে থাকেন। প্রতি বিয়েতে ১০-১৫টি ব্যবহার করা হয়। এজন্য বাবুর্চিরা তাদের নিজের নামে খাদ্যের তালিকায় এ ভেজাল ঘি নাম ব্যবহার করছেন। তাকিয়া রোডে হাজী আনিছ বাবুর্চির খাদ্য তালিকায় হোমল্যান্ড ঘি, পূর্ব উকিল পাড়ার মো. পেয়ার আহম্মদ বাবুর্চি খাদ্য তালিকায় রয়েছে শাহী স্পেশাল গাওয়া ঘি, রানী স্পেশাল গাওয়া ঘি, ভিআইপি ও ডাবর স্পেশাল গাওয়া ঘি। এসব বাবুর্চিরা নিজেদের লাভের জন্য অনুষ্ঠানে এসব ভেজাল ঘি কিনতে ভোক্তাদের বাধ্য করেন। যেখানে পাঁচটি ঘি দরকার সেখানে বাবুর্চিরা ১০টি কেনার জন্য পরামর্শ দেন।

হাজী আনিস বাবুর্চি জানান, এসব ঘি ক্ষতিকর কিনা সে বিষয়ে তার জানা নেই। বিভিন্ন সুবিধা পেয়েই এগুলো কিনতে আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বলে থাকেন।

নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার সাহা জানান, ভেজাল ঘি নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। এছাড়া যেকোনো বয়সে ব্রেনস্ট্রোক ও হার্ডস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মোমিন জানান, ভেজাল ঘি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে জেলা প্রশাসনকে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হবে।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম জাকারিয়া জানান, ভেজাল প্রতিরোধে শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে।