ব্রেকিং:
পুকুর থেকে মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশি জিনাতের সোনা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার বক্সিংয়ে নিয়মিত দ্বিগুন মাত্রার শব্দে দূষণের শিকার কুমিল্লা নগরী দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধ-র্ষ-ণে-র অভিযোগ দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী শিশু সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা বিশেষ কায়দায় ৪০ কেজি গাঁজা পাচার দুদিনব্যাপী পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রশিক্ষণ ৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর দুর্গাপূজা: দেশজুড়ে মণ্ডপের নিরাপত্তায় ২ লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি ১৫ বছরে ধানের ৮০ নতুন জাত ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে চাপে থাকা অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস ফিলিস্তিনের জন্য বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী হামানকর্দ্দির কামাল গাজীকে আসামী করে সদর মডেল থানায় মামলা টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, ৩ বছরের মাথায় তরুণীর আত্মহত্যা লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন : প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা
  • শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জনস্বাস্থ্যের গভীর নলকূপ প্রকল্পে লুটপাট

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ফেনীতে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকারের বাস্তবায়নাধীন গভীর নলকূপ প্রকল্প নিয়ে  নানা অভিযোগ উঠেছে। জেলার ৩ উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ১৮৮টি গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। ফেনীর অনুসন্ধানে জানা যায়, কার্যাদেশের তোয়াক্কা না করে ঠিকাদাররা ইচ্ছেমত কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নলকূপ ৭ হাজার টাকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও আদায় হচ্ছে ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আবার নলকূপ স্থাপনে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাওয়া খরচ সহ নানা অজুহাতেও ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। এসব চিত্র জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রহস্যজনক নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এনিয়ে ভুক্তভোগী এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের ভালুকিয়া গ্রাম। এক বাড়িতেই গিয়ে পাওয়া গেছে এ প্রকল্পের ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র। ওই বাড়ির আবদুল লতিফ নলকূপের জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এছাড়া আরো ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন শ্রমিকদের খাওয়া বাবদ। একই বাড়ির বৃদ্ধ এবাদুল হক জানান, তার ছেলে শাহআলম ৯ হাজার ও শেখ আহমদ ১৫ হাজার টাকা নলকূপের জন্য জমা দিয়েছেন। ১৫ মাস আগে ওই টাকা দিয়ে বারবার ঠিকাদারের কাছে ধর্ণা দিলেও অদ্যাবধি নলকূপগুলো বসানো হয়নি। তবে কিছু পাইপ তার ঘরের আঙিনায় ঠিকাদারের লোকজন রেখে গেছেন।

অপর বৃদ্ধ মকবুল আহমদ জানান, ঠিকাদারের কাছে অন্তত ৫০ বার গিয়ে ট্যাংক ও মোটর আদায় করলেও অদ্যাবধি বৈদ্যুতিক তার দেয়নি। সংযোগের কথা বললেও বারবার নানা অজুহাত দেখান। এমনকি ফোন করলে কথাও বলেননা। অফিসে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন এ বৃদ্ধ।

ছনুয়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের ইব্রাহিম জমাদ্দার বাড়ির মো: ইউসুফের স্ত্রী ছবুরা খাতুন জানান. মাসখানেক আগে তার বাড়িতে নলকূপের পাইপ স্থাপন করা হলেও মোটর, ট্যাংক কিছুই পায়নি।

ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমেদ মুন্সী জানান, তার ইউনিয়নে ১৫০টি নলকূপের মধ্যে মাত্র তিনটি স্থাপন করা হয়েছে।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিক জানান, তার ইউনিয়নে ১৫০টি নলকূপের মধ্যে কয়েকটিতে পাইপ স্থাপন করা হলেও অদ্যাবধি একটাও চালু করা হয়নি। কোনটিতেই মোটর-ট্যাংক দেয়া হয়নি।

সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল জানান, তার ইউনিয়নে বরাদ্ধকৃত ৫০টি নলকূপের মধ্যে ইতিমধ্যে ২২টি স্থাপন করা হয়েছে। তবে এগুলোর অধিকাংশই অসম্পূর্ণ।

আবার কোন ইউনিয়নে ভিন্ন চিত্রও আছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের এড়িয়ে ঠিকাদার নিজেই বাড়তি টাকা নিয়ে ইচ্ছেমত কাজ করেছেন। সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানান, তিনি প্রকল্পের তালিকা জমা দেয়ার আগেই ঠিকাদাররা সরাসরি লোকজন থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ স্থাপন করেছেন। এতে তার প্রকল্পের তালিকা বাদ পড়ে যায়।
শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা জানান, তার ইউনিয়নে কিছুদিন আগেই কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫-৬টি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় আর্সেনিক প্রকল্পে ৪ হাজার ১৮৮টি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য বরাদ্ধ হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৮৬, দাগনভূঞা উপজেলায় ১ হাজার ৪৫০ ও সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৪৫২টি স্থাপনের কথা রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর ও ১৯-২০ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিডিএস এবং জামাল এন্ড ব্রাদার্স। প্রতিটি নলকূপে ৭২০ ফুট গভীর, ২২০ বর্গমিটার প্লাটফর্ম পাকাকরণ, একটি দেড় ইঞ্চি মোটর ও ৫০০ লিটার ট্যাংক দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৭২০ফুট গভীরতায় ৮০ ফুটে ৩ ইঞ্চি পরিমান ও বাকী ৬৬০ ফুটে দেড় ইঞ্চি পরিমান পাইপ, ইটের গাঁথুনি করে ৫ ফুট উঁচু ট্যাংকের ফিটিং বেইজ করার কথা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোনটিতে কার্যাদেশ মেনে কাজ করা হয়নি। প্রতিটি নলকূপ স্থাপনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যয় বরাদ্ধ ১ লাখ ১৪ হাজার ৮০০ টাকা।

সূত্র আরো জানায়, আর্সেনিক প্রকল্পের নলকূপ স্থাপন শেষ হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের আরেকটি প্রকল্প শুরুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই প্রকল্পে ১ হাজার ১৪টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১২টি, দাগনভূঞায় ১০৪টি, সোনাগাজী উপজেলায় ২৩৪টি, পরশুরামে ৭৮টি, ফুলগাজীতে ১৫৬ ও ছাগলনাইয়ায় ১৩০টি রয়েছে।

মৌখিকভাবে জানালেও এ পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাননি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমরা কী করতে পারি। তবে এ সম্পর্কে ফেনীস্থ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এর বেশি বলতে রাজি হননি নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র জানায়, সমুদয় কাজ শেষ না করে সম্পূর্ণ বিল দিতে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি এক ঠিকাদারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন সদর উপজেলা প্রকৌশলী। ঠিকাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের নানা অনিয়ম জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমবিডিএস এর নামে যুবলীগ নেতা হুমায়ুন এবং জামাল এন্ড ব্রার্দাসের নামে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন ও প্রবাসী  আরিফ  প্রকল্পের কাজ করছেন। এদিকে গভীর নরকুপ বসানোয় নানা অনিয়মের অভিযোগ স্হানীয়দের ারিফের বিরুদ্বে। সে নাম মাত্র কাজ করে বাকী টাকা উওোলন করে নিয়ে যায়। ফেনী সদর আসনের সাংসদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে অভিযোগ কারিদের হুমকি-ধমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে ঠিকাদার হুমায়ুন আহমেদ জানান, তিনি যেসব কাজ করেছেন সবগুলোতে মোটর, ট্যাংক প্রদান সহ যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে। প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজই চলমান রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলীর ঘুষ দাবীর কারনে কাজে ধীরগতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, গভীর নলকূপ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। অবৈধ সুবিধা নিতে কতিপয় ব্যক্তি তার নাম ব্যবহার করতে পারে। জামাল এন্ড ব্রাদার্স নামে কোন প্রতিষ্ঠানকে তিনি চিনেন না বলেও জানান। অপর ঠিকাদার আরিফের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করে নাই।