ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

গাছে গাছে পাখির নিরাপদ আশ্রয় করে দিচ্ছেন যুবকরা

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১  

‘পাখি বাঁচান, পরিবেশ সুস্থ রাখুন ও আনন্দময় জীবন গড়ুন। পাখি রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, আপনিও সামিল হোন। এ স্লোগানকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাখি সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরি করতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকজন ছাত্র-যুবক ‘সীমান্ত পাখি রক্ষা সংগঠন’ নামে এ ব্যতিক্রমী সংগঠন গড়ে তুলেন। এ সংগঠনের সদস্যরা এরই মধ্যে ‘পাখি হত্যা’, ‘পাখির আবাসস্থল নষ্ট না করা’র আহ্বান জানিয়ে এলাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাইনবোর্ড ও পাখিদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে গাছে গাছে কলস বেঁধে দিয়েছেন। পাখিপ্রেমী ছাত্র-যুবকেদের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। সেই সঙ্গে তারা প্রশংসা পাচ্ছেন সবস্তরের মানুষের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ধলেশ্বর, আব্দুল্লাহপুর হীরাপুর, আনন্দপুর, রাজেন্দ্রপুর  গ্রামের ১৩ যুবক এ সংগঠনটি গড়ে তুলেন। তবে  সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্য হলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 

 

পাখি সংরক্ষণে গাছে লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড

পাখি সংরক্ষণে গাছে লাগানো হয়েছে সাইনবোর্ড

এদিকে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির পাখি শিকার করতে দেখে বিষয়টি তাদের নজরে আসে। তাই সংগঠনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে গাছে গাছে কলস বাঁধার কার্যক্রম নেয়া হয়। পাখি ধরলে ও মারলে তার বিরূপ প্রভাব পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্রের ওপর পড়বে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির ভূমিকা বিবেচনা করে শুধু বাসা তৈরিই নয় এটি স্থানীয়দের বোঝানোর জন্য নিয়মিত তারা কাজ করবেন। তাছাড়া এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে মাইকিংসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক লিফলেটও বিলি করবেন এ সংগঠনের সদস্যরা।  

এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন গাছে পাখি নিরাপদে আশ্রয় নিতে প্রায় ২৫টি কলস বাঁধা হয়। তারা আরো ২৫টি কলস বাঁধবেন। একটি পাখিও যেন শিকারীদের দ্বারা প্রাণ না হারায় এমন আশা পাখি রক্ষা সংগঠণের সদস্যদের। 

সংগঠনের আহ্বায়ক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. তোফায়েল চৌধুরী জানান, প্রকৃতিতে পাখির ভূমিকা অপরিসীম। পাখির কিচির মিচির শব্দ সবার মনকে প্রফুল্ল করে দেয়। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে পশু-পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। পাখিরা বিশেষ করে গাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে। গাছেই তারা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে গাছে আশ্রিত পাখির ক্ষতি হয়ে থাকে।  অপরিকল্পিতভাবে ঘর-বাড়ি, দালান-কোঠাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ, পুকুর, ডোবা  জলাশয় ভরাট এবং  কেটে ফেলা হচ্ছে ঝোপ-ঝাড়। এতে পাখির আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীব বৈচিত্র। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে পাখির আনাগোনাও।  এসব দিক বিবেচনা করে পাখির জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এলাকায় বড় বড় গাছে মাটির পাতিল বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। পাতিলগুলোর ওপরের অংশ খোলা। এসব পাতিলেই বাসা তৈরি করবে পাখিগুলো। সেখানেই ডিম দিবে এবং বাচ্চা ফুটাবে। এরই মধ্যে দোয়েল, বাবুই ও বুলবুলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পাতিলগুলোতে বাসা বেঁধেছে।

আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পাখি হত্যা না করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি। কোথাও পাখি আটক হওয়ার খবর পেলেই এ সংগঠনের সদস্যরা ছুটে যায়। শিকারীকে অনুরোধ করে পাখিটি মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। সদস্যদের নিজেদের টাকা দিয়ে এসব কাজের খরচ মেটানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। 

 

পাখির নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে গাছে বাঁধা কলস

পাখির নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে গাছে বাঁধা কলস

স্থানীয়রা জানান, পাখিরা মূলত গাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে। ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেক সময় পাখির ডিম ভেঙে ও বাচ্চা নিচে পড়ে মারা যায়। পাখিগুলো যেন ভালো থাকে তার জন্য গাছে পাতিল টাঙিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। 

পাখি রক্ষা সংগঠনের সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম, জানান আগে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটলেই পাখির কিচির মিচির শব্দ পাওয়া যেত। হলুদ পাখি, ডাহুক, টিয়া, শালিক, দুয়েলসহ রঙ বেরঙের সুন্দর সুন্দর পাখি দেখা যেত। কিন্তু পাখির আবাসস্থল দিনে দিনে কমে যাওয়ায় এসব পাখি এখন আর বেশি দেখা যায় না। পাখি হত্যা না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পাখি রক্ষার এ উদ্যোগটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। তরুণদের এমন সুন্দর সুন্দর উদ্যোগ আমাদের সমাজকে বদলে দিতে সহায়তা করবে। 

পাখি রক্ষা সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকছির এম. চৌধুরী বলেন, এলাকার কিছু সৃজনশীল ছাত্র-যুবক পাখি রক্ষা ও তাদের  নিরাপদ আবাসস্থল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আজে বাজে রাস্তায় না গিয়ে ভালো কিছু কাজ করলে সমাজও দেশ উপকৃত হবে।