ব্রেকিং:
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন রাতে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব: রাষ্ট্রপতি ঈদে মহাসড়কে ৬ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক চলাচল সুইডেনের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়াকে বরণে হাতিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ‘ইফতার পার্টিতে আল্লাহর নাম না নিয়ে আওয়ামী লীগের গিবত গায়’ গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত রাফাহতে ইসরায়েলের হামলার ব্যাপারে বাইডেনের আপত্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব: প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়লাভের পর পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন বাংলাদেশকে ২০ টন খেজুর উপহার দিল সৌদি আরব জিম্মি জাহাজের ৪ জলদস্যুর ছবি প্রকাশ্যে বেতন নেবেন না পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জারদারি জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের ১১ জনই চট্টগ্রামের রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী মেয়র হলেন তাহসীন বাহার ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার হলো ১১ মণ সরকারি বই
  • শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

করোনাভাইরাস: যা যা জানা জরুরি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

বিশ্বজুড়ে নতুন এক আতঙ্ক চীনের উহান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস। চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে অন্তত ১২টি দেশে। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি থাকায় বাংলাদেশও নতুন এই ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, এ ভাইরাস চীনে কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৮০ জনের প্রাণ, নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে সংক্রমিত হয়েছে আরো তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক সতর্কতা বাড়াতে করোনাভাইরাস সম্পর্কে  আমাদের যা যা জানা দরকার-

লক্ষণ কী?

> শুরুটা হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

> করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। কারো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।


 
> রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু।

> চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমণের পর লক্ষণ দেখা দিতে পারে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার আগেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। আর এ কারণেই চীনে এ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রতিকার কী

> নোভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনো মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।

> ভাইরাসটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।


 
> হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং বলছেন, বার বার হাত ধুলে, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করলে এবং ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরলে ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো সহজ হতে পারে।

> পাশাপাশি কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক ঢেকে রাখা, মাংস ও ডিম ভালোভাবে ধুয়ে এমনভাবে রান্না করে (যাতে কোনোভাবে কাঁচা না থাকে) খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

> যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে, তাদেরও মুখোশ ব্যবহার করা উচিত, যাতে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস না ছড়াতে পারে।

> আক্রান্ত হলে জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচুর তরল পানের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

> কারো মধ্যে কাশি, হাঁচির সঙ্গে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা গেলে তার সংস্পর্শে আশার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। উহান শহরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে বেশ কয়েকজন চিকিৎসাকর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন।


 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিচ্ছে।

> এ ধরনের ভাইরাস যানবাহনের হাতল, দরজার নব, টেলিফোন রিসিভার ইত্যাদি সাধারণ বস্তু থেকেও ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে এসে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। যারা হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন, তারা হাত পরিষ্কার করতে অ্যালকোহল স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

> যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে থুতু-কফ ফেলা বন্ধ করার বিষয়ে সচেতনতা দরকার। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার ব্যবহারের পরই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।

> হাত দিয়ে নাক মুখ চোখ স্পর্শ যত কম করা যায়, ততই ভালো।

> বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্তত ১৪ দিন তাকে বাড়িতে একটি আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কত দেশে ছড়িয়েছে?

চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১২টি দেশে নোভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে।

নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪১ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এ রোগে মৃত্যুর কোনো তথ্য এখনো আসেনি।

এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর উহান এবং আশপাশের কয়েকটি শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গণপরিবহন।

বেইজিংয়ে সব বড় উৎসব ও মন্দিরের মধ্যে মেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর ট্যুর আয়োজনের ওপর।


 
বন্ধ রাখা হয়েছে সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ড। আর চীনে সব ধরনের বন্যপ্রাণী বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কী করছে বাংলাদেশ

চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো কেউ শনাক্ত না হলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করে দেখা হচ্ছে, যাত্রীদের কারণ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কি না।

> কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে বিমানবন্দরের পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হবে। পরে তাকে প্রয়োজনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তার শারীরিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহে রাখবেন।

> যারা চীন থেকে আসবে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের একটি হেলথ কার্ড পূরণ করতে হবে। ঢাকায় আসার পর সেটি বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেস্কে জমা দিতে হবে। তাদের বলা হচ্ছে, আসার সময় জ্বর না থাকলেও চীন থেকে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর হয়, তাহলে যেন তারা যোগাযোগ করেন।

> ভাইরাসটির বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কেও বিমানবন্দরে তথ্য দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ।

এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরে ২ হাজার ১৯০ জনকে পরীক্ষা করা হলেও কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে এখনো এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নজরদারি বাড়িয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সতর্ক আছি এবং আমরা প্রস্তুতও আছি।”

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।


 
“আমাদের দেশ জনবহুল। এছাড়া মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে কম, রাস্তাঘাটে থুতু-কফ ফেলে। তাছাড়া বাংলাদেশে তাপমাত্রা-বাতাসের আর্দ্রতাও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্য উপযোগী।”